ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব-তামিমকে ছাড়া প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিরিজ

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২১ অক্টোবর ২০১৮

সাকিব-তামিমকে ছাড়া প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিরিজ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বাংলাদেশ দল বর্তমানে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম অবদান হিসেবে ধরা হয় পঞ্চপা-বের উপস্থিতি। মাশরাফি বিন মর্তুজা, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। তারা হয়ে গেছেন দেশের ক্রিকেটের অন্যতম অপরিহার্য খেলোয়াড়। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে অন্যতম ভরসা তামিম ও অলরাউন্ডার সাকিবকে ছাড়া দেশের ক্রিকেটের সাফল্য খুঁজে পাওয়াটাই কঠিন। এ দু’জনকে ছাড়া কখনও কোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বা টুর্নামেন্টের পুরোটাই খেলতে হয়নি বাংলাদেশ দলকে। এবারই প্রথম এমন ঘটনা ঘটতে চলেছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের ঘোষিত দলে নেই সাকিব ও তামিম। তাদের ছাড়াই আজ প্রথম ওয়ানডে খেলতে হবে এবং পুরো ওয়ানডে সিরিজেই থাকবেন না তারা। পরপর দুই বছরে (২০০৬ ও ২০০৭) সাকিব ও তামিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু। খুব দ্রুতই নিজেদের উজ্জ্বল পারফর্মেন্সে দলের অপরিহার্য ক্রিকেটারে পরিণত হন দু’জনই। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে সাকিব অনেকবারই জিতিয়েছেন বাংলাদেশকে। তামিমের অবদানও অনেক জয়ের অন্যতম ভূমিকা হিসেবে দেখা গেছে। গত একযুগে বাংলাদেশ ক্রিকেটে যত সাফল্য তার অর্ধেকের বেশিই ছিল এ দু’জনের উজ্জ্বলতর নৈপুণ্যের কারণে। অভিষেকের পর থেকে ইনজুরি ব্যতীত বাজে নৈপুণ্যের কারণে তাদের দল থেকে বাদ পড়ার নজির নেই। ইনজুরি ও পারিপার্শ্বিক কারণে নিজেদের ক্যারিয়ারে বেশ কিছু ম্যাচ মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে সাকিব-তামিমকে। কখনও তামিম আবার কখনও সাকিব হয়তো দলের সঙ্গে ছিলেন না। তবে একই সঙ্গে পুরো সিরিজে না থাকার ঘটনা এবারই প্রথম। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সেই পরীক্ষাতেই এবার নামবে বাংলাদেশ দল। এবার এশিয়া কাপেও দুটি ম্যাচ টানা খেলতে হয়েছে একই সঙ্গে দু’জনকে ছাড়া। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণের পর মোট ৮ ওয়ানডে বাংলাদেশ দল খেলেছে দু’জনকে ছাড়া। কিন্তু পুরো সিরিজে দু’জন অনুপস্থিত কিংবা তাদের বাইরে রেখেই দল ঘোষণা করতে হয়েছে এমনটা ঘটেনি। সাকিব দীর্ঘদিনের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের ইনজুরিতে লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে গেছেন। আর তামিম এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচেই ইনজুরি আক্রান্ত বাঁহাতের তর্জনির গোড়ায় আঘাত পেয়ে এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি বলেই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তারা দু’জনই নেই ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজে দুই বন্ধুকে ছাড়াই খেলতে নেমে নতুন এক অভিজ্ঞতাই হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য। সাকিব-তামিমের অভিষেকের পর থেকে দু’জনকে ছাড়াই বাংলাদেশ দল প্রথমবার খেলে ২০১৩ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে। সে সফরের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে খেলেছিলেন তামিম, পুরো সিরিজেই ছিলেন না সাকিব। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইনজুরিতে পড়েন তামিমও। এরপর দু’জনকে ছাড়াই দুটি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ দল। একই বছরের শেষদিকে বাংলাদেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে দু’জনকে ছাড়া খেলেও ৩০৭ রান করে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। সেটিই ছিল দেশের মাটিতে দু’জনকে ছাড়া বাংলাদেশ দলের প্রথমবার খেলা। এরপর ২০১৪ সালে ঘরের মাটিতে হওয়া এশিয়া কাপে প্রথম দুই ম্যাচই সাকিব-তামিমকে ছাড়া খেলে বাজেভাবে হেরে যায় ২০১২ এশিয়া কাপে রানার্সআপ বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে সাকিব ফিরলেও জয় আসেনি। এবার এশিয়া কাপেও দু’জনকে ছাড়া দুটি ম্যাচ খেলেছে- একটি জয়, একটি পরাজয় দেখতে হয়েছে দলকে। সবমিলিয়ে সাকিব-তামিমের অভিষেকের পর এ দু’জনের একজনও দলে ছিলেন না, এমন ৮টি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ জিতেছে তিনটিতে, পরাজয় সঙ্গী হয়েছে ৪ ম্যাচে এবং একটি হয়েছে পরিত্যক্ত। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে সাকিব-তামিম দু’জনকে ছাড়া বাংলাদেশের খেলা ম্যাচের সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াবে এগারোয়। এবার তাই অন্যরকম এক পরীক্ষা টাইগারদের প্রথমবারের মতো। বাংলাদেশের পক্ষে সব ফরমেটের আন্তর্জাতিক ম্যাচে সর্বাধিক রানের মালিক তামিম দেশের মাটিতেও ওয়ানডেতে সবাইকে ছাড়িয়ে রান করার দিক থেকে। ৯২ ওয়ানডেতে তিনি ৫টি সেঞ্চুরি, ২১টি হাফসেঞ্চুরিসহ করেছেন ৩১১৭ রান। সাকিব তিন নম্বরে ৯৬ ম্যাচে ২৬৮২ রান করে (৩ সেঞ্চুরি, ২০ হাফসেঞ্চুরি)। আর বোলিংয়ে দেশের মাটিতে ৯৬ ওয়ানডে খেলে ১৪৬ উইকেট নিয়ে সেরা সাকিব। এ দু’জনকে ছাড়াই পুরো সিরিজে একটা শূন্যতায় ভুগবে স্বাগতিকরা এটাই স্বাভাবিক। সেই চ্যালেঞ্জটা কেমন হবে এই সিরিজেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
×