ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

লেখায় ছিল দূরদর্শিতার ছাপ

প্রগতিশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন খাশোগি

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২১ অক্টোবর ২০১৮

প্রগতিশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন খাশোগি

সাংবাদিক জামাল খাশোগি সৌদি রাজপরিবারের অভ্যন্তরের তথ্যাবলী সম্পর্কে ছিলেন অবহিত এবং অত্যন্ত রক্ষণশীল এ দেশের সরকারের বিরুদ্ধে ছিলেন একজন স্পষ্টবাদী সমালোচক। শেষ পর্যন্ত তাকে ইস্তানবুলে দেশটির দূতাবাসের মধ্যে হত্যা করা হলো। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে তার সর্বশেষ কলামে মধ্যপ্রাচ্যে অধিকতর বাক স্বাধীনতার পক্ষে লিখেছিলেন এবং সম্ভবত তা ছিল এক দূরদর্শিতা। তিনি লিখেছিলেন, আরব বিশ্বের অবস্থান এক লৌহ যবনিকার আড়ালে এবং এখানে বাইরের কোন শক্তি নয়, অভ্যন্তরীণ শক্তিই ক্ষমতার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তিনি লিখেছেন, আরব বিশ্বের প্রয়োজন প্রাচীন আন্তর্দেশীয় সংবাদ মাধ্যমের স্থলে একটি আধুনিক ভার্সন যাতে করে নাগরিকরা বৈশ্বিক ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন। কিন্তু এখন তো তার কণ্ঠ নীরব হয়ে গেল স্থায়ীভাবে। এ সৌদি সাংবাদিক ২০১৭ সালে সৌদির ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বিরোধে জড়িত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা-নির্বাচনে চলে যান। তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা রহস্যাবৃত ছিল এবং তুর্কী কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এ হত্যা ঘটানো হয়েছে বলে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সৃষ্টি হয় এক আন্তর্জাতিক সঙ্কট। নিখোঁজ হওয়ার দু’সপ্তাহ পর রিয়াদ শেষ পর্যন্ত বলেছে যে, তিনি যেখানে কয়েকজনের সঙ্গে বিরোধে জড়িত হওয়ার কারণে উদ্ভূত এক পরিস্থিতিতে মারা গেছেন। রিয়াদ এর আগে জোর দিয়ে বলেছে যে, খাশোগি জীবিত অবস্থায় দূতাবাস ত্যাগ করেছেন। খাশোগির জন্ম এক বিশিষ্ট সৌদি পরিবারে এবং পরিবারটি তুর্কী বংশজাত। তার পিতামহ মোহাম্মদ খাশোগি ছিলেন সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আজিজ আল সউদের ব্যক্তিগত চিকিৎসক। তার চাচা ছিলেন অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগি। জামাল খাশোগি ছিলেন তরুণ ওসামা বিন লাদেনের বন্ধু। মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সহানুভূতিশীল। সৌদি রাজপরিবারের প্রতি সহায়ক ব্যক্তি এবং একই সঙ্গে দেশের প্রশাসনের সমালোচক ও উদার মতাবলম্বী। তিনি ১৯৮২ সালে ইন্ডিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ¯œাতক ডিগ্রী অর্জনের পর সৌদি গেজেট ও আল-শাক আল-আওসাতসহ বিভিন্ন সৌদি দৈনিকে কাজ শুরু করেন। সহিংসতার সংবাদ সংগ্রহের জন্য তাকে আফগানিস্তানে পাঠানো হয়। তিনি ১৯৮০ সালে সোভিয়েত দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে মুজাহিদদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তরুণ সাংবাদিক হিসেবে খাশোগি বেশ কয়েকবার ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। যেগুলো আন্তর্জাতিক দৃষ্টি কেড়েছে। কিন্তু ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে তিনি লাদেনের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। ওই সময় লাদেন পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান জানায়। জামল খাশোগি ১৯৫৮ সালের ১৩ অক্টোবর সৌদি শহর মদিনায় জন্ম নেন। সেখানে তিনি ইসলামী আদর্শ বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। খাশোগি ২০০৩ সালে, সৌদি দৈনিক আল-ওয়াতামের প্রধান সম্পাদক হিসেবে মাত্র ৫৪ দিন কাজ করার পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। কারণ সৌদি কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে যে খাশোগি অতিমাত্রায় প্রগতিশীল হয়ে পড়েছেন। তিনি ২০০৭ সালে ফিরে আসেন আল ওয়াতনে। তিন বছর দায়িত্ব পালনের পরে তাকে পদচ্যুত করা হয় তার সম্পদকীয় লেখার ধরনের জন্য। সৌদি কোটিপতি যুবরাজ আল-ওয়ালিদ বিন তালালের সান্নিধ্যে আসেন তিনি এবং তারা মানামায় ২৪ ঘণ্টাব্যাপী সংবাদ প্রতিষ্ঠান আল-আরব প্রতিষ্ঠা করেন। সৌদি আরবের বিশ্বস্ত সহযোগী বাহরাইন ২০১৫ সালে স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়। যুবরাজ মোহাম্মদকে সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনয়ন করার কয়েক মাস পর খাশোগি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে যান। এর কয়েক মাস পর ২০১৭ সালের নবেম্বরে যুবরাজ আল-ওয়ালি ও কয়েক হাজার কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। খাশোগি গত বছর ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেন, সৌদি আরবে কার্যত শাসক যুবরাজ মোহাম্মদের অধীন দেশটি শঙ্কা, ভীতি প্রদর্শন, গ্রেফতার ও প্রকাশ্য লজ্জাকর যুগে প্রবেশ করছে নতুন করে। -এএফপি
×