ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাওয়া ইমরুল এখন অন্যদের অনুপ্রেরণা

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

বদলে যাওয়া ইমরুল এখন অন্যদের অনুপ্রেরণা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগের দুটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি দলকে জেতাতে পারেনি, অবশেষে ক্যারিয়ারসেরা ১৪৪ রান করে দলকে জিতিয়েছেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে নিজেও ম্যাচসেরা হয়েছেন দলের বিপদের মুহূর্তে দুর্দান্ত এই ইনিংসটি খেলে। সেই ম্যাচে উদযাপনটাও ছিল ভিন্ন রকমের। সম্প্রতিই কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন ইমরুল কায়েস এবং সেঞ্চুরির পর সেই সন্তানকেই উৎসর্গ করতে গিয়েই ভিন্নধর্মী উদযাপনটা করেছিলেন। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে অনেকবার দল থেকে ছিটকে পড়ে আবার নতুন করে দলে ঠাঁই করে নিয়েছেন একেবারেই বদলে যাওয়া ইমরুল। নিজেকে অন্যভাবে চিনিয়েছেন। বিপদের মুখে হাল ধরে পরিণত একটি ইনিংস খেলা দলের অন্য ক্রিকেটারদের জন্যও অনুপ্রেরণা। যদিও ইমরুল ম্যাচশেষে বলেছেন মুশফিকুর রহীমকে দেখেই নিজেকে এভাবে গড়তে শিখেছেন তিনি। ২০০১ সালে প্রথম সেঞ্চুরিটি করেছিলেন, এর ৬ বছর পর দ্বিতীয় শতকটি করেন। ১০ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় শতকটি এসেছে দুই বছরের ব্যবধানে। এর মধ্যে মাত্র ১৪ ওয়ানডে খেলেছেন এ ওপেনার। যদিও সম্প্রতি এশিয়া কাপে তিনি ইনজুরি আক্রান্ত তামিম ইকবালের কারণেই এক বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরেছেন। আর ফেরার পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো অন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। কখনও ওপেনার এবং কখনও বা তিন নম্বরেই সবসময় ব্যাটিং করেছেন। কিন্তু সেই ম্যাচে ৬ নম্বরে নেমে দলের বিপর্যয়ে হাল ধরে অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস খেলেন। সেই ইনিংসটি থেকেই শিখেছেন কিভাবে চাপের মুখে ব্যাট চালিয়ে দলকে বাঁচানো ইনিংস উপহার দেয়া যায়। এ বিষয়ে ইমরুল বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি কি করতে পারি, কি পারি না, অনেক কিছু জেনেছি ওই ইনিংস থেকে। আজকে (রবিবার) ব্যাটিংয়ের সময় ওই ইনিংসটার কথা বারবার মনে করছিলাম। ওই রকম একটা কঠিন পরিস্থিতিতে, চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে যদি ভাল কিছু করতে পারি, তাহলে নিজেদের কন্ডিশনে আরও ভাল কিছু করতে পারব।’ তবে এই ব্যাপারটি তিনি মূলত শিখেছেন মুশফিকের কাছ থেকে। বাংলাদেশ দলের মধ্যে সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত মুশফিক নিয়মিতই দলের বিপর্যয়ে হাল ধরে মিডলঅর্ডারে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ নামটি কামিয়েছেন। এ বিষয়ে ইমরুল বলেন, ‘আমি একটি ব্যাপার বিশ্বাস করি, কেউ যদি কঠোর পরিশ্রম করে, সে তার ফল পাবেই। আমি মুশফিককে দেখে অনেক কিছু শিখি। মুশফিক যেভাবে কষ্ট করে, ও কিন্তু কষ্ট করেই আজকের মুশফিকুর রহীম হয়েছে। আমি সবসময় এটা অনুসরণ করার চেষ্টটা করি। বিশ্বাস করি যে কষ্ট করলে তার ফল পাওয়া যায়। আমার সঙ্গে অনেক ক্রিকেটারের একসঙ্গে অভিষেক হয়েছে, খেলেছে। তারা এখন দৃশ্যপটেও নেই। আমার কাছে মনে হয় যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি যে আমার ক্যারিয়ারে এত দ্রুত শেষ হতে পারে না।’ এই ম্যাচ দিয়ে আবারও ওপেনার হিসেবে ফিরেছেন ইমরুল। এক সময় তামিমের সঙ্গে সবচেয়ে ভাল ওপেনিং জুটি হিসেবে তার নামটিই ছিল। এখন পর্যন্ত রান করার দিক থেকে তামিম-ইমরুল জুটিই সবচেয়ে এগিয়ে। কিন্তু এই সেঞ্চুরিটি ছিল অন্যরকম। ইমরুল বলেন, ‘সেঞ্চুরি করে কিংবা অন্যরকম একটা ইনিংস খেলে যদি দলকে জেতাতে পারেন তাহলে খুব ভাল অনুভূতি হয়। আমার কাছে মনে হয় আজকে সেঞ্চুরি করেছি এবং একটা কঠিন সময়ে ইনিংসটাকে গড়ে তুলেছি। আমাদের একটা ভাল স্কোর হয়েছে। চাপটা পরে অনুভব করিনি। ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন থাকবেই। কেউ কখনও একই ধারাবাহিকতায় টানা খেলতে পারে না।’ ইমরুল যেমন নিজের অভিজ্ঞতা ও মুশফিককে দেখে শিখেছেন এবং ৩১ বছর বয়সে এসে পরিণত হয়েছেন অনেকখানি, তেমনি দলের তরুণরাও এখন তার এই ইনিংস থেকে অনুপ্রাণিত হতে পারে। এ বিষয়ে ইমরুল বলেন, ‘এভাবে মনে হয় যে আস্তে আস্তে তরুণরা বুঝতে পারছে যে দলের কি দরকার, কোন পরিস্থিতিতে কি করতে হয়। যখন ৫ জন থাকবে না, ওরা হয়ত আরও পরিণত হবে। আরও ভালভাবে সামলাতে পারবে এই ধরনের পরিস্থিতি।’ এই ম্যাচের দিনই দীর্ঘদিন পর ফেরা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৫০ রানের একটি কার্যকর ইনিংস খেলেন ৮ নম্বরে নেমে। তাকে পুরোটা সময় সাহস জুগিয়েছেন সিনিয়র ও অভিজ্ঞ হিসেবে ইমরুল। তিনি বলেন, ‘বড় ইনিংস খেললে অবশ্যই তরুণরা অনুপ্রাণিত হবে। দলে থেকে ওরা দেখে, অনুভব করে যে কঠিন পরিস্থিতিতে কি হয়। ওরা এসব থেকে অনেক শিখতে পারে।’
×