ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালের ৬ আসনে নৌকার পালে হাওয়া, মাঠে সরব বিএনপিও

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

বরিশালের ৬ আসনে নৌকার পালে হাওয়া, মাঠে সরব বিএনপিও

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বরিশাল জেলার ছয়টি আসনে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে রাজনীতির মাঠে আরও পাঁচটি দল এবং এক স্বতন্ত্র প্রার্থী সরব রয়েছেন। ’১৪ সালের নির্বাচনে চারটিতে আওয়ামী লীগ, একটিতে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই ছয়টি আসনের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ, দুটি বিএনপি এবং দুটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। সবক’টি আসন নিজেদের ঘরে নিতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ওপর ভর করে প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের পালে হাওয়া লাগলেও অন্যদল থেকে ক্ষমতাসীন দলে যোগদান করা কতিপয় ব্যক্তির কারণে দুটি আসনে দলের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রকাশ্যে ভোটের মাঠে না থাকলেও চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে গোপনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে প্রতিটি আসনেই বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কৌশলে অন্যদল থেকে ক্ষমতাসীন দলে বহু যোগদানের হিড়িক পড়েছে। গণহারে যোগদান করা কতিপয় ব্যক্তির কারণে অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রকৃত ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মী। বিএনপি ও জামায়াত থেকে যারা আওয়ামী লীগে যোগদান করে এখন মাঠ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের হাতেই ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সদ্যযোগদানকারীরা ফের দল বদল করার আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলে সদ্য যোগদান করা ব্যক্তিদের ভর করে অনেকটা কৌশলে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কৌশলে চলমান আন্দোলনের নামে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তারা চাচ্ছেন সব আসনে বিজয়ী হতে। তবে নির্বাচনী প্রচারে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের চেয়ে পিছিয়ে বিএনপি। বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) ॥ আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মন্ত্রী পদমর্যাদায় থাকা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। দলের নেতাকর্মীরা দলীয় অভিভাবক হিসেবেও তাকে শ্রদ্ধা করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিই এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর শুধু এ আসনের মধ্যেই নয়; দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে রয়েছে তার প্রভাব। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের একমাত্র আশ্রয়স্থল হচ্ছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এ আসনে স্থানীয় বিএনপিতে রয়েছে ত্রিধাবিভক্তি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও এ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল ছাড়া অন্য কাউকে গত দশ বছরে মাঠে দেখা যায়নি। ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও গাজী কামরুল ইসলাম প্রায়ই এলাকায় এসে দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করছেন। একইসঙ্গে তারা যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-ে। কৌশলে তারা নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন বেশ জোরেশোরেই। বিএনপির প্রভাবশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুস সোবাহানকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হলে তার জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এর বাইরেও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি এম জহির উদ্দিন স্বপন, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, আশির দশকের কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা এসএম মনির-উজ জামান মনির। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন এ্যাডভোকেট ছেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী। জাকের পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখার সাধারণ সম্পাদক বাদশা মুন্সী। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হবেন মেহেদী হাসান রাসেল। বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) ॥ নৌকা প্রতীক নিয়ে এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস ’১৪ সালে নির্বাচিত হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর আস্থাভাজন ক্লিন ইমেজের সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোঃ ইউনুস। সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। তবে এবার মনোনয়ন চাচ্ছেন একাধিক নেতা। এরমধ্যে কতিপয় সম্ভাব্য প্রার্থী দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে বাড়তি ফায়দা নেয়ার স্বপ্নে বিভোর। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন-বর্তমান সাংসদ এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস, সাবেক সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনি, সাবেক ছাত্রনেতা শাহে আলম, প্রবীণ নেতা মোঃ হাবিবুর রহমান, ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন, শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজু, আলহাজ গোলাম ফারুক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী সৈয়দা রুবিনা আক্তার। এরমধ্যে বর্তমান সাংসদ এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস ও সৈয়দা রুবিনা আক্তারের পক্ষে প্রায় প্রতিদিনই এলাকায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চলছে। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন-এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, এ্যাডভোকেট শাহ খসরুজ্জামান ও সাংবাদিক নেতা ইলিয়াস খান। এর বাইরে তৃণমূল থেকে প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে সাবেক সাংসদ ও হুইপ শহীদুল হক জামালের। তবে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কেউই প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন জহিরুল আলম টুটুল, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হচ্ছেন মাওলানা নেছার উদ্দিন। ন্যাশনাল পিপল্স পার্টি (এনপিপি)’র প্রার্থী হবেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাহেব আলী হাওলাদার রনি, জাসদের (আম্বিয়া-প্রধান) সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন এ্যাডভোকেট আনিসুজ্জামান আনিস ও আবুল কালাম আজাদ বাদল। এখানে দলীয় মনোনয়ন ঠিকঠাক থাকলে আওয়ামী লীগের জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি। বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) ॥ এবারই সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগের আসন বলে ঘরে নিতে চান দলীয় নেতাকর্মীরা। নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনুরোধে বছরের পর বছর এলাকায় নানা উন্নয়ন কর্মকা-ের পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবেও বেশ শক্তিশালী অবস্থান করে নিয়েছেন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোঃ মিজানুর রহমান। এ দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ ও তার সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা করে রেখেছেন মিজানুর রহমান। এছাড়া এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত শহীদ মোস্তাক আহমেদ সেন্টুর বড় ভাই বাংলাদেশ প্রজন্ম লীগের প্রতিষ্ঠা সভাপতি, মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নিলু। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী হবেন বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান। তবে যুব মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতিকুর রহমান আতিক এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেয়ার পর চরম বেকায়দায় পড়েছেন বর্তমান সাংসদ। রাশেদ খান মেননের ঘনিষ্ঠজন আতিকুর রহমান বিগত ১০ বছরে নির্বাচনী এলাকায় নানা উন্নয়ন কর্মকা-, রাজনীতি ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন আলাদা ভাবমূর্তি। তৃণমূল পর্যায়ে জনসমর্থনেও এগিয়ে রয়েছেন শিক্ষানুরাগী আতিকুর রহমান। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে পারেন সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন-খালেদা জিয়ার আইন উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, তিনবারের সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, মুলাদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার খান। জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আহসান শাহজাদা মুন্সী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ সিরাজুল ইসলাম। তবে এ আসনে তৃণমূল পর্যায়ের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলে এবারই সর্বপ্রথম আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে ওঠার শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) ॥ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে চরম বিভক্তির কারণে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে জয়লাভ করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেব নাথ। বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। একটি পক্ষের নিয়ন্ত্রণ করছেন সাংসদ পঙ্কজ দেব নাথ এবং অন্য পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক সাংসদ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মইদুল ইসলাম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন বর্তমান সাংসদ পঙ্কজ দেব নাথ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মইদুল ইসলাম, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মহিউদ্দিন আহম্মেদের কন্যা আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্মেদ ও দলের আরেক নেতা মেজর (অব.) মহসিন সিকদার, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন মজিবুর রহমান হাওলাদার। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা উত্তর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি নুর রহমান জাহাঙ্গীর, সাবেক সাংসদ শাহ মোঃ আবুল হোসাইন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীদের মধ্যে অন্যতম এ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন। এখানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে নতুন ধারার চেয়ারম্যান মমিন মেহেদী দীর্ঘদিন থেকে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের সৈয়দ এছহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন বেসরকারী টেলিভিশন মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী। বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনটির প্রতি সব রাজনৈতিক দলেরই বিশেষ নজর থাকে। সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তরুণ নেতৃত্ব সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর কাছে বিএনপির প্রবীণ রাজনীতিবিদ মজিবর রহমান সরোয়ার বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। সরোয়ারের পরাজয়ের পাশাপাশি টানা দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ মর্যাদার আসনটি একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ধরে রাখতে চায়। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মতোই আরেক তরুণ নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন রিপন দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতির মাঠ দখলে রেখেছেন। ইতোমধ্যে তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এস আর সমাজকল্যাণ সংস্থার ব্যানারে প্রায় এক লাখ নারী-পুরুষকে চিকিৎসা ও শিক্ষার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে স্বাবলম্বী করেছেন। নির্বাচনী এলাকার সর্বত্র তার জয়জয়কার শুরু হয়েছে। এখানে এবারও মনোনয়ন চালাচ্ছেন বর্তমান সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজ, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, শিল্পপতি মশিউর রহমান খান ও আরেফিন মোল্লা। এরমধ্যে সালাহউদ্দিন রিপন ইতোমধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সংগঠিত করে দলীয় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন-কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন ও জেলা বিএনপি সভাপতি এবায়দুল হক চান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হবেন দলের নায়েবে আমীর মাওলানা মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম। কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সেলিম। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন ইকবাল হোসেন তাপস ও জেলার আহবায়ক অধ্যক্ষ মহসিন-উল ইসলাম হাবুল। আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মতে, বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থীদের সাথে বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজের প্রতিদ্বন্ধিতা অনেকটাই চ্যালেঞ্চ হয়ে উঠেছে। এছাড়া সিটি নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্বের জয়জয়কার শুরু হওয়ার প্রভাব পরবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সেই অবস্থান থেকে এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় তৃণমূলের আলোচনার অগ্রভাগে রয়েছেন তরুন সমাজ সেবক আলহাজ্ব মোঃ সালাহউদ্দিন রিপন। বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) ॥ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি খুবই মজবুত থাকলেও জাতীয় নির্বাচনে জোটের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ছাড় দিচ্ছে জাতীয় পার্টিকে। স্থানীয় রাজনীতিতে এনিয়ে চরম সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনের ন্যায় এখাকার আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বরিশাল-৬ আসনটি আর ছেড়ে দিতে রাজি নয়। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন-দলের উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খান আলতাফ হোসেন ভুলু, ইঞ্জিনিয়ার ওসমান হোসেন মনির ও সাবেক সাংসদ প্রয়াত মাসুদ রেজার স্ত্রী জেলা পরিষদের সদস্য আইরীন রেজা। এছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা আমিন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোহসীন এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হবেন মাওলানা মোঃ নাসির উদ্দিন ডাকুয়া। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন-সাবেক সাংসদ আবুল হোসেন খান, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. শহীদ হাসান খান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ বৃহৎ একটি দল। তাই দলে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশি। তবে জনসমর্থন, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে এবার প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×