ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

আতিউর রহমান রচিত চার গ্রন্থের পাঠ উন্মোচন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২১ অক্টোবর ২০১৮

আতিউর রহমান রচিত চার গ্রন্থের পাঠ উন্মোচন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুমাত্রিক প্রতিভায় উজ্জ্বল এক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. আতিউর রহমান। অর্থনীতিবিদ পরিচয়ের পাশাপাশি লেখালেখিতেও দারুণ সচল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গবর্নরের কলমটি। শনিবার সকালে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে তার রচিত চারটি গ্রন্থের পাঠ-উন্মোচনের আয়োজন করে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা দিশা। তাদের পরিচালিত আলোঘর কার্যক্রমের আওতায় বই চারটি প্রকাশিত হয়। বিশিষ্টজনদের আলোচনায় মূল্যায়নকৃত বইগুলো হলো ‘শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম’, ‘ফ্রম এ্যাশেস টু প্রসপারিটি’, ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস’ ও ‘প্রান্তজনের স্বপক্ষে’। বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এই পাঠ-উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম বইটি নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। ফ্রম এ্যাশেস টু প্রসপারিটি গ্রন্থটি নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান নিশিদিন ভরসা রাখিস এবং বিআইবিয়ামের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী প্রান্তজনের স্বপক্ষে গ্রন্থের ওপর আলোচনা করেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক লোক-গবেষক শামসুজ্জামান খান। অনুভূতি ব্যক্ত করে ড. আতিউর রহমান বলেন, এক সময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ দেশ বলা হতো। কিন্তু আজ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ১৯৭২ সালে যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফেরেন তখনই তিনি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমরা সোনালি দেশ গড়ে তুলব। আসুন দেশকে শোষণমুক্ত করে গড়ি তুলি। সকলে মিলে গড়ে তুলি সোনার বাংলাদেশ। তিনি কৃষি ও শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তার ছোঁয়ায় ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়াতে থাকে হার না-মানা সোনার বাংলাদেশ। কিন্তু তখনই হায়েনারা সপরিবারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে। অনিশ্চিত অন্ধকারে চলে যায় দেশ। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ফের দেশ এগিয়ে চলা শুরু করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে। শুরু হয় নয়া উদ্দীপনায় দিনবদলের যাত্রা। বাহাত্তরের ৮ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি চলতি বছর ২৮৫ বিলিয়ন ডলার হতে চলেছে। সর্বশেষ অর্থবছরে জিডিপি বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ হারে। উন্নত দেশ গড়ে তুলতে এখন দরকার গুণগত শিক্ষা। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একটি প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী আতিউর রহমানকে পলিম্যাথ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, আতিউর রহমানের মতো বহুমুখী প্রতিভাবান মানুষের কারণে আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির উন্নয়ন হচ্ছে। ‘শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম’ গ্রন্থের পাঠ আলোচনায় সেলিনা হোসেন বলেন বলেন, আতিউর রহমান তার বহুমাত্রিক চেতনায় এই বইটি রচনা করেছেন। তার ঋদ্ধ গবেষণায় সমৃদ্ধ হয়েছে বইটি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে যথার্থভাবে তুলে ধরেছেন বইটিতে। সভাপতির বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, যে চারটি গ্রন্থের পাঠ-উন্মোচন হলো তার সবই আমাদের সমাজ-সংস্কৃতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সহায়ক। অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে ড. আতিউর রহমানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ বাক্সে কি আসত তা নিয়ে সরাসরি কথা বলেননি কোন গবর্নর। কিন্তু ড. আতিউর রহমান প্রত্যন্ত একটি গ্রামের কৃষকের ফোন কলও রিসিভ করে তার অভিযোগ শুনেছেন। তার সমস্যার সমাধান করেছেন। গ্রন্থ রচনাতেও তিনি এমন সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। উক্ত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আলোঘর প্রকাশনার প্রকাশক মোঃ সহিদ উল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন কবি মাকিদ হায়দার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক প্রমুখ। ‘জগলুল আহমেদ চৌধুরীর নির্বাচিত কলাম’ ॥ সাংবাদিকতার জগতে অনন্য এক নাম জগলুল আহমেদ চৌধুরী। ২০১৪ সালের ২৯ নবেম্বর কাওরানবাজারে বাস থেকে নামতে অপর এক বাসের চাপায় নিভে যায় কীর্তিমান এই সাংবাদিকের প্রাণপ্রদীপ। আন্তর্জাতিক বিষয়ক এই প-িতজন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজীতে লিখেছেন অসংখ্য কলাম। সেসব প্রবন্ধ নিয়ে এবার প্রকাশিত হলো ‘জগলুল আহমেদ চৌধুরীর নির্বাচিত’। বিভিন্ন প্রবন্ধের সূত্র ধরে গ্রন্থটিতে উঠে এসেছে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের রাজনীতির কথা। আছে কূটনৈতিক তৎপরতার চালচিত্র। বইটি প্রকাশ করেছে আবিষ্কার প্রকাশনী। জগলুল আহমেদ চৌধুরী স্মৃতি ট্রাস্টের আয়োজন শনিবার বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন জগলুল আহমেদ চৌধুরী স্মৃতি ট্রাস্টের সভাপতি খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সিএম শফি সামি। স্বাগত বক্তব্য দেন আবিষ্কার প্রকাশনীর প্রকাশক দেলোয়ার হাসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ট্রাস্টের মহাসচিব ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। জগলুল আহমেদ চৌধুরীর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সিএম সফি সামি, বাসসের সাবেক এমডি মনোজ রায়, বনানী সোসাইটির সভাপতি শওকত আলী ডিলন প্রমুখ। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, তরুণ কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের মধ্য থেকে তিনজনকে স্মৃতি ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ফেলোশিপ প্রদান করা হবে। জগলুল আহমেদ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রতিথযশা সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরী আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ছিলেন। বিশ্ব ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক তার বিশ্লেষণধর্মী কলামগুলো বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে পাঠককে স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখা খুবই জটিল। কিন্তু তিনি দেশের স্বার্থ রক্ষা করে সাবলীলভাবে এ কাজটি করে গেছেন। জগলুল আহমেদ চৌধুরীর আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখনী তরুণ প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন স্পীকার। তিনি বলেন, রাজনীতি ও কূটনীতি সম্পর্কে ভাল জ্ঞান না থাকলে আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে সংবাদ পরিবেশন কিংবা কলাম লেখা সহজ নয়। সে কারণেই নিয়মিত পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিনিয়ত শাণিত করেছেন জগলুল আহমেদ চৌধুরী। বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা ছিল তার বড় গুণ। তীক্ষè মেধার প্রকাশ ঘটানোতে তিনি ছিলেন অনন্য। অন্য বক্তারা বলেন, ‘নির্বাচিত কলাম’ এর সংকলন একটি অমূল্য জ্ঞান ভা-ার। এই কলাম সংকলন এবং কৃতকর্মের মধ্য দিয়ে অনন্য প্রেরণার উৎস হয়ে যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন জগলুল আহমেদ চৌধুরী। জগলুল আহমেদ চৌধুরী স্মৃতি ট্রাস্ট এ বছর থেকে ফেলোশিপ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী। এ ফেলোশিপ তরুণ সাংবাদিকদের এ পেশায় আসতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। ৪৫০ পৃষ্ঠার প্রবন্ধ গ্রন্থটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। মূল্য রাখা হয়েছে ৭৫০ টাকা।
×