ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সঙ্গে রাজনীতি করেন মইনুল হোসেন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সঙ্গে রাজনীতি করেন মইনুল হোসেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি আরও বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন রাজনৈতিকভাবে চরিত্রহীন একজন মানুষ। তিনি ’৭৫-এ জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যাকারীদের রাজনৈতিক দল ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। এদিকে, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। ওই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে। সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নিজ দফতরে ঢাকায় নিযুক্ত বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। ওই সভা শেষে সাংবাদিকদের যৌথ ব্রিফিং করেন বাণিজ্যমন্ত্রী ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল রাজনৈতিকভাবে চরিত্রহীন একজন মানুষ। তিনি শিক্ষিত হয়ে একজন নারী সাংবাদিককে চরিত্রহীন বলেছেন। এটা তিনি বলতে পারেন না। এটা বলার কারণে দেশের মানুষ তাকে ধিক্কার জানাচ্ছে। তিনি বলেন, জাতির জনককে হত্যা করার পর ব্যারিস্টার মইনুল বঙ্গবন্ধুর খুনী খন্দকার মোস্তাকের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট করেছিলেন। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রাজনৈতিক দল ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে রাজনীতি করেন। শুধু তাই নয়, ব্যারিস্টার মইনুল ২০০৫ সালে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের অনুষ্ঠানে গিয়ে সেই দলের ও কর্মীদের প্রশংসা করেছিলেন। যে লোক ’৭১-এর খুনী, লুণ্ঠনকারী, ধর্ষকদের প্রশংসা করতে পারে, ’৭৫-এর খুনীদের সঙ্গে রাজনৈতিক আঁতাত করতে পারে, সে অবশ্যই রাজনৈতিক ভাবে চরিত্রহীন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জামায়াতের অনুষ্ঠানে গিয়ে শিবিরের প্রশংসা করার বিষয়ে ব্যারিস্টার মইনুলকে প্রশ্ন করাতেই তিনি সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলেছেন। ব্যারিস্টার মইনুল একজন ব্যারিস্টার ও শিক্ষিত মানুষ হয়ে একজন সম্মানিত নারী সংবাদকর্মীকে যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তা নিন্দনীয়। এ ঘটনায় দেশে ৫৫ জন সম্পাদক নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। দেশের সর্বত্র নিন্দার ঝড় বইছে। যারা একাত্তরে নারী ধর্ষণসহ মা-বোনের কোল খালি ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করল, তাদের প্রশংসা করেছিল মইনুল। এই প্রশ্নটাই টিভি টকশোতে মাসুদা ভাট্টি তাকে করেছিলেন। তবে তার এই উক্তির মধ্য দিয়ে মইনুল হোসেনক এতটা মানুষ জানতে পেরেছে। সাংবাদিক মহলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাকে টকশোতে না নেয়ারই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সারা বাংলাদেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। সুতরাং তার সম্বন্ধে আর বলার কিছু নেই। তোফায়েল আহমেদ বলেন, মইনুলদের মতো লোকদের নিয়ে ঐক্য করেছে বিএনপি। এ থেকে বোঝা যায় বিএনপির অবস্থাটা কি হবে। আগামী ভোটের মাধ্যমে রাজনৈতিভাবে চরিত্রহীনদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। আগামী সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তারিখে যথাসময়ে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সেই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করছি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কোন দলকে নির্বাচন থেকে আমরা বাদ দিতে চাই না। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কী করবে না সেটা সেই দলের সিদ্ধান্ত। যেমন-১৯৭০ সালে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার অর্থাৎ পাকিস্তানের সামরিক শাসক কর্তৃক ঘোষিত এলএফওএ’র অধীনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নির্বাচন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সেই সময় বলা হয়েছিল নির্বাচন করে লাভ নেই। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, আমি ক্ষমতার জন্য নির্বাচনে যাচ্ছি না। আমি মানুষের প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য নির্বাচনে অংশ নেব এবং নিয়েছিলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলেন। সেজন্যই আমরা আজ স্বাধীন। কিন্তু বাংলাদেশের বিখ্যাত জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী নির্বাচন করেননি। কিন্তু সেজন্য নির্বাচন যে অংশগ্রহণমূলক হয়নি একথা কেউ বলতে পারেনি। সুতরাং কোনো দল যদি নির্বাচনে না যায় সেটা তার দায়িত্ব। তোফায়েল আহমেদ বলেন, মওলানা ভাসানীর দল কিন্তু এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আমার তো মনে হয় বিএনপি উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তারা ভুল করেছে। ড. কামালের নেতৃত্বে যে ঐক্যজোট গঠিত হয়েছে তা আগামী নির্বাচনের জন্যই এটি গঠিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি যদি সংবিধানের মধ্যে থাকি তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার তো কোন কারণ নেই। কেউ যদি না আসে তাহলে কারো জন্য নির্বাচন থেমে থাকবে না। গত ২০১৪ সালের নির্বাচন থেমে থাকেনি। সেটাও বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু পারে নাই। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সবাই নির্বাচনে আসবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কেনিয়াতে নির্বাচন হয়েছে। সেখানেও বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। কিন্তু কোন সমস্যা হয়নি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বিএনপি কামাল হোসেনের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্যই ঐক্য করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠকে গ্রেফতার প্রসঙ্গ আসে, বাণিজ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন-সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। বার্নিকাট বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিশীলতা চায় না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভাল, আমাদের আমদানি-রফতানি বাড়ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র আশা করে আগামী নির্বাচন বেশিরভাগ দলের অংশগ্রহণে, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এতে এদেশের অর্থনীতির যে অগ্রযাত্রার গল্প গত কয়েক বছরে লেখা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে। বার্নিকাট আরও বলেন, যেকোন দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে সে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচালিত গণতান্ত্রিক শাসনের ওপর। তিনি বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য গ্রহণযোগ্য বিরোধী দলের অংশগ্রহণ দরকার। এজন্য সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সব দল নির্বাচনে না এলে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। এজন্য ভোটারদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়ীক অংশীদার। তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে এখন তিনশ’য়ের বেশি গ্রীন ফ্যাক্টরি রয়েছে। বিশে^র একনম্বর ডেমিন ফ্যাক্টরি এখন বাংলাদেশে। নিরাপদ ও কর্মবান্ধব পরিবেশে এখন শ্রমিকরা কারখানায় কাজ করছে। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ্যাকর্ড এবং এ্যালায়েন্সের মেয়াদ শেষ, বাংলাদেশ এখন নিজেই করাখানা নিরাপদ রাখতে সক্ষম। নিজ ব্যবস্থাপনায় কারখানার তদারকি করবে। গত অর্থবছর বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫ হাজার ৯৮৩.৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে, একই সময়ে আমদানি করেছে ১ হাজার ৭০৩.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য।
×