ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন বানচালের চেষ্টা

বঙ্গবন্ধুর খুনী চক্র, জঙ্গী গোষ্ঠী নিয়ে জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসের ছক

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২১ অক্টোবর ২০১৮

বঙ্গবন্ধুর খুনী চক্র, জঙ্গী গোষ্ঠী নিয়ে জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসের ছক

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে নানা ধরনের ইস্যু সামনে এনে নাশকতা, নৈরাজ্য ও সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হতে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। আর এ জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটভুক্ত জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তৎপরতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধুর খুনী চক্র, জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো। এই গোষ্ঠীগুলোকে নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে মদদ দিচ্ছে দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তি। নির্বাচনের ইস্যু সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচীর আড়ালে জ্বালাও, পোড়াও, সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানোর নীলনক্সা তৈরি করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে রাজপথে সহিংসতা সৃষ্টি করা হলে তা কঠোর হস্তে দমন, প্রতিহত ও মোকাবেলায় পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধুর খুনী চক্র, জঙ্গীগোষ্ঠীকে নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে সহিংসতায় সম্পৃক্ত করতে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জামায়াত-শিবিরকে। নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে জঙ্গী স্টাইলে চোরাগোপ্তা হামলা, গুপ্ত হত্যা, স্পর্শকাতর স্থাপনায় হামলা, ভিআইপি শ্রেণীর ব্যক্তিদের খুন, সহিংস সন্ত্রাস চালানোর প্রস্তুতি চূড়ান্ত করবে তারা। নির্বাচন বানচাল করার জন্য নাশকতা চালাতে বিরাট অঙ্কের বাজেট নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে দেশব্যাপী যেই ধরনের জ্বালাও, পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস, সহিংস সন্ত্রাস চালানো হয়েছিল, তারচেয়ে আরও ভয়াবহ ও ভয়ঙ্কর আকারের সহিংস আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শীঘ্রই গঠিত হতে যাচ্ছে ছোট আকারের নির্বাচনকালীন সরকার। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সময়টা খুবই স্পর্শকাতর। এই সময়টাকেই সহিংসতার জন্য বেছে নেয়ার জন্য ছক কষা হচ্ছে। সারাদেশের বিএনপি-জামায়াত, তাদের অঙ্গসংগঠন-সহযোগী সংগঠন ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মী, ক্যাডারদের সংগঠিত করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-ে দ-িত সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের জামাতা ফুয়াদ জামানকে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের একটি মামলায় গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে শুধু বঙ্গবন্ধুর খুনী চক্রই নয়, যুদ্ধাপরাধীগোষ্ঠীও গোপন তৎপরতায় যুক্ত হচ্ছে। যুক্ত আছে জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোও। তাদের নেতৃত্বে আছে জামায়াত-শিবির। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটভুক্ত জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও নির্বাচনকালীন সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্বাচন বানচাল করতে সক্ষম হলে আবারও রাজনৈতিক ময়দানে প্রকাশ্যে আসতে পারবে জামায়াত-শিবির। লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক গোপন বৈঠকে সমঝোতা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে হটাতে পারলে আবারও ক্ষমতার মসনদে ফিরে আসতে পারবে জামায়াত-শিবির। দেশে ফিরে আসতে পারবে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান। কারামুক্তির অবসান ঘটবে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার। দশম সংসদ নির্বাচনের মতই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত করতে না পারে সেজন্য সরকারী অফিস-আদালত, থানা, বিদ্যুত অফিস, কেপিআই, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে টার্গেট করে তারা আগুন, ভাংচুর, ককটেল ও পেট্রোলবোমা হামলা, গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী, পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর ককটেল নিক্ষেপ, মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত দলের নেতাকর্মী ও তাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার গত ১২ সেপ্টেম্বর, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির প্রতীকী অনশন কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে বলেছেন, বিএনপির সব কর্মসূচীতে পাশে থাকবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কারÑ দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে বাংলাদেশে কোন নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হতে দেবে না জনগণ। জামায়াতে ইসলামীর আমিরের হুমকিই প্রমাণ করে তাদের শক্তি ও সাহসের উৎস কোথায় ? এতদিন চুপচাপ থাকলেও নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রাক্কালে এই ধরনের হুমকি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে সহিংস সন্ত্রাসেরই ইঙ্গিত দেয় বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত অংশ নিতে না পারলেও ২০ দলীয় জোটের অংশীদার হয়ে বিএনপির ছাতার নিচে এসে রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশ নেবে। জামায়াত এই সুযোগে যুদ্ধাপরাধীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধুর খুনী চক্র, জঙ্গীগোষ্ঠীকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারের ডামাডোলে নাশকতা, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে। জঙ্গী সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক ব্যানারের নিচে আনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জামায়াত-শিবিরকে। এরপর থেকেই দেশের বিভিন্নস্থানে জঙ্গী আস্তানার অস্তিত্ব পাওয়া যাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। জামায়াত-শিবিরের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে : তারা যেন রাজনৈতিক ব্যানারের নিচে একত্রিত করে সংগঠিত করে জঙ্গী সংগঠনগুলোকে। সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জঙ্গী সদস্যরা সংগঠিত হয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে গ্রেনেড-বোমার সহিংস সন্ত্রাস চালিয়ে ভয়ভীতি, আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি করবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে জামায়াত-শিবির। তারা পুলিশের ওপর লাগাতার হামলা চালাতে পারে বলে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে আগের ধরন পাল্টে তারা জঙ্গীদের অনুকরণে টেলিগ্রামের মতো বিভিন্ন এ্যাপস ব্যবহার করবে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্নস্থানে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের বিভিন্ন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে এ সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিপত্র জব্দ করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। জামায়াত-শিবিরের গোপন নথি অনুযায়ী আগামী মাসে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হওয়ার পরেই মাঠে নামবে তারা। এই অবস্থায় শিবির কর্মীদের তালিকা তৈরি করছে পুলিশ প্রশাসন। জামায়াত-শিবির পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দিয়ে জনগণের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য নানা পরিকল্পনা করছে। আর সেই উদ্দেশেই তারা হামলার পরিকল্পনা করছে। জঙ্গীরা যে ধরনের এ্যাপস ব্যবহার করত এরা এখন তা ব্যবহার করছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার জন্য সহিংস সন্ত্রাস চালানো হলে তা মোকাবেলায় পরিকল্পনা তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আন্দোলনের নামে যদি কেউ নাশকতার চেষ্টা চালায় তা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের যে কোন চেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগাম প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। দেশের যেসব স্থানে নাশকতা চালানো হতে পারে সম্ভাব্য স্থান ও ব্যক্তিদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি করাসহ সতর্কতা অবলম্বন শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা।
×