ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৯৪ অস্ত্র ও ৭ হাজার ৬৩৭ রাউন্ড গুলি জমা

৬ জলদস্যু বাহিনীপ্রধানসহ ৪৩ দুর্ধর্ষ ডাকাতের আত্মসমর্পণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২১ অক্টোবর ২০১৮

৬ জলদস্যু বাহিনীপ্রধানসহ ৪৩ দুর্ধর্ষ ডাকাতের আত্মসমর্পণ

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে ৬ জলদস্যু বাহিনীর ৬ প্রধানসহ ৪৩ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী শনিবার বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছে। সকালে মহেশখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে দুর্ধর্ষ এসব বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেছে। আত্মসমর্পণকারী অন্যরা হচ্ছে ১২ শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দুর্ধর্ষ ডাকাত। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে এরা জমা দিয়েছে ৯৪টি অস্ত্র ও ৭ হাজার ৬৩৭ রাউন্ড গুলি। উল্লেখ করা যেতে পারে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এই উপজেলাটি দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী, জলদস্যু, ডাকাত ও অবৈধ অস্ত্র প্রস্তুতকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়ে আছে। সরকার এই উপজেলাকে ঘিরে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বহু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এলএনজি প্রকল্প ও তাপ বিদ্যুত উন্নয়ন কেন্দ্র। এসব প্রকল্পে কাজ করছে দেশী-বিদেশী বহু বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা-কর্মচারী। একদিকে সাগর, অপরদিকে পাহাড় ঘেরা এই উপজেলা। সন্ত্রাসী বাহিনী, ডাকাত বাহিনী, জলদস্যুদের লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অপহরণ, খুনসহ নানা ঘটনা। ইতিপূর্বে পুলিশ, র‌্যাব এবং নৌবাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব অবৈধ অস্ত্র তৈরি হয়ে সেখান থেকে কক্সবাজার জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের তথ্য রয়েছে। ফলে এ উপজেলা থেকে এসব সমাজবিরোধীদের উৎখাতে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। এরই ফলশ্রুতিতে শনিবার ৯৪ অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ নিয়ে ৪৩ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করার ঘটনা ঘটল। আয়োজিত অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণ করেছে ১০ সদস্য নিয়ে অঞ্জু বাহিনী। তারা জমা দিয়েছে ২৪টি অস্ত্র ও ৩৪৫ রাউন্ড গুলি। এছাড়া কুতুবদিয়ার রমিজ বাহিনী প্রধান তার সহযোগীকে নিয়ে ৮ অস্ত্র ও ১২০ রাউন্ড গুলি, মহেশখালীর নুরুল আলম ওরফে কালা বদাবাহিনীর প্রধান আলম তার ৬ সদস্য নিয়ে ২৩ অস্ত্র ও ৩৩৩ রাউন্ড গুলি, জালালবাহিনীর প্রধান জালালসহ ১৫ সদস্য নিয়ে ২৫ অস্ত্র ও ৬ হাজার ৭৯৮ রাউন্ড গুলি, আইয়ুব বাহিনীর প্রধান আইয়ুব ৯ সদস্য নিয়ে ৯ অস্ত্র ও ৩৭ রাউন্ড গুলি, আলাউদ্দিন বাহিনীর প্রধান আলাউদ্দিন একটি অস্ত্র ও ৪ রাউন্ড গুলি নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে এসএমজি, রিভলবার, দেশী বিদেশী একনলা বন্দুক, দেশী পিস্তল, দু’নলা ওয়ান শূটার গান, থ্রি কোয়ার্টার গান, ২২ বোর রাইফেল। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ ও র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তা ধরে রাখতে হলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে হবে। যাতে মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারে। উপস্থিত হাজারো জনতাকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা অপরাধ জগত থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাদের দেখলেন, তারা অস্ত্র জমা দিয়েছে আত্মসমর্পণ করেছে। আগামীতে তাদেরকে আপনারা ভাল ব্যবহার দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেবেন।’ মন্ত্রী বলেন, সরকার যেভাবে উন্নয়ন কর্মকা- শুরু করেছে আজকের এই মহেশখালীর ভবিষ্যত রূপ হবে ভিন্ন। এই উপজেলার মাতারবাড়িসহ সর্বত্র একের পর এক উন্নয়ন কাজ চলছে। মহেশখালী হবে শিল্প নগরী ও কক্সবাজার বিশ্বমানের পর্যটন নগরীতে পরিণত হবে। এর ফলে শুধু মহেশখালী নয়, আগামীতে পুরো কক্সবাজারের চেহারাও বদলে যাবে। বিদেশীরা চাকরি খুঁজতে এখানে এসে ধর্ণা দেবে। তাই বর্তমান সরকারের প্রধান চালিকা শক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করুন। র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার বছরের পর বছর ধরে জলদস্যু ও সন্ত্রাসীদের উৎপাত চলে আসছে। ইতিপূর্বে অস্ত্র তৈরির বহু কারখানা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আজকের আত্মসমর্পণকারীরা সরকার পক্ষের কথায় রাজি হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। বেনজির আহমেদ বলেন, র‌্যাব মহেমখালী-কুতুবদিয়াকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বেই। সুন্দরবনের দস্যুরা অস্ত্রশস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কথা উল্লেখ করে বলেন, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী-কুতুবদিয়াসহ অন্য স্থানে যারা এমন ঘৃণ্যতম কাজে জড়িত রয়েছে তাদেরকেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হবে। অন্যথায় এদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অবস্থান হবে কঠোর। র‌্যাব মহাপরিচালক ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের উদ্দেশ করে বলেন, আমি গডফাদার চিনি না। ইয়াবা নিয়ে যত বড় শক্তিশালী লোক হাত বাড়াবে তার হাত ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া হবে। ইয়াবা গডফাদারদের সুস্পষ্টভাবে তিনি জানিয়ে দেন, এ ব্যবসা করে যাদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে তাদের প্রতিটি আঙ্গুল খুলে নেয়া হবে। সমাবেশে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার জনপ্রিয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরোয়ার কমল এমপি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র মুজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীও উপস্থিত ছিলেন।
×