ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

অর্থনীতির নোবেল-২০১৮

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

অর্থনীতির নোবেল-২০১৮

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার রাজকীয় সুইডিস বিজ্ঞান একাডেমি প্রবর্তন করে ১৯৬৮ সালে। ১৮৯৫ সালে সুইডিস শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেল যে উইল বা উত্তরাধিকার পত্রে ৫ বিষয়ে অনুশীলনের উৎকর্ষের স্বীকৃতি অবয়বে বার্ষিক নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন তার মধ্যে অর্থনীতি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ১৯৬৮ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থায়নে অর্থনীতিতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আলফ্রেড নোবেল প্রবর্তিত ৫টি বার্ষিক নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে রাজকীয় সুইডিস বিজ্ঞান একাডেমি যোগ করে এই পুরস্কার। ১৯৭০ সালে গত শতাব্দীর সবচেয়ে নামকরা আমেরিকান অর্থনীতিবিদ পল এন্থনী স্যামুয়েলসন পান অর্থনীতিতে নোবেল। ২০১৭ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন আর এক আমেরিকান অধ্যাপক রিচার্ড থেলার। এই বছর যৌথভাবে অর্থনীতির নোবেল পেয়েছেন আবারও দুই আমেরিকান অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম ডবনী নর্ডহাউস ও পল মাইকেল রোমার। স্মর্তব্য, নোবেল পুরস্কার জীবিত বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, শান্তি সংগ্রামী ও অর্থনীতিবিদকে তাদের স্ব-স্ব চর্চার বৃত্তে অবদানের জন্য দেয়া হয়, মৃত্যু পরবর্তীকালে নোবেল দেয়া হয় না। এই বছর ৯ অক্টোবর যখন অর্থনীতিতে অবদানের জন্য নর্ডহাউস ও রোমারের যৌথভাবে নোবেল প্রাপ্তির খবর এলো, তখন আমি ছিলাম ইন্দোনেশিয়ার বালিতে, গত শতাব্দীর প্রখ্যাততম দুই অর্থনীতিবিদ মেনার্ড জন কেইনস ও হ্যারি ডেকসটার হোহাইট কর্তৃক রূপরেখায়িত দুই শতাব্দীর সবচেয়ে কার্যক্ষম আর্থিক ক্ষেত্রের দুই আন্তর্জাতিক সংস্থা- বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে আমন্ত্রিত সাংসদ হিসেবে। আমার সঙ্গে ছিলেন অর্থনীতি চর্চায় আমার সহযোগী স্ত্রী সিতারা। অর্থনীতির চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে পর্যায় থেকে পর্যায়ে এই বিজ্ঞানকে উন্নীত করার সফলতার ধারক ও বাহক রূপে নর্ডহাউস ও রোমারকে অর্থনীতির নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি ও সিতারা পলকবিহীন শ্রদ্ধার গভীরতায় অভিনন্দন জানিয়েছি, পৃথিবীর উৎপাদনশীলতাকে বোঝা ও বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাঁদের নিয়ে গর্ববোধ করেছি। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত উইলিয়াম নর্ডহাউসের জন্ম ১৯৪১ সালের ৩১ মে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ম্যাক্সিকো অঙ্গরাজ্যের আলবাকার্কে। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন যথাক্রমে প্রখ্যাত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাসাচুসেটস ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে। পিএইচডি পর্যায়ে তার শিক্ষক তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন রবার্ট সোলো। রবার্ট সোলো ১৯৮৭ সালে অর্থনীতিতে অবদানের জন্য নোবেল পেয়েছিলেন। নর্ডহাউস সমকালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির স্টারলিং অধ্যাপক। রাষ্ট্রীয় সুইডিস বিজ্ঞান একাডেমি তাকে সময়ের ব্যাপ্ত পরিসরিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের মধ্যে জলবায়ুর পরিবর্তনকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছে। পিএইচডি পর্যায়ে তাঁর অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল ‘অন্তর্নিহিত প্রযুক্তির পরিবর্তনের এক তত্ত্ব’। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত তার বইয়ের শিরোনাম- ‘বৈশ্বিক সাধারণ উদ্যানের ব্যবস্থাপনা জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থনীতি’। বিশ্বকে তিনি সকল মানুষের ব্যবহার্য উপযোগের সাধারণ উদ্যান বা নিলয় হিসেবে বিবেচনা করেছেন। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থনীতি’। ২০০৮ সালে তাঁর প্রতিপাদ্য বিষয় প্রতিফলিত হয় ‘একটি ভারসাম্যের প্রশ্ন বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বিবেচ্য বিভিন্ন পন্থাসমূহ’ শিরোনামে প্রকাশিত বইয়ে। তাঁর সবচেয়ে নাম করা অবদান স্যামুয়েলসনের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা বিশ্ববিখ্যাত ‘অর্থনীতি’। স্যামুয়েলসনের এককভাবে লেখা ‘অর্থনীতি অবতরনিকামূলক বিশ্লেষণ’ এর পরম্পরায় স্যামুয়েলসন ও নর্ডহাউসের এই অর্থনীতি সম্ভবত অর্থনীতির প্রাথমিক পাঠক্রমে সবচেয়ে বেশি কেনা ও ব্যবহৃত বই। স্যামুয়েলসনের এককভাবে লেখা ‘অর্থনীতি’ ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়ে বছরের পর বছর যথা প্রয়োজন নবায়িত সংস্করণে সারা পৃথিবীতে অর্থনীতি চর্চার সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সবচেয়ে বেশি পঠিত ও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর ১৩তম সংস্করণের পর তার যুগোপযোগী সংস্করণ সম্পন্ন করার জন্য স্যামুয়েলসনের সঙ্গে যোগ দেন অপেক্ষাকৃত নবীন অর্থনীতিবিদ নর্ডহাউস। ১৯৯২-এ স্যামুয়েলসন ও নর্ডহাউসের ‘অর্থনীতি’ পূর্বে প্রকাশিত অর্থনীতির ১৪তম সংস্করণ হয়ে পরবর্তী সকল সংস্করণসহ সকল দেশের সকল অর্থনীতি শিক্ষার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে যুগকালীন পরিবর্তন, বিবর্তন উত্তর প্রত্যয় ও জ্ঞান অববায়িত করে অর্থনীতির সকল অনুশীলন পিপাসুর কাছে প্রথম পাঠ হিসেবে বিবেচিত ও ব্যবহৃত। অর্থনীতির ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে আমার ও সিতারার কাছে এই অর্থনীতির প্রথম পরিচ্ছদের অবতরনিকার শিরোনাম- কার জন্য ওই ঘণ্টা বাজে?-এই পরিণত বয়সেও অর্থনীতির কঠিন প্রতিপাদ্যকে সাহিত্য- মধুর আকর্ষণে উদ্বেলিত করে। আমাদের বইয়ের সংগ্রহশালায় প্রথমে এককভাবে স্যামুয়েলসন প্রণীত ও পরে যৌথভাবে স্যামুয়েলসন ও নর্ডহাউস লিখিত ‘অর্থনীতির’ উভয় অবয়বই এই বিজ্ঞানের পরিচিতি ও ব্যবহারের সবচেয়ে সম্মানিত নিলয় হিসেবে রাখা আছে। ২০১৮ সালের অর্থনীতির যৌথ নোবেল বিজয়ী দ্বিতীয় অর্থনীতিবিদ পল মাইকেল রোমারের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের কলারেডো অঙ্গরাজ্যের ডেনভারে ১৯৫৫ সালের ৬ নবেম্বরে। তাঁর পড়াশোনার পীঠ ছিল পৃথিবী প্রখ্যাত শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাসাচুয়েটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। তিনি শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলিস্থ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় ও রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিনি বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ও জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি পদে কাজ করেছেন। রাজকীয় সুইডিস বিজ্ঞান একাডেমি তাঁকে অর্থনীতিতে নোবেল দেয়ার কারণ হিসেবে সময় ব্যাপ্ত বিশ্লেষণে প্রযুক্তির উদ্ভাবনকে একীভূত করার অবদান উল্লেখ করেছে। তিনি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কিভাবে অর্থনৈতিক শক্তিসমূহ উৎপাদনশীল ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে নতুন ধ্যান-ধারণার জন্ম দেয় এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রবৃদ্ধি প্রসূত করে। তাঁর লেখা এভাবে জন্ম দিয়েছে অন্তর্নিহিত প্রবৃদ্ধি তত্ত্বের। আমি ও সিতারা গর্বের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক শিক্ষক রবার্ট লুকাস রোমারের অভিসন্দর্ভ রচনাকালীন উপদেষ্টা ছিলেন। রোমারের লেখাগুলো বই আকারে এককভাবে বেরোয়নি। তার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে- বিভিন্ন পেশা- অনুগামী পত্রিকায়- যথা আমেরিকান ইকোনমিক রিভিউ, জার্নাল অব ডেভলোপমেন্ট ইকোনমিকস, জার্নাল অব পলিটিক্যাল ইকোনমি ও ইকোনমেট্রিকায়। লুই রিভেরা কটিজসহ যৌথভাবে তাঁর লেখা ‘অর্থনৈতিক একীভূতকরণ ও অন্তর্নিহিত প্রবৃদ্ধি’ প্রকাশিত হয়েছে- ১৯৯১-এ কোয়ার্টালি জার্নাল অব ইকোনমিকসে। এর আগে এই চিন্তাধারার রূপরেখা তিনি প্রকাশ করেছিলেন ১৯৯০ সালের কোয়ার্টালি জার্নাল অব পলিটিক্যাল ইকোনমিতে, ‘অন্তর্নিহিত প্রযুক্তিক পরিবর্তন’ শিরোনামে। রোমার স্মরণীয়ভাবে বলতে চেয়েছেন, বিপর্যয়কে অপচয় করা সঠিক নয়, বিপর্যয় থেকে করণীয় শনাক্ত করা উত্তম। এই সময়কালে দ্রুত প্রবৃদ্ধির মাধ্যম হিসেবে রোমার উন্নয়নশীল দেশের নগরসমূহকে উন্নত দেশ কর্তৃক ব্যবস্থাপনার সনদ দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে উন্নীত করার প্রবক্তা। তাঁর এই প্রবক্তা নব্য উপনিবেশবাদের উপকরণ হিসেবে সমালোচনা আকর্ষণ করে। সমকালীন পর্যায়ে অর্থনৈতির বিশ্লেষণকে দুই প্রধান বিভক্তিতে ভাগ করে মূল্যায়ন করা যায়। এক. ব্যাস্টিক পর্যায়ে মূলত যুক্তিসঙ্গতার ভিত্তিতে উৎপাদন, সঞ্চয় ও ভোগ বিষয়ে সিদ্ধান্তায়নের ভিত্তিতে বাজারকে সৃজন ও সম্প্রসারণ। দুই. সামষ্টিক পর্যায়ে মূলত বাজারকে প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে তার প্রসারণের প্রাকৃতিক ও পদ্ধতিমূলক অবকাঠামো সৃষ্টি ও তার প্রসারণ। এককালের সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার পীঠস্থান সোভিয়েত ইউনিয়নের গর্বাচভ ও ইয়েলতসিনের কাছে সোভিয়েত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ১৯৯০-এ শাটালিন পরিকল্পনার মোড়কে অকপটে বলেছেন যে, মানবজাতি এখন পর্যন্ত বাজার অর্থব্যবস্থা থেকে নিপুণতার কোন কাঠামো বা পদ্ধতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি। এই ২ শতাব্দীর বিবর্তন উৎসারিত অভিজ্ঞানের পর্দায় নর্ডহাউস ও রোমারের চিন্তাধারা, স্বীকার করতে দ্বিধা থাকা সঙ্গত নয়, খুব বেশি মৌলিক দিক বা পরিবর্তন নির্দেশ করে না। তথাপি সুইডিস বিজ্ঞান একাডেমির মূল্যায়ন অনুযায়ী বলা চলে যে, তাঁদের গবেষণা তাৎপর্যমূলক মাত্রায় কিভাবে বাজার অর্থব্যবস্থা, প্রকৃতি ও জ্ঞানের দ্বারা প্রভাবিত হয়, তা ব্যাখ্যা করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের পরিধি বাড়িয়েছে। নর্ডহাউস ও রোমার দ্বয়ের জলবায়ুর সঙ্গে প্রবৃদ্ধিতত্ত্বের সংমিশ্রণ এবং অন্তর্নিহিত প্রযুক্তি উৎসারিত প্রবৃদ্ধির তত্ত্ব সমসাময়িক কালের স্বীকৃতি পেয়েছে। পুরস্কার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞগণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিফলক হিসেবে উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ, বন্যা ও খড়া আমাদের জীবনে যেসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটায়, তার উৎস ও প্রতিক্রিয়া উপশমের জরুরী প্রয়োজনের প্রতি সারা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। একই সময়ে প্রায় ১০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যাংক লেম্যান ব্রাদার্সের পতন উৎসারিত অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও তার বিস্তৃতি এবং এখনও পূর্ণাঙ্গ মাত্রায় অনুপসমিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রতি বিজ্ঞজনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে (দ্রষ্টব্য জাকার্তা পোস্ট, অক্টোবর ৯, ২০১৮)। একই প্রেক্ষিতে ১৭ অক্টোবরে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আহ্বায়িকায় বৈশিষ্ট্যম-িত গ্লোবাল কমিশন অন এডাপটেশনের সম্মেলনে জলবায়ু অভিযোজনে জরুরী ও বিস্তৃত পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ৭-১৬ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বার্ষিক সম্মেলনে প্রবৃদ্ধি তত্ত্বের সংমিশ্রণের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপতা আলোচনায় স্থান পেয়েছে। এই সম্মেলনে উপস্থিত থেকে এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ থেকে অভ্যাগত প্রতিনিধি ও সাংসদদের সঙ্গে আলোচনা ক্রমে আমরা এর প্রাসঙ্গিকতা দেখতে পেয়েছি। সম্মেলনের সপ্তাহ খানেক আগে বালির অদূরে ভূমিকম্প ও সুনামির তা-ব এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞদের তরফ হতে প্রযুক্তিক উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে উৎকর্ষ সমুজ্জ্বল শিক্ষার ওপর জোর দেয়া নর্ডহাউস, রোমারের জলবায়ু ও প্রযুক্তি নিশানায়িত অর্থনীতির বিশ্লেষণ ও তত্ত্বের অবদানকে দৃশ্যমান ও প্রাসঙ্গিক করেছে। আমাদের বইয়ের সংগ্রহশালায় খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, অর্থনীতির জন্ম দিয়েছিলেন ১৭৭৬ সালে এ্যাডাম স্মিথ ‘জাতিসমূহের সম্পদাদি’ প্রকাশিত করে। তারপর ১৮৪৮ সালে জন স্টুয়ার্ট মিল এসেছিলেন ‘রাজনেতিক অর্থনীতির নীতিসমূহ’ নিয়ে। ১৮৮৫ সালে কার্ল মার্কস অর্থনীতির পরিম-লকে বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন তাঁর লিখিত ‘মূলধন’ দিয়ে। এর পরের প্রতিভা- আলফ্রেড মার্শাল প্রকাশ করেছিলেন ‘অর্থনীতির নীতি সমগ্র’ ১৮৯০ সালে। কার্ল মার্কসের ধনতন্ত্রের বিপর্যয়বিষয়ক সূত্রাদি পেছনে রেখে ১৯৩৬-এ এলেন জন মেনার্ড কেইনস তার ‘কর্মসংস্থান, সুদ ও অর্থের সাধারণ তত্ত্ব নিয়ে। ১৯৫৭ এ জোসেফ শুমপেটার তাঁর অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ইতিহাসে এ বলতে চাইলেন সে, যে কোন অর্থব্যবস্থায় অúূর্ণাঙ্গ প্রতিযোগিতা ও বড় বড় কর্পোরেশন প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি উদ্ভাবন ও প্রবৃদ্ধির মূল উৎস হিসেবে কাজ করে। একে ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধির তত্ত্বকে সামনে এনেছিলেন রোজেনস্টাইন রোডান। এরপরে এলেন স্যামুয়েলসন তাঁর ‘অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ভিত্তি’ (১৯৪০) এবং ‘অর্থনীতি- অবতরনিকা মূলক বিশ্লেষণ ’(১৯৪৮)সহ। ১৯৭০ সালে আরেক আমেরিকান অর্থনীতিবিদ রবার্ট সোলো এনেছিলেন তাঁর ‘প্রবৃদ্ধি তত্ত্ব’ নিয়ে। রবার্ট সোলো মূলত এতে উপস্থাপিত প্রবৃদ্ধির প্রকৃতি ও পথক্রমের বিশ্লেষণের বিচারে পেয়েছিলেন ১৯৮৭ সালের অর্থনীতির নোবেল। অর্থনীতির বিকাশের পথে এসব দিকপালের আপেক্ষিকতায় নর্ডহাউস ও রোমার এখনও সর্বগ্রহণীয় মহারথী হয়ত হননি, কিন্তু প্রবৃদ্ধির অন্যান্য অবহেলিত দিক ও উৎসাদির নিরবধি চর্চার পথপ্রদর্শক হয়ে তাঁরা অর্থনীতি জানা ও বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের সন্দিপীত করবেন নিঃসন্দেহে। রাজকীয় সুইডিস বিজ্ঞান একাডেমির ভাষায় তাই এই বছরের অর্থনীতির নোবেল বিজয়ীদ্বয় অর্থনীতির সামগ্রিক প্রশ্নাদির উপসংহারমূলক উত্তর না দিতে পারলেও তাঁদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান আমাদের বিশ্বব্যাপী টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে বলা চলে। ২০১৮-এ অর্থনীতির এই যৌথ নোবেল বিজয়ীদের আবারও জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। লেখক : সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা
×