ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইফতেখার হোসাইন

প্রসঙ্গ ॥ কালো রসুন

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

প্রসঙ্গ ॥ কালো রসুন

হাজার বছর ধরে পৃথিবীর অনেক দেশে রসুন (অষষরঁস ংধঃরাঁস) একটি খাবার ও মসলা হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চার হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী ওষুধ হিসেবে রসুন পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এটি ‘রাশিয়ান পেনিসিলিন’ নামে পরিচিত ছিল। বিখ্যাত মাইক্রোবায়োলজিস্ট লুই পাস্তুরও রসুনের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করেছিলেন। স্বাভাবিক রসুনের আরেকটি ধরন কালো রসুন (ব্লাক গারলিক) একটি প্রক্রিয়াজাত রসুনপণ্য। এটির রং কালো, কম তীব্র গন্ধযুক্ত এবং মিষ্টি স্বাদযুক্ত ফলে এটি কোন ফুড এডিটিউস যোগ করা ছাড়াই সহজে খাওয়া যায়। জাপানোর হিরোশাকি ইউনিভারসিটি অব হেলথ সাইন্সের সাবেক বিখ্যাত প্রফেসর ড. জিন ইচি সাসাকি এটির নাম দেন ‘ভেজি ফ্রুটস’ যার অর্থ উদ্ভিজ্জ এবং ফলের ২টি মুখ। ১৯৯৯ সালে কালো রসুন প্রথম জাপানে তৈরি হয় এবং এটি জাপানের ‘মী প্রিফেকচার এর নাগরিক জনাব কামিমুরা তৈরি করেন। নোয়াখালী বিজ্ঞানও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বায়োকেমিস্ট্রি এ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. সুবোধ কুমার সরকার জাপানের হিরোশাকি ইউনিভারসিটি অব হেলথ সায়েন্সের সাবেক বিখ্যাত প্রফেসর ড. জিন ইচি সাসাকির সহযোগিতায় বাংলাদেশে প্রথম তিন ধরনের কালো রসুন, নোবিপ্রবি-বিজি-১ (ডিএল-বিজি), নোবিপ্রবি-বিজি-২ (ডিএস-বিজি) ও নোবিপ্রবি-বিজি-৩ (সিএল-বিজি) তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এ গবেষণায় তিন ধরনের তৈরিকৃত কালো রসুনের সঙ্গে তিন ধরনের সাধারণ রসুনের তুলনা করা হয় এবং দেখা যায় যে, তিন ধরনের কালো রসুনের মধ্যে উচ্চ মাত্রায় ফ্লেভানয়েড, অ্যালকালয়েড, স্যাপোনিন, ট্যানিন, কারডিয়্যাক গ্লাইকোসাইড ও রিডিউসিং সুগার উপস্থিত আছে এবং পরীক্ষার ফলাফলে আরও দেখা যায় যে, নোবিপ্রবি-বিজি-১ এবং নোবিপ্রবি-বিজি-২ এর নির্যাস নোবিপ্রবি-বিজি-৩ এর নির্যাসের চেয়ে গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী কার্যকারিতা প্রদর্শন করে। এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও ফাইটোকেমিক্যাল স্কিনিং পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় যে, জাপানের তৈরি কালো রসুনের মতো নোবিপ্রবি-বিজি-১ ও নোবিপ্রবি-বিজি-২ কালো রসুনে ও শক্তিশালী জৈব যৌগিক যৌগ উপস্থিত রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বিশেষ করে গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঔষধি সম্পূরক হিসেবে উপকারী হতে পারে। পরীক্ষার ফলাফলটি আরও নির্দেশ করে যে, নোবিপ্রবি-বিজি-১ এবং নোবিপ্রবি-বিজি-২ কালো রসুন নোবিপ্রবি-বিজি-৩ (সিএল-বিজি) চীনা বড় জাতের এবং জাপানি বড় জাতের (জেএল-বিজি) এর চেয়ে প্রকৃতিতে উচ্চমানের। ড. সুবোধ কুমার সরকার এই গবেষণা কাজটি পরিচালনা করেন জাপানের হিরোশাকি ইউনিভারসিটি অব হেলথ-সাইন্সের সাবেক প্রফেসর ড. জিন ইচি সাসাকি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল এহসানের সহায়তায় ফিলিপাইনের মেরিয়ানা মারকোস ইউনিভারসিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. শেরলি কাস্তেনেদা আরাপিস, টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, জাপানের ইনস্টিটিউট প্রেফেসর ও বায়োসাইন্স এ্যান্ড বায়োটেকনোলজি ফ্যাকাল্টির সাবেক প্রফেসর ড. হিরোস সিজেহিসা এবং সিজুওকা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ম্যাটোরিয়াল এ্যান্ড লাইফ সাইন্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. তাথসুরো মিয়াজি এই প্রকল্পে আরও একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে কালো রসুনের ওপর কাজের জন্য ড. সুবোধ কুমার সরকার ব্লাক গারলিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, ২০১৮ এবং আওমরি ব্লাক গারলিক এ্যাসোসিয়েশনের প্রসিডেন্ট মি: সিনিচি কাসিওজাকি এর নিকট থেকে গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে জাপানের হাচিনোহিতে অনুষ্ঠিত ৩য় আন্তর্জাতিক ব্লাক গারলিক সম্মেলন-এ ‘ব্লাক গারলিক এ্যামবাসিডর’ হিসেবে উপাধি পান। এই উপাধিটি শুধু জাপানের হিরোশাকি ইউনিভারসিটির সাবেক প্রফেসর, প্রফেসর ড. জিন ইচি সাসাকি ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য মহোদয় প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামানের সাহায্য, উৎসাহ ও সার্বিক সহযোগিতার ফলেই সম্ভব হয়েছে বলেই এই গবেষক মনে করেন। এই তিন ধরনের কালো রসুন তৈরির গবেষণার ফলাফল ২টি আন্তর্জাতিক সম্মেলন, একটি কম্বোডিয়ায় ফুড সেফটি ও ফুড সিকিউরিটির ওপর ৪র্থ এএফএসএ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গত ১১ আগস্ট ২০১৮ এবং একটি জাপানের হাচিনোহিতে ৩য় আন্তর্জাতিক ব্লাক গারলিক সম্মেলন এ গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে উপস্থাপন করা হয়। এই ব্লাক গারলিক প্রকল্পের গবেষক মনে করেন সরকারী আর্থিক সুবিধা ও সার্বিক সহায়তা পেলে বেশি পরিমাণে এই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্লাক গারলিক তৈরি করা সম্ভব হবে এবং মানবস্বাস্থের জন্য এই ঔষধি সম্পূরকটি ব্যবহারের জন্য দেশ জুড়ে বিস্তৃত করা সম্ভব হবে। এছাড়াও এই ব্লাক গারলিকগুলো অন্যান্য দেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে ফলে আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে। প্রসঙ্গত, কালো রসুনের অনেক ঔষধি গুণাগুণ আছে যা এটি-অক্সিডেন্ট একটিভিটি, এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল একটিভিটি, এন্টি-ডায়াবেটিক একটিভিটি, এন্টি-টিউমার, এন্টি-ক্যানসার একটিভিটি প্রকাশ করে এবং রক্তে উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
×