স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচন আসন্ন। চলতি মাসের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার হওয়ার কথা। এ নিয়ে রাজনীতির ময়দানে বিস্তর আলোচনা। এ বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারের নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে সে বিষয়ে আগামী ২৬ অক্টোবর দলের যৌথ সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় জোটের সম্প্রসারণ নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে সেতুমন্ত্রী কাদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সব সিদ্ধান্ত হবে আগামী ২৬ অক্টোবর, সেদিন সন্ধ্যায় দলের ওয়ার্কিং কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি ও পার্লামেন্টারি কমিটির যৌথসভা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ২৬ অক্টোবরের পর আওয়ামী লীগের প্রস্তুত হওয়া নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হবে বলেও জানান কাদের।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার মন্ত্রিসভার আকারে বড় কোন পরিবর্তন নাও আনা হতে পারে। এ বিষয়ে কাদের বলেন, নেত্রীর সর্বশেষ ভাবনায় যৌক্তিকতা আছে। মন্ত্রিসভার সাইজ বড় ছোট ব্যাপার নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশেও একই অবস্থা দেখা যায়।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা এখন সংবিধানে নেই। বর্তমান ব্যবস্থায় ভোটের আগে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার প্রয়োজন হয় না, তবে তিন মাসের ক্ষণ গণনা শুরু হলে সংসদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অধীনে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন; যার নাম দেয়া হয় ‘সর্বদলীয় সরকার’। ওই মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর নেতাদের নেয়া হয়। স্বল্প পরিসরের ওই মন্ত্রিসভা সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। বিএনপিকে সেই ‘সর্বদলীয়’ সরকারে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হলেও তারা প্রত্যাখ্যান করে। পরে তারা দশম সংসদ নির্বাচনও বর্জন করে। গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এবারের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী গতবারের সঙ্গে এবারের পরিস্থিতির পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে বলেন, দশম সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও তিনি প্রতিনিধিত্বশীল সব দলের প্রতিনিধি নিয়েই সরকার গঠন করেছেন। যেহেতু সব দলের প্রতিনিধি আছে, এখন জানি না এটা খুব প্রয়োজন আছে কি না।
শেখ হাসিনা বলেন, মন্ত্রিসভা ছোট করা হলে একজনকে কয়েকটা মন্ত্রণালয় চালাতে হবে। সেক্ষেত্রে কোন কোন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দুই তিন মাসের জন্য থমকে যেতে পারে। এ বিষয়গুলোও ভাবতে হবে। সচিবালয়ের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, গতবার আমাদের দেশে বিষয়টা ভিন্ন ছিল, মন্ত্রিসভার সাইজ ছোট হয়ে গিয়েছিল, ভিন্ন প্রেক্ষাপট ছিল, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয় ছিল, পার্লামেন্টে ছিল। এবার সাইজ ছোট হলেও দু-একজন যুক্ত হতে পারে, এ অবস্থায় থাকলেও দু-একজন যুক্ত হতে পারে।
কোন দল থেকে নতুন মন্ত্রী আসতে পারে জানতে চাইলে কাদের বলেন, রুলিং পার্টি থেকে আসতে পারে, মেইন অপজিশন পার্টি থেকেও আসতে পারে। সম্ভবত মেইন অপজিশন পার্টি থেকে আসতে পারে। আমার ধারণা থেকে বলছি, গ্যারান্টি দিয়ে বলছি না।
নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীরা যখন একজোট হচ্ছে, তখন ফের মহাজোট গঠন বা ১৪ দলীয় জোটের সম্প্রসারণের কোন উদ্যোগ আছে কি না তা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। উত্তরে কাদের বলেন, ড. কামাল তার অবস্থান ব্যক্ত করেছেন, মেরুকরণটা কোথায় গিয়ে ঠেকে এখন তো অনেক জোট হয়ে গেছে। জোটের মেলা দেখতে পাচ্ছি, জোট তারকাদের মেলা দেখতে পাচ্ছি। জনতার কতটা সমর্থন আছে এটি বিষয় নয়, আমি নেতা আমার সিল প্যাড থাকলেও তো দল।
মইনুল হোসেনের গ্রেফতার জরুরী ছিল ॥ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মইনুল হোসেন গ্রেফতার ইস্যু ওঠে আছে। খোলামেলা জবাবও দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে কটূক্তির মামলায় সাবেক সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল হোসেনের গ্রেফতার হওয়া ‘জরুরী ছিল’ বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, মইনুলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে মামলার কারণে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে তার সংশ্লিষ্টতা এখানে কোন বিষয় নয়। তিনি বলেন, এখানে কোন জোটের বিষয় নয়, ব্যক্তির অপরাধের বিষয়। এটি একটি অপরাধ, তিনি নারী সাংবাদিককে যেভাবে এ্যাবিউজ করেছে, কোন মার্জিত সুশীল ব্যক্তির পক্ষে কি সম্ভব এ ধরনের আচারণ করা? সাংবাদিকরাই তো কনডেম করেছেন।
ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে শঙ্কা নেই ॥ ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আওয়ামী লীগের কোন উদ্বেগ বা আশঙ্কা রয়েছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে কোন উদ্বেগ বা শঙ্কা নেই। প্রধানমন্ত্রী তো স্বাগত জানিয়েছেন, মইনুল হোসেনকে ব্যক্তিগত অপরাধের কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে। হঠাৎ করে এসে তার রাজনীতির খায়েস হয়েছে, যাকে তাকে গালি দেবেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোন পরিবর্তন আনা হচ্ছে কিনা- এ প্রশ্নে কাদের বলেন, নির্বাচনের আগে সংশোধনের সুযোগ নেই, আইনের অপপ্রয়োগ যাতে না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখব। সাংবাদিকদের জন্য এ আইন করা হয়নি। যদি আপনি কোন অপরাধ না করেন, তাহলে ভয় কিসের? সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ২৮ অক্টোবর থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির যে ঘোষণা দিয়েছে সে বিষয়েও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে আইন সংশোধনের প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের হাতে দিন আছে মাত্র দুটি। দুদিন পরই সংসদ অধিবেশনের সমাপ্তি, এটা শেষ অধিবেশন। কাজেই এ সময়ে এটা আর সংশোধনের কোন সুযোগ নেই। তারা যে দাবি-দাওয়া করছেন, সেগুলো তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই কিন্তু এ আইনটা হয়েছে। তিন বছর ধরে এ আইন নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা, ওয়েবসাইটে দেয়া, সব কিছুই হয়েছে। আমি তাদের অনুরোধ করেছি প্রত্যাহার করুন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: