ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. কামালের দাবি তারেক এবং জামায়াতের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

ড. কামালের দাবি তারেক এবং জামায়াতের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য কোন বিশেষ নেতার প্রতি সমর্থন হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগকে দেখার সুযোগ নেই। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। কামাল হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি দেয়া হয়েছে। আমরা সেই দাবিগুলোর প্রতি সঙ্কল্পবদ্ধ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে কাজ করে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত দলগুলোর মধ্যে কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কামাল হোসেন বলেন, ‘যারা ক্রমাগতভাবে আমার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ, ভিত্তিহীন ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলছেন, তাদের আমি এ বিষয়ে স্পষ্ট করে দিতে চাই যে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বা কোন রাষ্ট্রীয় পদ পাওয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই। একটি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুমাত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমি কাজ করে যাব। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, দলীয়ভাবে বিএনপি আমাদের জোটে আছে। এটা শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি জোট। এর বাইরে আর কোন সম্পর্ক নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই দাবি করে তিনি বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য জনমত গঠনকে গুরুত্ব দিচ্ছি। একটি অবাধ নির্বাচনের জন্য সব নাগরিক যেমন অবদান রাখতে পারে, সেটাই আমরা তুলে ধরব। সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম সুষ্ঠু নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক প্রমুখ। কামাল হোসেন বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী আমরা নির্বাচন দাবি করছি না। বর্তমান সংবিধান সংশোধিত। এই সরকার সংশোধন করেছে। সংশোধনীর আগে সংবিধান যে অবস্থায় ছিল সেই অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা সরকারকে করতে হবে। কামাল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, মন্ত্রিসভার পদত্যাগ, সকল দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় নির্বাহী বিভাগ, সরকার গঠন, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেয়া, বাক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করা, জনগণের আস্থা আছে এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা এই ৭টি দাবি সরকারের কাছে করে আসছি। এই দাবি মেনে নেয়া হবে সরকারের শুভ বুদ্ধির পরিচয়। তিনি বলেন, আমি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। অথচ আমাদের এই ৭ দফা দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জাতীয় পর্যায়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যে পৌঁছেছি। যার ফলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ড. কামাল হোসেন বলেন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয় দেশের নাগরিকরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, জনমত গড়তে আগামীকাল (মঙ্গলবার) সিলেট যাব, তারপর চট্টগ্রাম রাজশাহী খুলনা সফর করা হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে একটি সার্চ কমিটির মধ্য দিয়ে। ওখানে আপনারও মতামত ছিল। এখন কেন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের কথা বলছেন? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের সততা নিরপেক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে সেজন্যই এই দাবি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে রাজনৈতিক মোর্চা গঠন করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ কামাল হোসেন। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি করে বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে বিএনপির সঙ্গে হাত মেলান তিনি। গঠন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যদিও বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়ে জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন কামাল হোসেন। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কোন প্রকার শর্ত ছাড়াই হাত মেলান তিনি। জামায়াত ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জোট করতে রাজি হয়নি বিকল্পধারা। এরপর থেকেই কামাল হোসেনকে নিয়ে রাজনীতির ময়দানে নানা আলোচনা সমালোচনা। এমন বাস্তবতায় নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতেই গণফোরামের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন কামাল হোসেন।
×