ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদের হাতছানি

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদের হাতছানি

হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ উঁকি দিচ্ছে। সেখানকার হংকং ন্যাশনাল পার্টি চীন থেকে হংকংয়ে আনুষ্ঠানিকতার বিচ্ছিন্ন করার প্রবক্তা। গত জুলাই মাসে হংকং সরকার এই দলটিকে নিষিদ্ধ করার জন্য আইনগত উদ্যোগ শুরু করে। এটা যে বেজিংয়ের নেতাদের দ্বারা নির্দেশিত হয়েই করা হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। ১৯৯৭ সালে চীন হংকংয়ের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার পর এই প্রথম সেখানকার কোন রাজনৈতিক সংগঠন নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। হংকং ন্যাশনাল পার্টির নেতা এ্যান্ডি চানকে তার দলকে কেন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে না তার কারণ নিরাপত্তা ব্যুরোর কাছে দর্শাতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই ডেডলাইন তিনবার বাড়ানো হয়েছে। আরও এক দফা বাড়ানো হবে সেই সম্ভাবনা কম। হংকংবাসীর অতি সামান্য অংশ এ্যান্ডি চানের সরাসরি স্বাধীন বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার দাবিকে সমর্থন করে। এমনকি চান নিজেও স্বীকার করেন যতদিন চীনে কমিউনিস্ট পার্টির শাসন আছে ততদিন স্বাধীনতা অর্জন করার বাস্তব সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। তবে তরুণদের মধ্যে অন্তত তাত্ত্বি¡কভাবে হলেও স্বাধীনতার ধারণাটির পক্ষে ক্রমবর্ধমান সমর্থন আছে। তাদের অনেকেই ‘এক দেশ দুই ব্যবস্থাকে’ নস্যাত করতে চীনের উত্তরোত্তর নগ্ন প্রয়াসে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। ‘এক দেশ দুই ব্যবস্থা।’ হলো এক বিশেষ আয়োজন যেখানে চীন ১৯৯৭ থেকে অন্তত ২০৪৭ সাল পর্যন্ত হংকংকে উচ্চ মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন এবং পরিশেষে সেখানকার নির্বাচনে সার্বজনীন ভোটাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ২০১৪ সালে সেখানে ‘আমব্রেলা মুভমেন্ট’ নামে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন বর্থ হয়ে যাওয়ার পর তরুণদের অনেকে এই উপসংহারে পৌঁছায় যে চীন কখনই হংকংবাসীদের পূর্ণ গণতন্ত্র দেবে না। তারা আরও হতাশ হয়ে লক্ষ্য করে যে হংকংয়ের আধা গণতান্ত্রিক আইনসভায় কিছু মানুষকে তাদের স্বাধীনতাকামী চিন্তাধারার জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। মি. চান ছিলেন তাদের অন্যত। তা ছাড়া চীনের প্রতি যথাযথ আনুগত্যের শপথ না নেয়ায় ওই আইনসভার কিছু সদস্যকে বহিষ্কার করা হয় এবং চীনা নেতাদের সম্পর্কে গুজবসর্বস্ব বইপত্র বিক্রি করার জন্য চীনা এজেন্টরা কয়েক হংকংবাসীকে অপহরণ করে। হংকং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় যে ‘এক দেশ দুই ব্যবস্থা’ নীতির ওপর হংকংবাসীর আস্থা ২০০৮ সালে যেখানে ৭৭ শতাংশ ছিল আজ তা ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। আরেক সমীক্ষায় দেখা যায় যে হংকংয়ের ৪০ শতাংশ অধিবাসী নিজেদের চীনা না বলে হংকংবাসী বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। অথচ এক দশক আগে এই হার ছিল দ্বিগুণ। তবে যাই হোক চান এর দল এখনও পর্যন্ত সত্যিকারের কোন হুমকি ¯ম্ভবত সৃষ্টি করতে পারেনি। যদিও তিনি দাবি করেন যে তার দলের সদস্য সংখ্যা এক হাজারের বেশি তথাপি প্রকৃত সংখ্যা অত হবে না বলে অনেকে মনে করে। দলটির ভৌত কোন প্রধান কার্যালয় নেই। কোন পর্যায়েই দলটির একটিও প্রতিনিধিত্বমূলক আসন নেই। কিন্তু চীন মনে হয় এ ভেবে উদ্বিগ্ন যে দু’বছর আগে এই দলটির আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে এক বৃহত্তর রাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনা হতে পারে। সম্ভবত সে কথা মনে রেখেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত গ্রীষ্মে হংকং সফরকালে সেখানকার জনগণকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন যে চীনের শাসনকে চ্যালেঞ্জ করে তারা যেন লাল রেখা অতিক্রম করার চেষ্টা না করে। এ ধরনের হুঁশিয়ারি ইদানীং বেড়ে গেছে। হংকংয়ের বৃহত্তম ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে চান এর মতো স্বাধীনতাকামী ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলে পরদিনই ভূখ-ের প্রধান নির্বাহী ক্যারী নাম ওদের ভাষণগুলোর নিন্দা করে ওইসংক্রান্ত বক্তব্যকে বেআইনী আখ্যা দেন এবং লাল রেখার কথা উল্লেখ করেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নেতা ওয়েন আউ পরে জানান যে এক রহস্যময় ব্যক্তি টেলিফোনে তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেছে যে তিনি দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। গণতন্ত্রপন্থী অনেক রাজনীতিক চান এর বক্তব্য ও তাঁর দলের পক্ষ থেকে ফেসবুকে পরিবেশিত মূল চীন বাসীদের সম্পর্কে আক্রমণাত্মক ভাষাকে সমর্থন করেন না। তবে চান এর দলকে নিষিদ্ধ করতে সরকারের উদ্যোগের বৃহত্তর তাৎপর্য আছে। এটা মূল ধারার গণতন্ত্র পন্থীদের প্রতিও হুমকিস্বরূপ। সেটা এই কারণে যে লাল রেখাটি ঠিক কোথায় চীন কখনও তা পরিষ্কার করে বলেনি। অনেক চীনা কর্মকর্তা মনে করেন, প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের থাকবে না এমন অবাধ নির্বাচনের দাবি বিচ্ছিন্নতাবাদের সমান্তরল। একে কোন মতেই প্রশ্রয় দেয়া চলবে না। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×