ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তফসিল ঘোষণার আগে সংলাপের বাড়তি ঝামেলার প্রয়োজন নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

তফসিল ঘোষণার আগে সংলাপের বাড়তি ঝামেলার প্রয়োজন নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংলাপের দাবি অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সোমবার রাজধানীর কেআইবি অডিটোরিয়ামে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০১৮ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেতুমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে সংলাপের দাবি অবাস্তব, অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়। দেশে এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে সংলাপে বসতে হবে। নির্বাচনের জন্য যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশ সারাদেশে বিরাজমান। সংবিধান অনুযায়ীই নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, নবেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে। এটা নির্বাচন কমিশনের মোটামুটি সিদ্ধান্ত। তফসিলের আগে ঐক্যফ্রন্ট আলোচনা সংলাপে বসার দাবি জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার জন্য সব মিলিয়ে ১৫ দিনের বেশি নেই। কাজেই তফসিল ঘোষণার আগে এই সময়ে আলাপ, আলোচনা বা সংলাপের দাবি অবাস্তব, অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়। দেশে এমন কোন পরিস্থিতি নেই যে একটা অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেই জন্য সংলাপ করতে হবে। ‘নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ-শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার সেই পরিবেশে সারাদেশে বিরাজমান। কাজেই যেখানে শান্তির পরিবেশ বিরাজমান সেখানে সংলাপের দাবি বাড়তি ঝামেলা। এই সময়ে এ বাড়তি ঝামেলা সৃষ্টি করার কোন যৌক্তিকতা নেই, বাস্তবতাও নেই বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা দাবি করেছেন ৭ দফার ভিত্তিতে আলোচনার। তাদের ৭ দফা ইস্যু নিয়ে আগেও বলেছি, এখনও বলছি এটা অবাস্তব, অযৌক্তিক এবং এর একটা দাবিও মেনে নেয়ার মতো অবস্থা পরিস্থিতি এখন দেশে নেই। সংবিধান বহির্ভূত কোন দাবি মেনে নেয়ার সুযোগ নেই। এমনকি এই মুহূর্তে সংবিধান সংশোধনের কোন সুযোগ নেই। ঐক্যফ্রন্টের সভা-সমাবেশ প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, পুলিশ ইতোমধ্যে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে, দিয়ে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সভা-সমাবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। তবে আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য সভা-সমাবেশের নামে, দাবি আদায়ের নামে বিএনপি যদি ২০১৪ সালের মতো সহিংসতা নাশকতার পথে যেতে চায় তাহলে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা প্রতিরোধ করব এবং পুলিশ প্রশাসন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমুচিত জবাব দেবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সভাপতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মোঃ মশিউর রহমান রাঙ্গা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ একাব্বর হোসেন, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ইকরামুল হাসান, নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম প্রমুখ। নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে সকাল ১০টায় র‌্যালি বের হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের র‌্যালি উদ্বোধন করেন। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চনসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিকসহ সাধারণ মানুষ এতে অংশ নেন। সরকার ২২ অক্টোবরকে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে ২০১৭ সালের ৫ জুন মন্ত্রিপরিষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস করেন। এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো দেশব্যাপী সরকারীভাবে ২২ অক্টোবর ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী বিভিন্ন সংগঠন কর্মসূচী পালন করে। তবে সড়ক পরিবহন আইন পাস করায় এবার পরিবহন মালিক শ্রমিকদের একটি অংশ কর্মসূচী বর্জন করেছে। সড়ক দিবসের আলোচনায় দুর্ঘটনাসহ সড়কের বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘নিজেকে কেউ সফল মন্ত্রী বলে প্রশংসা করলে মনে মনে সত্যিই কষ্ট পাই। আমি বেদনার অঙ্কুরে বিদ্ধ হই, মনে মনে একটু কষ্ট পাই, সঙ্গে লজ্জাও। কারণ এখনও সড়কে মৃত্যুর কাফেলা থামছে না, অনিয়মের কাফেলা থামছে না, বিশৃঙ্খলার কাফেলা থামছে না।’ তিনি বলেন, আমরা যত কিছুই করি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে না পারলে কোন কাজে আসবে না। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যতটা ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যা এবং এনফোর্সমেন্টের সমস্যা, তার চেয়ে বেশি সচেতনতা। সচেতনতা বাড়ানোর প্রক্রিয়াটাতে আমরা খুব এগোতে পারিনি। আমাদের রাস্তায় যানজট-জলজট-জনজট এই তিনটি যখন মিলে-মিশে একাকার হয়ে যায়, তখন সেই দৃশ্যপটটা অস্বাভাবিক একথা উল্লেখ করে সড়ক মন্ত্রী বলেন, কাজেই আমাকে যখন কেউ সফল মন্ত্রী বলেন, আমার প্রশংসা করতে চায় আমি মনে মনে সত্যি বেদনার অঙ্কুরে বিদ্ধ হই, মনে মনে একটু কষ্ট পাই, সঙ্গে লজ্জাও পাই। কারণ আমার চোখের সামনে যখন বিশাল একটা যানজট। যখন দেখি এই শহরে যানজটের মধ্যে আটকে আছে নারী, শিশু ও মুমূর্ষু রোগী। অনেককে হয়ত রাস্তাতেই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হয়, লম্বা যানজটের কারণে। এসব কবে বন্ধ করতে পারব?’ ঢাকার পথচারীদের দখল হওয়া ফুটপাথ ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আসুন ঢাকার মানুষকে ফুটপাথ ফিরিয়ে দেই। তিনি বলেন, দেখা যায় সামান্য একটা গাড়ি এ্যাকসিডেন্ট হয়েছে, সেখানে চালকের দোষ নাকি পথচারীর দোষ সেটা পরে দেখা গেল, কিন্তু হাজার হাজার গাড়ি লম্বা যানজটের সারি। পথে পথে মানুষের কি যে অবর্ণনীয় কষ্ট। ‘সড়কে অনিয়মের কাফেলা চলমান একথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এখানে আমাদের দগদগে ব্যর্থতা। আমি মন্ত্রী, আমি এর দায় এড়াতে পারি না। পুরোপুরি সাফল্যের কৃতিত্বের দাবিদারও আমি নই। আমাদের এত কিছু করার পরও অনেক দূর পথ পাড়ি দিতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়কে-মহাসড়কে থ্রি হুইলার এখনও চলছে। আমরা কন্ট্রোল করতে পারিনি। আমরা ২২টি সড়কে এসব বন্ধের ঘোষণা করার পরও কন্ট্রোল করতে পারিনি। মঞ্চে উপস্থিত নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের প্রতি উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি আমরা সচেতন না হলে দেশ সচেতন হবে না। দেশকে বদলাতে হলে, সড়ক পরিবহনের যে বিশৃঙ্খলার ছবি সেটা পরিবর্তন করতে হলে বা বদলাতে হলে আমাদের বদলাতে হবে আগে। আমরা না বদলালে দেশ বদলাবে না। আমরা নিজেরা আইন করি আমরাই আইন ভঙ্গ করি। মোটরসাইকেল সড়কে নতুন আতঙ্ক উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সবার প্রচেষ্টায় একটা চিত্র পাল্টে গেছে। আগে যেখানে একজনও হেলমেট পড়ত না এখন সেখানে মোটরসাইকেলের দু’জনই হেলমেট পড়ছে। আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রত্যেককে একটা করে গোলাপ দিয়ে শুভেচ্ছা জানাই। সড়ক দুর্ঘটনার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, দুর্ঘটনার জন্য বাস-ট্রাকের চালক যতটা না দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী মোটরসাইকেল। এই মোটরসাইকেলের কারণেই দুর্ঘটনা বাড়ছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি ॥ নিরাপদ সড়কের জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার চেয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। আগামী দিনে সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কী কী পদক্ষেপ নেয়া হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান। তিনি জানান, প্রতিদিন সড়কে মৃত্যুর মিছিল চলছে। এই মিছিল থামানো জরুরী। যতদিন প্রশিক্ষিত চালক, ত্রুটিমুক্ত সড়ক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ হবে না, ততদিন নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত হবে না। যাত্রী সচেতনতা, ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করে সড়কে মৃত্যৃর মিছিল থামানো না গেলে নিরাপদ সড়ক দিবস পালনের মর্মার্থ নেই। তাই সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় পরিবহন মালিক, শ্রমিক, সরকার ও যাত্রী সাধারণের সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা আজ অত্যন্ত জরুরী। বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, সদ্য অনুমোদিত সড়ক আইনে যাত্রী সাধারণের প্রতিনিধিত্ব না রাখায় শুধু মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সড়ককে আরও অনিরাপদ করে তুলবে। সড়কে হত্যা ও বিশৃঙ্খলা বন্ধ না হলে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাধাগ্রস্ত হবে।
×