ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আদালত কারাগারে পাঠাল ব্যারিস্টার মইনুলকে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

আদালত কারাগারে পাঠাল ব্যারিস্টার মইনুলকে

কোর্ট রিপোর্টার ॥ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। রংপুর জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের মানহানির মামলায় মঙ্গলবার ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মোঃ কায়সারুল ইসলাম এ আদেশ দেন। গতকাল বেলা ১টার দিকে মইনুলকে ঢাকা সিএমএম আদালতের ২৮ নম্বর এজলাসে আনা হয়। বেলা সোয়া ১টার দিকে বিচারক এজলাসে ওঠার পর শুনানি শুরু হয়। এরপর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘কী মামলায় আনা হয়েছে এ সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই’। এরপর বিচারক নথি দেখে বলেন, ‘অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, রংপুরের সিআর ৭৯৭/২০১৮ নম্বর মামলার ওয়ারেন্ট মূলে তাকে ওয়ারী থানা পুলিশ আদালতে হাজির করেছে। ধারা উল্লেখ নেই’। এরপর আইনজীবী মাসুদ তালুকদার বলেন, ‘যদি ধারা উল্লেখ না থাকে তবে কীভাবে আপনি আদেশ দিবেন। এ বিষয়ে আপনার (বিচারক) ইনকোয়ারি করা প্রয়োজন’। এরপর আইনজীবী নজিব উল্লাহ হিরু বলেন, ‘যে কোর্ট থেকে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে এটা তার ব্যাপার। তবে আমরা ধারণা করতে পারি যে, সারা দেশে যেসব মামলা হচ্ছে এটাও সে ধরনের মামলা অথবা ভিন্ন কিছু হতেও পারে’। এ সময় বিচারক বলেন, ‘কোন ধারনের মামলা আপনারা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন। তবে এখানে ধারার উল্লেখ নেই।’ এরপর সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আমরা রংপুরের একটি মামলার কপি পেয়েছি। যেখানে মামলার বাদী মিলি মায়া বেগম। মামলার ধারা-দ-বিধির ৫০০/৫০৬/৫০৯’ । তখন বিচারক বলেন, ‘তাহলে তো আপনারা মামলার কপিই পেয়েছেন। শুনানি শুরু করেন’। এরপর আইনজীবী সানাউল্লাহ শুনানিতে বলেন, ‘বাদী মিলি মায়া বেগম, তার ঠিকানা রংপুর। ঘটনা ঢাকায়। আসামির ঠিকানা ঢাকায়। ভিটকিম নিজে মামলা করেছেন তাই রংপুরে ওই বাদিনীর মামলা করার এখতিয়ারই নেই। মইনুল হোসেন সুপ্রীমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং তার বড় পরিচয় তিনি একজন আইনজীবী ও সাংবাদিক। জামিনযোগ্য ধারার মামলা’। এরপর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুদার বলেন, জামিনযোগ্য ধারার মামলায় জামিন পাওয়া একজন আসামির অধিকার উচ্চ আদালত বলে দিয়েছেন। এখনে ভিন্নতর হওয়ার কোন সুযোগ নেই। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান বলেন, ওই ঘটনায় যিনি সংক্ষুব্ধ তিনি ঢাকার আদালতে মামলা করেছেন। তারপর অন্য কোন ব্যক্তির মামলা করার সুযোগ নেই। আইনজীবী মোসলেহ উদ্দিন জসিম বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৮৬ ধারায় বলা আছে, জামিনযোগ্য ধারার মামলা হলে পুলিশই আসামিকে মুচলেকায় ছেড়ে দিতে পারেন। আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে জামিন দিবেন এটাই বিধান। সর্বশেষ খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন একটার পর একটা মামলায় তার জামিন নিচ্ছি তখন ৩ ঘণ্টার মধ্যে মামলা করে ওয়ারেন্ট এনে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা উদ্দেশ্যমূলক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার ওয়ারেন্টে ধারাও উল্লেখ করা হয়নি। এটাও উদ্দেশ্যমূলক। যিনি ভিকটিম তার করা মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। এরপর আরও একটা মামলায় জামিন পেয়েছেন’। এদিকে ওই সময় আইনজীবীদের আদালত কক্ষে প্রবেশ করতে না দেয়ায় আইনজীবীদের হৈচৈয়ে ৫ মিনিট শুনানি বন্ধ থাকে। পরে হৈচৈকারীদের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘ওনার (মইনুল হোসেন) সিকিউরিটির জন্য সবাইকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আপনাদের সিনিয়র আইনজীবীরাতো ভেতরে আছেন’। এরপর আদালতের পরিবেশ শান্ত হলে আবার শুনানি শুরু করে খন্দকার মাহবুব বলেন, জামিনযোগ্য ধারা, বয়স্ক মানুষ, অসুস্থ বিবেচনায় নিয়ে আসামিকে জামিন দিবেন। আসামি পক্ষের বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর টক-শোর ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, ওয়ারেন্টে ধারা উল্লেখ নেই। তবে ধারণা করছি ওই ঘটনা থেকেই মামলাটি হয়েছে। জামিনযোগ্য হলে জামিন দিতে হবে এমনটি ঠিক নয়। রংপুর আদালতের মামলা। আমরা জামিনের বিষয়টি তাদের ওপরই ছেড়ে দেই। এরপর নজিবউল্লাহ হিরু বলেন, সম্প্রতি জামিনযোগ্য ধারার অনেক মামলায়ই বিজ্ঞ আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। যেমন সড়ক দুর্ঘটনার মামলা। জামিনযোগ্য হলেও পরিবেশ পরিস্থিতিও আদালতকে দেখতে হয়। তিনি (মইনুল হোসেন) যে কথা বলেছেন, তাতে দেশে একটি সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছে। যাকে বলেছেন, তিনি একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক। আন্তর্জাতিকভাবে তার পরিচিতি আছে। আর আসামির বক্তব্য শুধু তাকেই আঘাত করেনি, পুরো নারী জাতিতে আঘাত করেছেন। তাই জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করছি’। শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে দ্রুত এজলাস ছেড়ে যান। আদেশ হওয়ার পর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা বিচারকের প্রতি ‘শেম শেম’ শব্দ উচ্চারণ করেন। পরে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা সিএমএম আদালতে সামনে গ্রেফতারের পক্ষে-বিপক্ষে সেøাগান দেয়। গত ২২ অক্টোবর রাত পৌনে ১০টায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টাকে উত্তরার জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে রাখা হয়। গত ২২ অক্টোবর দুপুরে রংপুর নগরীর মুলাটোল এলাকার মিলি মায়া বেগম বাদী হয়ে রংপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। এরপর আদালত মামলাটি সরাসরি আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গত ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে একাত্তর টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি ও ডাক্তার সাখাওয়াত সায়ন্ত। একপর্যায়ে লাইভে যুক্ত হন আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। এ সময় মইনুলের কাছে মাসুদা ভাট্টির প্রশ্ন ছিল, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আলোচনা চলছে, আপনি সদ্য গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে এসে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করছেন কি না?’ মইনুল হোসেন এ প্রশ্নের জবাবে একপর্যায়ে মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য করেন। ওই ঘটনা রংপুর ছাড়াও সারা দেশে মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ছয়টি মানহানির মামলা হয়েছে। যার গত ২১ অক্টোবর ঢাকা সিএমএম আদালতে মাসুদা ভাট্টি নিজেও মানহানির একটি মামলা করেছেন।
×