ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কংগ্রেস সদস্যরা মেনে নেননি

সৌদির বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য ॥ ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২১ অক্টোবর ২০১৮

সৌদির বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য ॥ ট্রাম্প

সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার কথা সৌদি আরব শনিবার স্বীকার করেছে। বলা হয়েছে, ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে ‘ধস্তাধস্তির’ এক পর্যায়ে তিনি মারা যান। সৌদি সরকারের এ ভাষ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বাসযোগ্য মনে করলেও কংগ্রেস সদস্যদের কাছে এটি গ্রহণযোগ্য হয়নি। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৮ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। -এএফপি ও বিবিসি ভিন্ন মতাবলম্বী ও রাজ পরিবারের সমালোচক খাশোগি ২ অক্টোবর ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর আর বের হননি। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। তুরস্ক দাবি করে রাষ্ট্রীয় কিলিং স্কোয়াড তাকে খুন করে লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। খাশোগি হত্যার জন্য তুরস্ক শুরু থেকেই সৌদি আরবকে দায়ী করে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে রিয়াদের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়তে থাকে। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার নিয়মিত লেখক খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে রহস্য দানা বাধার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সঙ্কট তৈরি হয়। প্রকৃত ঘটনা কি ঘটেছে তা প্রকাশ করার জন্য রাজতন্ত্র শাসিত দেশটি পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে নজীরবিহীন চাপের মুখে পড়ে। বিশেষ করে যুবরাজ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার কথা বারবার এসেছে। সৌদি আরব অবশ্য বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। শেষ পর্যন্ত ওই সাংবাদিক নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয় রিয়াদ। শুক্রবার রিয়াদে সৌদি এ্যাটর্নি জেনারেল সাউদ আল মুজিব বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে খাশোগি মরা গেছেন। তিনি বলেন, খাশোগি ও কয়েকজনের মধ্যে আলোচনা কলহের পর্যায়ে চলে গেলে অন্যরা তাকে ঘুষি মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তিনি মারা যান। এদিকে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে যুবরাজ বিন সালমানের নেতৃত্বে একটি মন্ত্রী পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন। যুবরাজের ঘনিষ্ঠ গোয়েন্দা বাহিনীর উপপ্রধান আহমদ আল আসিরি ও রাজকীয় আদালতের গণমাধ্যম উপদেষ্টা সাউদ আলকাহতানিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই দুই জনের নাম প্রকাশিত হয়। খাশোগি নিহত হওয়ার ঘটনা যুবরাজ হিসেবে বিন সালমান কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। বিশেষ করে সৌদি আরবের সমাজে সংস্কার ও আধুনিকায়নের ধারা শুরু করে তিনি বহির্বিশ্বে নিজের যে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছিলেন এই ঘটনা তার সব অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রিয়াদ খাশোগি নিহত হওয়ার যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য কি না , ‘বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, এ বিষয়ে আমাদের পর্যালোচনা বা তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।’ সৌদি আরবের এমন স্বীকারোক্তির পর ট্রাম্প বলেন, যা ঘটেছে তা অগ্রহণযোগ্য। একইসঙ্গে রিয়াদ যে ওয়াশিংনের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সে কথাও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি এর আগে একবার সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে তার প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অন্যতম মিত্র দেশটির বিরুদ্ধে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজি হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, প্রায় দুই বছর ধরে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে পররাষ্ট্র ইস্যুতে ট্রাম্প এই প্রথম কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। খাশোগি হত্যায় গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বিন সালমানের যুবরাজের মর্যাদা কেড়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে সিনেটে ফরেন রিলেশন্স কমিটির প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটিক সদস্য বব মেনেন্ডেজ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করেছেন।
×