ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাংস্কৃতিক উৎসবের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই ॥ গোলাম কুদ্দুছ

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

সাংস্কৃতিক উৎসবের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই ॥ গোলাম কুদ্দুছ

ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে সম্প্রতি ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১৮’ শিরেনামে সমকালীন বাংলা সংস্কৃতির এক মহাউৎসব হয়ে গেল। উৎসবে প্রতিদিন তিন মঞ্চে তিনটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। এছাড়া উৎসব প্রাঙ্গণে নাচ, গান, আবৃত্তি, পথনাটক আর মূকাভিনয়ে দুই বাংলার আড়াই হাজার শিল্পী অংশ নিয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা বিনিময় ও মৈত্রী বন্ধন দৃঢ়তার লক্ষ্যে সপ্তমবারের মতো এ উৎসবের আয়োজন করেছে গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদ। আয়োজন কেমন হলো, এ বিষয়ে উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক সংস্কৃতিজন গোলাম কুদ্দুছের সঙ্গে কথা হয়। এবারের উৎসব কেমন হলো, আপনার অভিজ্ঞতাই বা কেমন? গোলাম কুদ্দুছ : সব উৎসবের একটা বারতা থাকে। ‘গঙ্গা যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’ এর উর্ধে নয়। তবে এ উৎসব কিছুটা ভিন্ন এ কারণে, এখানে সকল ধারার সংস্কৃতিকর্মীদের এক বৃহৎ মিলন মেলা। এবারের উৎসবে বিপুল সংখ্যক দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি আমাদের আলোকিত করেছে। উৎসবের সুন্দর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তরুণ সংস্কৃতিকর্মীদের ব্যাপক অংশ ও দায়িত্ব গ্রহণ। একাধিক নতুন নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন এ উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। সামগ্রিকভাবে উৎসবে নাটক, গান, আবৃত্তি, নৃত্যনাট্য, পথনাটক, শিশু সংগঠনের পরিবেশনা, মূকাভিনয় সবকিছুই দর্শকের মন ছুঁয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে বিশ্বাসী। এ লক্ষ্যে ব্যাপক সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটিয়ে মানুষকে এই চেতনায় উদ্ভুদ্ধ করতে চাই। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তি, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের আদর্শে মানবিক বোধে জাগিয়ে তুলতে সংস্কৃতির কোন বিকল্প নেই। এবারের উৎসবে কাদের সাহচর্য বেশি ছিল? গোলাম কুদ্দুছ : ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’ আয়োজনে প্রাথমিক প্রেরণা দেয়ায় কলকাতার অনীক নাট্যদল প্রধান প্রয়াত অমলেশ চক্রবর্তীর প্রতি কৃতজ্ঞ। এ উৎসবে বিশেষভাবে সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশে এ উৎসবের শুরুটা কিভাবে? গোলাম কুদ্দুছ : ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অনীক নাট্যদলের আয়োজনে দলপ্রধান নাট্যজন অমলেশ চক্রবর্তী ২১ বছর আগে কলকাতায় ‘গঙ্গা যমুনা নাট্যোৎসব’ শুরু করেন। উৎসবে প্রতিবছর আমাদের দেশ থেকেও নাট্যদল অংশগ্রহণ করতো। তখন থেকে ভাবনা আসে আমাদের দেশেও এ উৎসব হতে পারে। উৎসবে অংশ নেয়া দেশের নাট্যদলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঢাকায় এ উৎসবের সিদ্ধান্ত নেই। ২০১২ সালে প্রথম ‘গঙ্গা যমুনা নাট্যোৎসব’ আয়োজন করি। উৎসবের নামকরণের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে যদি কিছু বলেন- গোলাম কুদ্দুছ : গঙ্গা-যমুনা দুই দেশের মধ্যে প্রবহমান নদী। উচ্চ হিমালয় থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশে গেছে। আমরা মনে করি দুটি নদী যেমন করে দুই দেশের প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন গড়ে তুলেছে, মানুষের জীবনও একইভাবে প্রবহমান। আর মানুষই সংস্কৃতি সৃষ্টি করে। সুতরাং দুই দেশের সংস্কৃতিও অভিন্ন, আভিজাত্য। শুধু রাজনীতি আমাদের বিভক্ত করেছে। রাজনীতি আমাদের চেতনাকে শেষ করতে পারেনি। আগামী পরিকল্পনা কী? গোলাম কুদ্দুছ : অর্থ সঙ্কটের জন্য দেশব্যাপী এ উৎসব করা আমাদের পক্ষে কষ্টসাধ্য। সবার দাবি পরবর্তীতে ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় এ উৎসব আয়োজন করি। সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেলে আগামী বছর ঢাকার বাইরেও এ উৎসব ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। -গৌতম পাণ্ডে
×