ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক সম্মাননা

প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত

সংসদ রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক ও উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে জাতিসংঘের দুটি সংস্থা কর্তৃক দুটি আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভ‚ষিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে জাতীয় সংসদ। মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে দীর্ঘ আলোচনার পর ভোটে দিলে সর্বসম্মতিক্রমে ধন্যবাদ প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতারা খুনী-জঙ্গী-স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে ড. কামাল হোসেনদের ঐক্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, দক্ষ-প্রাজ্ঞ, সাহসীকতা ও মানবিকতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন কিছু জনবিচ্ছিন্ন ও জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত ষড়যন্ত্রকারী ঐক্য করেছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এটা আদর্শিক কিংবা নির্বাচনী জোট নয়, এটি ষড়যন্ত্রকারীদের জোট। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে সরিয়ে অশুভ তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র থেকেই এই জোট গঠিত হয়েছে। এরা দেশকে আবারও পাকিস্তানী ভাবধারায় অন্ধকারের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু দেশের জনগণ আবারও শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করে এসব ষড়যন্ত্রকারীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাব (সাধারণ) বিধি, ১৪৭ অনুযায়ী ধন্যবাদ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন সরকার দলীয় হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার। প্রস্তাবটি হলো- ‘সংসদের অভিমত এই যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক ও উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, দর্শন-চিন্তা দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও সমাদৃত হচ্ছে। এরই ফলশ্রæতিতে ইন্টার সার্ভিস প্রেস এজেন্সি, ইউএন কর্তৃক হিউম্যানিটারিয়ান এওয়ার্ড এবং গেøাবাল হোক কোয়ালিশন কর্তৃক স্পেশাল ডিস্টিংশন এ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশীপ সম্মাননায় তাকে ভ‚ষিত করা হয়েছে। এ সকল সম্মাননা অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করায় প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানানো হোক’। আলোচনায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সরকারী দলের লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, আবদুল মতিন খসরু, অধ্যাপক আলী আশরাফ, আবদুল মান্নান, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডাঃ দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এবি তাজুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, পংকজ দেবনাথ, মনিরুল ইসলাম, মীর মোস্তাক আহমেদ রুহী, কাজী রোজী, আশিক উল্লাহ রফিক, উম্মে রাজিয়া কাজল, ড. জয়া সেনগুপ্তা, সাবিনা আক্তার তুহিন, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, শিরীন আখতার, বিএনএফের এস এম আবুল কালাম আজাদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী, আবদুল মতিন এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, সেলিম উদ্দিন ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হয়ে আলোচনা রাত ১১টা পর্যন্ত চলে। আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামীতে আর নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এটিই আমার নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে শেষ বক্তৃতা। আমি যাচ্ছি, কিন্তু চলে যাচ্ছি না। তবে অর্থমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব আর পালন করতে পারব না। নির্যাতিত ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বিনা বাক্য ব্যয়ে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয় দিয়েছেন। আমরা চাই রোহিঙ্গারা তাদের দেশে সসম্মানে ফিরে যাবেন। সারাবিশ্ব আমাদের পক্ষে। বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল, তা রুখতেই এমন ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে আমি মনে করি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু আমাদের দেশের নেতা নন, বিশ্বের শীর্ষ ৩-৪ জন নেতার মধ্যে অন্যতম। তার সমস্ত ধ্যান-ধারণা ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন, সেটি হচ্ছে জনকল্যাণ। এরকম একজন নেত্রীর সহকর্মী হিসেবে কাজ করতে পারা সত্যিই আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, দেশে দুই প্রভাবশালী রাষ্ট্রপতি ছিলেন উত্তরবঙ্গের। তারা ওই এলাকায় মঙ্গা দূর করতে পারেননি, পেরেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। সারাবিশ্বের নেতারা আজ তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ২৭টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। শেখ হাসিনাকে আজ বিশ্ব নেতৃত্ব সমীহ করেন। দেশকে সফলতার শিখড়ে নিয়ে গেছেন তিনি। যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলুক, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ ও অবিচল। এসব ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নয়, এটি দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও পাকিস্তানের ভাবধারায় দেশকে নিয়ে যেতে। নতুন নতুন মানুষ নিয়ে বিএনপি খড়কুটোর মতো ভেসে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের আর সেই সুযোগ আর দেবে না। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সারাবিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শুনতে চান। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে আশাবাদী জাতি এখন বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়। ড. কামাল হোসেন বলেছেন, তিনি নাকি জামায়াত ও তারেক রহমানের সঙ্গে ঐক্য করেননি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খুনের দÐপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান। এমন মিথ্যাচার তিনি করলেন কীভাবে? ইসি ঘোষিত সময়েই নির্বাচন হবে এবং দেশবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের জবাব দেবে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, এসব আন্তর্জাতিক পুরস্কার দালালি বা টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না, এটি অর্জন করতে হয়। মিয়ানমার যথেষ্ট উস্কানি দিয়েছে, কিন্তু শান্তির প্রতি নিষ্ঠা থেকে মানবিকতায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় দিয়েছেন। এই প্রথম মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের আন্তর্জাতিক কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পেরেছেন শেখ হাসিনা, অন্য কেউ পারেননি। ক্ষমতাকে মানবতার সেবা হিসেবে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আন্তর্জাতিক চাপে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার একদিন বাধ্য হবে। কারণ শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সঙ্কটকে সম্ভাবনায় পরিণত করা। নির্বাচন নিয়ে খেলাধুলা করে ড. কামাল হোসেনরা কিছুই পাবেন না। বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারবেন না। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ইউরোপের রাজনীতি পাল্টে যাচ্ছে শরণার্থী ইস্যুতে। যুক্তরাষ্ট্র এ ইস্যুতে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ ঘোষণা করেননি, তিনি মায়ের মমতায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। ক‚টনৈতিক ক্ষেত্রেও একটি বড় বিজয় এনে দিয়েছেন তিনি। আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত ও সাহসী ভ‚মিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ কর্তৃক দুটি আন্তর্জাতিক সম্মানে ভ‚ষিত করা হয়েছে। সারা বিশ্বের নেতারাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ভ‚মিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্রধানমন্ত্রী এ পুরস্কার দেশের জনগণের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। এই আন্তর্জাতিক পদক শুধু পুরো দেশের মানুষকে সম্মানিত করেনি, সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছে। মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, দেশ যখন সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন কিছু ষড়যন্ত্রকারী দেশকে ফের পিছনের দিকে ঠেলে দিতে মাঠে নেমেছে। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের কোন ষড়যন্ত্রই বাস্তবায়িত হতে দেবে না। চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রকারীরা মাঠে নেমেছে। ড. কামাল হোসেনদের জোট নির্বাচনের জন্য নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যশ-খ্যাতি নস্যাৎ করতেই এই জোট হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নকে পরাজিত পাকিস্তানও স্বীকৃতি দিচ্ছে। তাই ষড়যন্ত্রকারীদের কোন চক্রান্তই জনগণ বাস্তবায়িত হতে দেবে না। জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, সারাবিশ্বের বড় বড় দেশ যখন একজন অভিবাসীকেও গ্রহণ করে না, সেখানে প্রধানমন্ত্রী মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছেন। এ কারণে মহীয়সী নারী শেখ হাসিনাকে বিশ্ববাসী সারাজীবন মনে রাখবেন। তিন হাজার বছরের ইতিহাসে এমন সাহসী নারী (শেখ হাসিনা) কখনো আসেনি। তাঁর হাত ধরে বাংলাদেশে আরও অনেক কিছু হবে। স্বতন্ত্র ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, সারাবিশ্বের কাছেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন দয়ালু মা হিসেবে পরিচিত। দেশ আজ দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে জঙ্গী-সন্ত্রাস-দুর্নীতির রাজনীতি, অন্যপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তির রাজনীতি। অসহসায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা।
×