ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে গতি আসছে

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ২২ অক্টোবর ২০১৮

 স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে গতি আসছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনটি স্থলবন্দর নির্মাণ করবে সরকার। এ লক্ষ্যে খাগড়াছড়ির রামগড়ে চলছে দেশের ২৩তম স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ। এ ছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কর্ণফুলী, চেংগি, মাতামুহুরি, সাঙগু, কাচালং, মাইনি, ইছামতি, হালদা ও ফেনী নদী খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার নদীর সীমানা নির্ধারণ এবং নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য এ খনন কাজ পরিচালিত হবে বলে জানা গেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের স্থলবন্দর থেকে আয় হয়েছে ১৪৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ ছিল ১১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এক বছরে স্থলবন্দরগুলোর আয় বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। দেশে বর্তমানে ২৩টি স্থলবন্দর আছে। এর মধ্যে ১২টিতে আমদানি-রফতানি হয়। বাকিগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে শুল্ক স্টেশন হিসেবে। ভারতের সঙ্গে প্রায় ৯৮ ভাগ পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। মিয়ানমারের সঙ্গে হয় ২ শতাংশ। বাংলাদেশ স্থলবন্দর সূত্র জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই স্থলবন্দর দিয়ে গত জুন মাসে মিয়ানমার থেকে ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ১৪ হাজার টাকার পণ্য আমদানি হয়। এছাড়া শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দিয়ে ৭ হাজার ৭১৮টি গরু, ২ হাজার ৮৫৭টি মহিষ আমদানি করা হয়। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে ৯৫ লাখ ৪২ হাজার টাকার পণ্য রফতানি হয়েছে। স্থলবন্দরের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে খালাস হওয়ার অপেক্ষায় থাকা পণ্যের জন্য শেড ও ইয়ার্ড ভাড়া, প্রবেশ মাসুল, ওজন মাপার মাসুল, শ্রমিক মজুরি, দলিল প্রক্রিয়াকরণ মাসুল ইত্যাদি। টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জুন মাসে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে পণ্য আমদানি কম হয়। এরপর রাজস্ব আয়ে আবারও গতি ফিরে এসেছে। পণ্য আমদানি-রফতানিতে ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী জানান, গত কয়েক বছরে স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়ায় এর সক্ষমতা বেড়েছে। এতে কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিত হওয়ায় দ্রুত পণ্য খালাস হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও বেড়েছে। মূলত এসব কারণে স্থলবন্দরগুলোর আয় বাড়ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্থলবন্দর থেকে ১৬৫ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর স্থাপনে উদ্যোগী হয়। বর্তমানে ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণ কাজ চলছে। জানা গেছে, রামগড় পৌরসভার মহামুনি ও অপরদিকে সাবরুমের আনন্দপাড়া এলাকা থেকে ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ দশমিক আট মিটার প্রস্থের সংযোগ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ জন্য ভারত সরকারের খরচ হচ্ছে ১১০ কোটি রুপী। মহামুনিতে স্থলবন্দর ঘিরে বন্দর টার্মিনাল, গুদাম ঘরসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। রামগড় সড়ক বিভাগের প্রকৌশলী মুসলেহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রামগড় স্থলবন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর সংযোগ সড়ক (রামগড়-বারৈয়ারহাট) চার লেনে রূপান্তরের কাজ চলছে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে। ত্রিপুরার আগরতলা থেকে সাবরুম পর্যন্ত রেললাইনের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। আরও ২ স্থলবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ ॥ রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরের উপজেলা বরকল। এখানে তেগামুখ স্থলবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত হবে ভারতের দেমাগ্রী ও মিজোরাম শুল্কবন্দর। এছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে আরেকটি স্থলবন্দর নির্মাণ করা হবে। বন্দরটির উত্তরে লামা ও আলিকদম উপজেলা এবং দক্ষিণপূর্বে মিয়ানমার। বন্দরগুলোর কার্যক্রম শুরু হলে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
×