ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবাধে চলছে জলাধার ভরাট

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

অবাধে চলছে জলাধার ভরাট

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ চকরিয়ার উপকূলীয় এলাকা বদরখালীতে পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে শ্যালো মেশিন বসিয়ে জলাধার ভরাটের মহোৎসব চলছে। মেশিন বসিয়ে সাগর চ্যানেলের তলদেশ থেকে উত্তোলন করা কাদামাটি পাইপের মাধ্যমে জলাধারে ফেলা হচ্ছে। এতে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্য। ভরাটের পর সেখানে বহুতল বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম সমবায়ী প্রতিষ্ঠান বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতি। অপরিকল্পিতভাবে জলাধার ভরাটের ফলে ওই এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা চরম হুমকিতে পড়ছে। জলাধার ভরাট হলে বর্ষাকালে পানি চলাচল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সঙ্গে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহল। জলাধার ভরাটের পর বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের মাধ্যমে দোকান বরাদ্দখাতে বড় ধরনের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় পরিবেশ বিধ্বংসী একাজে নেপথ্য ভূমিকায় রয়েছেন বদরখালী সমিতির সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদার ও সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী। তারা পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিব্যি এ অপকর্মটি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য পরিবেশ আইন লঙ্ঘনে জলাধার ভরাটের প্রস্তুতি নেয়ার আগমুহূর্তে গত সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখ বিষয়টির আলোকে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন বদরখালী সমিতির সভ্য ও স্থানীয় পরিবেশ সচেতন নাগরিক মোঃ রিদুয়ানুল হক। অভিযোগটি দাখিল করার পর একমাস সময় অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি পরিবেশ অধিদফতর রহস্যজনক কারণে কার্যকর কোন ধরনের প্রদক্ষেপ নেয়নি। পরিবেশ অধিদফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। বদরখালী সমিতির সভ্যরা জানিয়েছেন, সমিতির মালিকানাধীন বাজারের পশ্চিম অংশে শত বছরের পুরনো একাধিক গর্ত (বর্ধিত খাই জায়গা) রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এসব গর্তে অন্তত ২০ একরের মতো জায়গা আছে। প্রতিবছর বর্ষাকালে বাজারের বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পশ্চিম অংশের ওই গর্তগুলোতে জমাট হয়। ক্রমান্বয়ে তা পশ্চিম অংশের সাগর চ্যানেলে নেমে যায়। ফলে বাজার ও আশপাশ এলাকা জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত থাকে। সমিতির সভ্যদের মতে, বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ে জমাটের পাশাপাশি সমিতির পক্ষ থেকে খাই গর্তের উল্লেখিত পরিমাণ জায়গা প্রতিবছর নিলামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ডাককারিকে মৎস্য চাষের জন্য ইজারা দেয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে উল্লেখিত পরিমাণ খাই গর্তের জায়গা দুই বছর (২০১৮ ও ১৯ সালের জন্য) মেয়াদে ১৬ লাখ ১০ টাকা সর্বোচ্চ ডাককারি হিসেবে সমিতির সভ্য বদিউল আলম মানিক নামে একজনকে ইজারা দেয়া হয়েছে। ডাককারি মানিক সেই সময় সমিতির কাছে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা রিসিভমূলে পরিশোধ করে যথারীতি মৎস্য চাষও শুরু করেছেন। সর্বোচ্চ ডাককারি ইজারাদার বদিউল আলম মানিক বলেন, দুই বছর মেয়াদে আমি উল্লেখিত খাই গর্তের জায়গা সমূহ মৎস্য চাষের জন্য সমিতির কাছ থেকে ইজারা নিই। প্রথম বছর আমি সমিতির কাছে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করে চাষও শুরু করি। এখনও মেয়াদ শেষ হতে এক বছর দুই মাস সময় অবশিষ্ট আছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ইজারা মেয়াদ বাকি আছে। কিন্তু এখন দেখি আমার মৎস্য চাষের ওই খাই গর্তের জায়গায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। বিষয়টি সমিতির সভাপতি সম্পাদকের কাছে জানানোর পরও কোন ধরনের প্রতিকার পাইনি। বদরখালী সমিতির মালিকানাধীন শত বছরের পুরনো খাই গর্তের জলাধার ভরাটের ঘটনায় ইতোমধ্যে সমিতির সভ্য রিদুয়ানুল হক কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বদরখালী সমিতির একাধিক সভ্য ও পোষ্যরা অভিযোগ তুলেছেন, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাজারের পশ্চিম অংশে সাগর চ্যানেলে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পরিবেশের সুরক্ষা নিধনের মাধ্যমে জলাধার ভরাটের কাজটি শুরু করেছেন সমিতির সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদার ও সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরীসহ একটি চক্র। মূলত ভরাটের পর ওই জায়গায় বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের মাধ্যমে দোকান বরাদ্দখাতে বড় ধরনের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তারা পরিবেশ বিধ্বংসী একাজের নেপথ্যে নাটের গুরুর ভূমিকায় রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নির্লিপ্ততার সুযোগে জলাধার ভরাটে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ওই চক্র। বদরখালী সমিতির জলাধার ভরাটের বিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক মোঃ মুমিনুল হক বলেন, জলাধার ভরাটের ঘটনায় বদরখালী সমিতির সভাপতি সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রিদুয়ানুল হক নামে একজন লিখিত অভিযোগ করেছেন।
×