ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইমরুল-সাইফউদ্দিনের রেকর্ড জুটি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২২ অক্টোবর ২০১৮

 ইমরুল-সাইফউদ্দিনের রেকর্ড জুটি

মিথুন আশরাফ ॥ কি বিপদেই না পড়েছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১৩৯ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসেছিল। মনে হচ্ছিল কি দুঃসহ দিনটির দেখা মিলতে যাচ্ছে। কিন্তু ওপেনার ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন মিলে এমনই খেলা দেখালেন, জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটাররা শুধু তা অপলক দৃষ্টিতে দেখতেই থাকলেন। বিপদে পড়া দলকে টেনে তুলে এমন একটা অবস্থানে দাঁড় করালেন ইমরুল ও সাইফউদ্দিন, জিম্বাবুইয়েই উল্টো বিপদে পড়ে থাকল। দুইজন মিলে ১২৭ রানের জুটি গড়লেন। যা সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড জুটি। ইমরুল তো অসাধারণ ইনিংস খেললেন। সদ্য সন্তানের বাবা হওয়া ইমরুল ঝলক দেখালেন। ক্যারিয়ার সেরা ১৪৪ রানের ইনিংসই শুধু খেললেন না দলকেও বাঁচালেন। দলের ২৬৬ রানের সময় গিয়ে আউট হলেন। তখন বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতে ৮ বল বাকি। ১৩ চার ও ৬ ছক্কায় ইমরুল এত সুন্দর ইনিংস সাজান। সাইফউদ্দিনের সঙ্গে ইমরুলের জুটি ভাঙ্গে ২৬৬ রানে। একেক ব্যাটসম্যান ১৩৯ রান পর্যন্ত আউট হতে থাকেন। কিন্তু ইমরুল প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। সুযোগ বুঝে বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। ১১৮ বলে গিয়ে সেঞ্চুরিও করেন। আর সাইফউদ্দিন সমান তালে ইমরুলের সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৬৮ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন। রুবেল হোসেনের পরিবর্তে সুযোগ পেয়ে নিজের ব্যাটিং দক্ষতা জানান দেন এ পেস অলরাউন্ডার। শেষ পর্যন্ত ৫০ রান করেন সাইফউদ্দিন। ২০১০ সালে ডানেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে মুশফিকুর রহীম ও নাঈম ইসলাম মিলে ১০১ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েছিলেন। রবিবার সেই জুটিকে পেছনে ফেলে আরও বড় জুটি গড়েন ইমরুল ও সাইফউদ্দিন। এ দুইজনের রেকর্ড জুটিতে ৮ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৭১ রানও করে বাংলাদেশ। রুবেল হোসেন জ্বরের জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে খেলতেই পারেননি। সঙ্গে আরিফুল হক, আবু হায়দার রনিকে বরাবরের মতো একাদশের বাইরে রাখা হয়। এশিয়া কাপে টানা তিন ম্যাচ খেলা নাজমুল হোসেন শান্তকেও একাদশের বাইরে রাখা হয়। ৩০ বছর বয়সী ফজলে মাহমুদ রাব্বিকে এবার প্রথমবারের মতো দলে নেয়া হয়। এ স্পিন অলরাউন্ডারকে অভিষেকও করানো হয়। যেহেতু রুবেল খেলতে পারেননি। তাই পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে খেলানো হয়। অভিষেকটি স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি রাব্বি। সবার আশা ছিল, ৩০ বছরে গিয়ে দলে সুযোগ পেয়ে রাব্বি কিছু একটা করবেন। তাতে করে ঘরোয়া লীগগুলোতে খেলা বয়স্ক ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখবেন। কিন্তু রাব্বি রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন। ১৭ রানে রাব্বি আউট হওয়ার আগেই অবশ্য একাধিকবার আউট হওয়া থেকে বাঁচা ওপেনার লিটন কুমার দাস আউট হয়ে যান। এশিয়া কাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করার পর জাতীয় ক্রিকেট লীগে নেমেই ডাবল সেঞ্চুরি করেন লিটন। কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে ৪ রানের বেশি করতে পারেননি। দ্রুতই ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দল নিজেদের ৩৫০তম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমে বিপদেই পড়ে যায়। এতটাই চাপে পড়ে যায় যে ১০ ওভারে গিয়ে ৩৯ রানের বেশি করতে পারেনি। পাওয়ার প্লে’ও কাজে লাগান যাচ্ছিল না। ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহীম মিলে সেই চাপ সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। দুইজন মিলে ভালভাবেই এগিয়ে যেতে থাকেন। কোন ঝুঁকি নেননি। কিন্তু চলার পথে আসে আবারও বাধা। সেই বাধা আরও মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। মুশফিকের মতো ব্যাটসম্যান যে দলের ৬৬ রানের সময় আউট হয়ে যান। যখনই দল বিপদে পড়ে তখন মুশফিক উইকেটে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান। কিন্তু এদিন ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি। তার আউটে দল যে খাদের কিনারাতেই পড়ে যায়। সেই খাদ থেকে দলকে টেনে তোলার কাজটি করেন ইমরুল ও মিঠুন। ইমরুল দেখতে দেখতে ক্যারিয়ারের ১৬তম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলেন। এশিয়া কাপে হঠাৎ করে ডাক পান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নেমেই ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। দলের বিপদের সময় অভিজ্ঞতার ঝলক দেখান। দেশের মাটিতে দুইবছর পর আবার ওয়ানডে খেলতে নেমে নিজেকে মেলে ধরেন। ইমরুল ব্যাট হাতে হাল না ধরলে বিপদ আরও বাড়ত। ইমরুলের সঙ্গে ব্যাট হাতে নেমে মিঠুনও সমানতালে এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে মুহূর্তেই ৫০ রানের জুটি গড়ে ১০০ রানের জুটি গড়ার দিকেও চলতে থাকেন। কিন্তু জুটি যখন ৭১ রানে যায় তখনই ৩৭ রান করা মিঠুনকে আউট করে দেন জার্ভিস। তার বাউন্সারে সাজঘরে ফেরেন মিঠুন। মহূর্তেই মাহমুদুল্øাহ রিয়াদ ও মেহেদী হাসান মিরাজও একই পথের পথিক হন। ১৩৭ থেকে ১৩৯; এই ৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেটের পতন ঘটে যায়। জার্ভিসই এই তিনটি উইকেট শিকার করেন। তাতে করে বাংলাদেশও ৬ উইকেট হারিয়ে বসে। ২০০ রান হবে কিনা এ নিয়েই তখন ভয় তৈরি হয়ে যায়। এমনই খারাপ অবস্থা হয়, যেন পুরনো বিধ্বস্ত বাংলাদেশকেই দেখার মিলে। এই সময়ের মধ্যে লিটন ছাড়া বাকি পাঁচ ব্যাটসম্যানই উইকেটের পেছনে আউট হয়ে আসেন। এরপর ইমরুল-সাইফউদ্দিন মিলে সব ধারণাই পাল্টে দেন। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আনেন ম্যাচ। বিপদে পড়া দলকে মুক্ত করেন। যেখানে ২০০ রান হবে কিনা সেই শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেখানে আড়াই ’শ রানও হয়ে যায়। ইমরুল তো ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি করার পর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসই খেলেন। সঙ্গে সাইফউদ্দিনও ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন। নয় মাস পর আবার জাতীয় দলে ফিরে দেখান ঝলকানি। দুইজন মিলে ১০০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। দেখতে দেখতে জুটি ১২৭ রানেও চলে যায়। সপ্তম উইকেটে রেকর্ড জুটিও হয়। ২৬৬ রানে গিয়ে ১৪৪ রান করা ইমরুলের আউটে জুটি ভাঙ্গে। কিছুক্ষণ পর সাইফউদ্দিনও হাফ সেঞ্চুরি করে সাজঘরে ফেরেন। তবে ততক্ষণে দল ২৬৭ রান করে ফেলে। শেষ পর্যন্ত মাশরাফির ২ ও মুস্তাফিজের ১ রানে ২৭১ রান করে। ম্যাচটিতে যেভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছিল বাংলাদেশ, ইমরুল-সাইফউদ্দিন মিলে হাল না ধরলে অবস্থার কোন উন্নতি হতো না। কিন্তু সঠিক সময়ে দলের হাল ধরে রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে বাঁচান ইমরুল ও সাইফউদ্দিন।
×