ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চালু হচ্ছে শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

চালু হচ্ছে শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট

নিখিল মানখিন ॥ দেশের শত শত দগ্ধ রোগীর প্রাণ বাঁচাতে আন্তর্জাতিকমানের ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, দেশে প্রতিবছর গড়ে ৬ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু বিভিন্নভাবে (বিদ্যুতস্পৃষ্ট, আগুনে পুড়ে, রাসায়নিক ও গরম তরল পদার্থে ঝলসে) দগ্ধ হচ্ছে। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে মজবুত অবকাঠামোর পাশাপাশি উচ্চ ডিগ্রীধারী বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। সারাদেশের হাজার হাজার পোড়া রোগীর চিকিৎসার জন্য (এমডি ও এমএস উচ্চ ডিগ্রিধারী) কমপক্ষে দেড় হাজার বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৫২। আগামীকাল বুধবার আন্তর্জাতিকমানের ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের’ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পোড়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হলে অসংখ্য দগ্ধ রোগী স্বল্প খরচে আন্তর্জাতিকমানের চিকিৎসাসেবা পাবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এই ইনস্টিটিউটটির নির্মাণকাজসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়মিত তদারকি করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট নির্মাণের ঘোষণা দেন, যা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের পাশে ১২ তলা এই ইনস্টিটিউটে পোড়া রোগীরা উন্নততর সেবা পাবে। এছাড়া ডাক্তার ও নার্সরা তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ পাবেন। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি সংবলিত এই ইনস্টিটিউটটি চিকিৎসা, গবেষণা ও অধ্যয়নের কেন্দ্রে পরিণত হবে। ৫শ’ শয্যা, ৫০ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ১২ অপারেশন থিয়েটারবিশিষ্ট এই ইনস্টিটিউট বিশ্বের বৃহত্তম বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পরিণত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল এই ইনস্টিটিউটটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং মূল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে ইনস্টিটিউটটি নির্মাণ করেছে। ইনস্টিটিউটটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে আনুমানিক ৫২২ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় আহতদের দেখতে এবং বিরোধী জোটের জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচীর কারণে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখতে বিগত সময়ে কয়েকবার ঢামেক হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে যান। তখনই তিনি এ সংক্রান্ত একটি ইনস্টিটিউট করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। পরিকল্পনা অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে রাজধানীসহ সারাদেশের দগ্ধ রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি উচ্চতর ডিগ্রীপ্রাপ্ত ও গুণগত মানসম্পন্ন বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গড়ে তোলার লক্ষ্যে এটি নির্মিত হয়েছে। জনগণের আর্থিক সামর্থ্যরে মধ্যে উন্নত বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি চিকিৎসাসেবা দেয়াই হবে এর উদ্দেশ্য। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্তলাল সেন জনকণ্ঠকে জানান, দেশে প্রতিবছর গড়ে ৬ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু বিভিন্নভাবে (বিদ্যুতস্পৃষ্ট, অগ্নিশিখা, রাসায়নিক ও গরম তরল পদার্থে ঝলসে) দগ্ধ হচ্ছে। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে উচ্চ ডিগ্রীধারী বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। তিনি জানান, সারাদেশের হাজার হাজার পোড়া রোগীর চিকিৎসার জন্য (এমডি ও এমএস উচ্চ ডিগ্রীধারী) কমপক্ষে দেড় হাজার বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৫২। বর্তমানে সীমিত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেডিক্যাল কলেজে বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে স্নাতকোত্তর এমএস ও মহাখালীর বিসিপিএস (বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এ্যান্ড সার্জনস) এ এফসিপিএস কোর্সে প্রতিবছর হাতেগোনা ২ থেকে ৩ শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। পৃথক ইনস্টিটিউট স্থাপিত হওয়ায় প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১২ উচ্চ শিক্ষার কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। তিনি জানান, আধুনিক বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির রোগীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পৃথক ব্লক থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে পোড়া রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে প্রতিবছর বহির্বিভাগে প্রায় ৩৫ হাজার ও ইনডোরে প্রায় ৬ হাজার রোগী ভর্তি হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বর্তমানে সীমিত পরিসরে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লা, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে বার্ন ইউনিট চালু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা এবং লোকবলের অভাবসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের বার্ন ইউনিট এখনও পোড়া রোগীদের শেষ ভরসাস্থল। বেঁচে থাকার আশায় দগ্ধ রোগীরা প্রতিনিয়ত ভিড় করে এখানে। রোগীর বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় সমস্যায় জর্জরিত এই ইউনিট কর্তৃপক্ষকে। জানা গেছে, া২০০৩ সালে ঢামেক হাসপাতালের ৫০ বেডের বার্ন ইউনিট চালু হয়। সে সময় ৫০ বেডের এ ইউনিটে প্রতিদিন রোগী থাকত দুই শতাধিক। ’১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হরতাল-অবরোধে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখতে গিয়ে বার্ন ইউনিটে রোগীদের চিকিৎসার করুণ অবস্থা দেখে ৫০ বেডের বার্ন ইউনিটকে এক শ’বেডে উন্নীত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে জনবলসহ অন্যান্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিরও ঘোষণা দেন। প্রতিদিন পোড়া রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে। চাহিদার তুলনায় বার্ন ইউনিটের সুযোগ-সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল। এ অবস্থার মধ্যে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শ’ বেডের বার্ন ইউনিটকে ৩শ’ বেডে উন্নীত করার ব্যবস্থা করেন। ৩শ’ বেডের বার্ন ইউনিট হলেও এর জনবল এক শ’ বেডেরই থেকে যায়। ৩শ’ বেডের এ বার্ন ইউনিটে প্রতিদিন চিকিৎসাধীন রোগী থাকে ৫ শতাধিক। আর বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য আসে ২৫০ থেকে ৩শ’ রোগী। হাসপাতালের বেডে রোগীর স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় রোগীদের মেঝেয় রেখে হলেও চিকিৎসা দিতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এখনও রাজস্ব খাতে না যাওয়ায় লোকবল নিয়োগেও এই ইউনিটে রয়েছে নানা সঙ্কট। নেই প্রয়োজনীয় নার্স, ওয়ার্ড বয়সহ প্রয়োজনীয় কর্মচারী।
×