ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

না’গঞ্জে নিহত চার যুবকের লাশ শনাক্ত ॥ ডিবি পরিচয়ে তাদের তুলে নেয়া হয়

পেছন থেকে শটগানের গুলিতে তাদের হত্যা করা হয়

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

পেছন থেকে শটগানের গুলিতে তাদের হত্যা করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখীর দিঘিরপাড়া এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া চার যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশের পরিচয় মিলেছে। সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নিহতদের স্বজনরা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে এসে নিহতদের লাশ শনাক্ত করেন। নিহতদের স্বজনদের দাবি, গত সোমবার ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাদেরকে তুলে নেয়া হয়েছিল। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। এদিকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে গুলিবিদ্ধ চারজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। উদ্ধার হওয়া চারটি লাশের মধ্যে সোমবার তিনজনকে শনাক্ত করেছে পরিবারের সদস্যরা। এর আগে রবিবার বিকেলে লুৎফর রহমান মোল্লা নামে জব্দকৃত গাড়ি চালকের লাশ শনাক্ত করে তার স্ত্রী রামপুরা ওয়াপদা এলাকার রেশমা বেগম নিয়ে গেছে। জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মর্গে থাকা বাকি তিনজনের লাশ শনাক্ত করেন। তারা হলেন- পাবনা জেলার আতাইকুলা ইউনিয়নের ধর্মগ্রাম এলাকার খায়রুল সরদারের ছেলে মোঃ সবুজ সরদার (১৭), একই এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে ফারুক হোসেন (৪০) ও একই এলাকার লোকমান সরকারের ছেলে জহিরুল ইসলাম (২৪)। সবুজের পিতা খায়রুল সরদার হাসপাতালের মর্গে এসে তার ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। ফারুক হোসেন পিতা জামাল উদ্দিন তার ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। জহিরুল ইসলামের লাশ তার শ্বশুর নজরুল ইসলাম হাসপাতালে মর্গে এসে জামাতার লাশ শনাক্ত করেন। নিহত জহিরুল ইসলামে শ্বশুর নজরুল ইসলাম জানান, দশ দিন আগে কাজের উদ্দেশে ঢাকা আসে জহিরুল ইসলাম। এখানে কাজ করেছে কিনা জানি না। গত শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) থেকে সে নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজ থাকার পর পাবনার বিভিন্ন থানায় যোগাযোগ করি। রবিবার ফেসবুকের মাধ্যমে খবর পান চারজনের লাশ নারায়ণগঞ্জ জেনালের হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। তার (জহিরুলের) সম্পর্কে মামা ফরুক হোসেন তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। সে ঢাকায় গাড়ি চালায়। তিনি বলেন, ফারুক হোসেনকে যদি ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে থাকে তবে আমার মেয়ের জামাতাকেও ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আমি এই হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার চাই সরকারের কাছে। ফারুক হোসেনের বাবা জামাল উদ্দিন জানান, গত সোমবার তার ছেলে ফারুকসহ চারজনকে ভুলতা গাউছিয়া থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। গণমাধ্যমে সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরে তিনি ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, তার ছেলে ভুলতা গাউছিয়ায় বাস চালাত। তার সঙ্গে খায়রুল সরদারও তার ছেলে সবুজ সরদারের লাশ শনাক্ত করেন। তার ছেলে বেকারিতে কাজ করত বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, লিটন নামে আরও একজন নিখোঁজ রয়েছে। নিহত সবুজ সরদারের বাবা খায়রুল সরদার জানান, বেকারির কারিগর সবুজ সরদার অভাবের তাড়নায় পরিবারের ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য বাড়তি আয়ের উদ্দেশে সোমবার ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এর পরদিন থেকেই সবুজের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার ছেলে বেকারিতে কাজ করত। তারা ও আমরা গরিব মানুষ। তারা কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। জহিরুল ইসলাম সবুজের সঙ্গে একই বেকারিতে কাজ করত এবং ফারুক হোসেন বাসচালক বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। তারা তিনজনই একে অপরের পূর্ব পরিচিত বলে জানা গেছে। আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ হক জানান, রবিবার পাঁচরুখী এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয়ে নিহত চার যুবরেকর ঘটনায় এস আই রফিকউল্লাহ বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় অস্ত্র ও হত্যাকা-ের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহরে বলা হয়েছে, গত রবিবার ভোরে স্থানীয় লোকজন মহাসড়কের পাশে চারটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ সময় লাশের সঙ্গে দেশীয় তৈরি দুটি পিস্তল ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে।
×