ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অব্যাহতি পেলেন এমপি সেলিম ওসমান

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

অব্যাহতি পেলেন এমপি সেলিম ওসমান

কোর্ট রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার মামলায় বিচার শুরু হওয়ার আগেই সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আবেদন নামঞ্জুর করে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ড. একেএম এমদাদুল হক এ অব্যাহতির আদেশ দিয়েছেন। তবে অপর আসামি মোঃ অপুর অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে মারধর করে আহত করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩২৩ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়। আগামী ১৮ ডিসেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছে। মঙ্গলবার চার্জ গঠনের শুনানিকালে আসামি সেলিম ওসমান ও মোঃ অপু এবং ভিকটিম শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত আদালতে হাজির ছিলেন। শ্যামল কান্তি আদালতকে বলেন, সেলিম ওসমান নিজে তার কানে থাপ্পড় মারে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এর মাধ্যমে তিনি পুরো শিক্ষক জাতিকে অপমানিত করেছেন। তার ওই থাপ্পড়ের কারণে তিনি এখন দুই কানেই শুনতে পান না। কানে হিয়ারিং লাগিয়ে তাকে চলতে হয়। তাই আমি এমন একটি আদেশ চাই যাতে আমার ওই ক্ষত দূর হয়। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুলও শ্যামল কান্তির বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, ‘শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। তাদের এভাবে অপমান করা গোটা জাতিকে অপমান করা। যেহেতু মামলার জুডিসিয়াল প্রতিবেদনে দুই জনের বিরুদ্ধেই শ্যামল কান্তিকে মারধর করে আহত করার প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাই উভয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হোক’। আসামি সেলিম ওসমানের পক্ষে ব্যারিস্টার মোঃ রায়হান, এ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান ও মোজাম্মেল হক যুক্তি দেখান। তারা বলেন, জুডিসিয়াল প্রতিবেদনে কানে থাপ্পড় মারার সত্যতা প্রকাশ পায়নি। সেখানে শুধু কানে উঠবস করার কথা বলা হয়েছে। আর সেলিম ওসমান তা করেছিলেন জনরোষ থেকে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে বাঁচানোর জন্য। তাই তার অসৎ কোন উদ্দেশ্য নেই এবং তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হোক। শুনানি শেষে বিচারক আসামি সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মতো কোন উপাদান নেই উল্লেখ করে তাকে অব্যাহতির প্রদান করেন। আসামি মোঃ অপুর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দ-বিধির ৩২৩ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন। আদালতের আদেশের পর শ্যামল কান্তি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলেন। ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে ঢাকার সিজেএম আদালতে বিচারের জন্য বদলির নির্দেশ দেন। এরপর আদালত দ-বিধির ৩২৩/৩৫৫/৫০০ ধারায় মামলাটি আমলে গ্রহণ করেন। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ১৩ মে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান সেদিন ওই শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মর্মে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও তা দেখা যায়। ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নারায়ণগঞ্জের স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় পুলিশ প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে পুরো ঘটনা বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
×