ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উদ্যোগ

ক্রেতা ঠকানো রোধে চালু হচ্ছে ‘ওজনবন্ধু’ সেবা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২২ অক্টোবর ২০১৮

 ক্রেতা ঠকানো রোধে চালু হচ্ছে ‘ওজনবন্ধু’ সেবা

ওয়াজেদ হীরা ॥ রাজধানীসহ দেশের বাজারগুলোতে নানাভাবে ক্রেতাদের ঠকিয়ে থাকে অসাধু বিক্রেতারা। একদিকে বিভিন্ন অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়ানো হয় আবার অন্যদিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেয়া হয় ওজনে কম। এমন পরিপ্রেক্ষিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ কাঁচাবাজারের বিভিন্ন দ্রব্যের ওজনে চুরি ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অধিদফতর নতুন সেবা চালু করতে যাচ্ছে যার নাম দেয়া হয়েছে ‘ওজন বন্ধু’। আর এর মাধ্যমে ওজনে প্রতারণা ঠেকানো, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনাতে পারবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অধিদফতরের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে ভোক্তারাও। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পণ্য ক্রয়ের পর বিশ্বস্ত কোন দোকানে তা পুনরায় ওজন করলে দেখা যায় পরিমাণ কম থাকে। এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও বিক্রেতাদের কাছে অসহায়বোধ করেন ক্রেতারা। আবার অন্যদিকে বিশেষ কৌশলে ডিজিটাল স্কেলে চুরির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের মুনাফাও হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এই অবস্থায় চুরি ঠেকাতে ভোক্তা অধিদফতরের নতুন পদ্ধতির এই নাম দিয়েছেন ‘ওজন বন্ধু’। এ মেশিনে ওজন করলেই সঠিক মাপে পণ্য কিনতে পারবে ক্রেতারা। এর আগে মুরগি ও মাছের দোকানগুলোতে ডিজিটাল স্কেলে ওজনে কম দেয়া হচ্ছিল। আর সেই সুযোগের মূল কারণ হচ্ছে, এসব ভোগ্য পণ্য ওজনের পর বিক্রেতা নিজেই তা জবাই করে কেটে-কুটে পরিষ্কার করে দেয়। ফলে ওজনে কম দেয়ার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাচাই করার সুযোগ থাকে না ক্রেতাদের। একই অবস্থা গরু, খাসি, ফল, তরিতরকারির দোকানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ‘ওজন বন্ধু’ সেবা চালু করা হবে। ভোক্তারা বাজার থেকে পণ্য কিনে সেখানেই ওজন যাচাই করতে পারবেন। আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে প্রাথমিকভাবে রাজধানীতে এবং পরে পর্যায়ক্রমে অন্য এলাকার বাজারগুলোয় এ সেবা চালু করতে চায় অধিদফতর। ভোক্তা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের দৃষ্টি হয়েছে ভোক্তারা কাঁচাবাজারে গিয়ে নানাভাবে প্রতারিত হয়। বিশেষ করে ওজনে কম দেয়া হরহামেশাই হচ্ছে। সঠিক ওজনে যাতে ভোক্তারা পণ্য কিনতে পারে সেই চিন্তা মাথায় রেখেই ভোক্তা অধিদফতর ‘ওজন বন্ধু’ নামে এ মেশিন বাজারে নিয়ে আসছে। ডিসেম্বর মাস থেকেই চালু হবে এই সেবা। প্রাথমিক পর্যায়ে রাজধানীর বড় ১০টি বাজারের সামনে থাকবে। পর্যায়ক্রমে পুরো দেশেই ছড়িয়ে পরবে ‘ওজন বন্ধু’। শুধু কাঁচাবাজার নয় এ মেশিন থাকবে কনজুমার মলগুলোর সামনেও। তিনি আরও বলেন, একজন ক্রেতা পণ্য কিনে এই ওজন বন্ধুতে মেপে দেখে কম হলে সঙ্গে সঙ্গে দোকানদারের কাছে যেতে পারবে। বাজার কমিটি বিষয়টি খেয়াল রাখবে। এছাড়াও প্রতিটি ওজন বন্ধুর পাশে একটি করে অভিযোগ বক্স থাকবে। কোন ভোক্তা ওজনে কম পেলে অভিযোগও করতে পারবেন। ভোক্তা অধিদফতরের এই কর্মকর্তা আরও জানান, এটি চলাকালে নানা ধরনের ব্রান্ডিং থাকবে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার করা হবে। ইতোমধ্যেই কারওয়ান বাজার ও নিউমার্কেট বাজারে এ বিষয়ে বাজার কমিটির সঙ্গে কথা হয়েছে এবং বাজার কমিটি এই পদ্ধতিকে সাধুবাদ জানিয়েছে বলেও জানান তিনি। রাজধানীর একাধিক বাজার কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, ভোক্তাদের সুরক্ষায় এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে অহেতুক হয়রানি যেন না করা হয় সেটিও খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তারা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা গৃহিণী মাহমুদা খানম জনকণ্ঠকে বলেন, কোন পণ্যে বিক্রেতারা একটু এদিক সেদিক করলেও আমরা বুঝতে পারি না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এ সিদ্ধান্ত খুবই ভাল সিদ্ধান্ত। আমরা মনে কোন সন্দেহ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ওজন দিতে পারব। একই বাজারে তরিকুল হাসান বলেন, সব ব্যবসায়ী হয়তো প্রতারণা করে না। তবে যারা করে সেটা আমরা ধরতেও পারি না। নীরবে ঠকে যাই। আর কাঁচা পণ্য এমন যে রসিদ না থাকায় মামলাও করা যায় না। এটি হলে আমরা নিজেদের প্রয়োজনে পণ্য কিনে আবার যাচাই করতে পারব। এতে করে আমরা ঠকব না। বিভিন্ন বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারাও স্বীকার করেন কখনও কখনও একটু ভুল হয়। এ বিষয় কারওয়ান বাজারের নিত্যপণ্য বিক্রেতা সোবাহান আলী জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা ক্রেতাদের ইচ্ছা করে ঠকাতে চাই না। তবে ভুল হয় না সেটাও বলব না। একটু এদিক-ওদিক হয়ে যেতেও পারে।
×