ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকায় নির্যাতনের শিকার শিশু গৃহকর্মী কুমিল্লা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২১ অক্টোবর ২০১৮

ঢাকায় নির্যাতনের শিকার শিশু গৃহকর্মী কুমিল্লা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২০ অক্টোবর ॥ দশ-এগারো বছর বয়সের শিশু সীমা আক্তার। কঙ্কালসার-লিকলিকে চিকন দেহের গড়ন। অভাবের তাড়নায় দুমুঠো অন্নের সংস্থানে ২ হাজার টাকা বেতনে রিক্সাচালক বাবা নুরুল ইসলাম মেয়ে সীমাকে গৃহকর্মীর কাজে দিয়েছিলেন তার পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা নগরীর উত্তর কালিয়াজুরীর ছেলে ও ঢাকার টিকাটুলী মহিলা কলেজ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম অপুর বাসায়। অন্ন ও অর্থের পরিবর্তে ছোট এই শিশুর কপালে জুটেছে অমানুষিক নির্যাতন। মেয়ের অসুস্থতার খবর দিয়ে নুরুল ইসলামকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে থেকে আশঙ্কাজন অবস্থায় সীমাকে এনে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ৭ অক্টোবর ভর্তি করা হয়। হুমকির মুখে ১৩ অক্টোবর নুরুল ইসলাম সীমাকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১৭ অক্টোবর আবারও তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সীমা বাকরুদ্ধ ও অচেতন অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে। এবারও হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে প্রভাবশালীরা। শনিবার সাংবাদিকদের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমন অভিযোগ করেন সীমার বাবা। নুরুল ইসলাম জানান, প্রায় ১১ মাস আগে নাজমুল ইসলাম অপু তার ঢাকার বাসায় গৃহকর্মীর কাজের জন্য সীমাকে নিয়ে যায়। ওইসময় মাসিক ২ হাজার টাকা ও কাজের ফাঁকে লেখাপড়া করাসহ ভবিষ্যতে বিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয় অপু। কিন্তু মেয়েকে দিয়ে সারাদিন বাসায় কাজকর্ম করানো হলেও এ পর্যন্ত কোন টাকা-পয়সা দেয়নি, উল্টো কারণে-অকারণে তার ওপর অপু ও তার স্ত্রী নির্যাতন চালাত। সীমার বাম গালে কামড়ের দাগ দেখিয়ে নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, অপু আমার মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতনের চেষ্টা চালাত। এ নিয়ে অপু ও তার স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাটি হতো এবং অপুর স্ত্রী সীমাকে বেধড়ক মারপিট করত। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে অপু ও তার স্ত্রী মিলে সীমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ও অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় অপু খবর দিয়ে সীমার বাবাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। নুরুল ইসলাম জানান, অপুর বাসায় গিয়ে মেয়ে সীমাকে বাথরুমে তালাবদ্ধ অবস্থায় অচেতন দেখতে পাই। সেখান থেকে মেয়েকে এনে ৭ অক্টোবর কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে অপুর স্বজনদের হুমকির মুখে ১৩ অক্টোবর হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যেতে বাধ্য হই। পরে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে আবারও ৪ দিন পর ১৭ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি করি। তিনি আরও জানান, ঘটনাটি ঢাকার ওয়ারী থানাকে জানানো হয়েছে। তিনি তার মেয়ের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের বিচার দাবি করেন। বর্তমানে সীমা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপালের ৮নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শনিবার হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ আসিফুল আমিন সাংবাদিকদের জানান, নির্যাতনের কারণে শিশু সীমা বাকরুদ্ধ ও অচেতন অবস্থায় রয়েছে। তাকে মুখে খাবার খাওয়ানো যাচ্ছে না, ফলে নাকে নল লাগিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে।
×