ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা বিষয় : বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ২০ অক্টোবর ২০১৮

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা বিষয় : বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়

সুপ্রিয় শিক্ষার্থীরা, আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল। চতুর্থ অধ্যায়- ঔপনিবেশিক যুগের প্রত্নতাত্তি¡ক ঐতিহ্য সৃজনশীল প্রশ্ন উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। মাহী ও ঐশী দুই ভাইবোন। ঈদের দিন বিকালে তারা পুরানো ঢাকায় ঊনিশ শতকে তৈরি একটি স্থাপত্যকর্ম দেখে খুবি মুগ্ধ হয় যেটি হলো একটি পার্ক। বাসায় এসে তারা তাদের বাবাকে পার্কটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাদের বাবা বলে এ পার্কটির সাথে বাংলার স্বাধিনতার এক মর্মান্তিক ঘটনা জড়িত। ক. সিতারা বেগম মসজিদ কোথায় অবস্থিত? খ. প্রত্নসম্পদ বলতে কী বোঝায়? গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মাহী ও ঐশী যে স্থাপত্যকর্ম দেখে খুবি মুগ্ধ হয় যেটি হয়েছিল তার নাম উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা কর। ঘ. উক্ত পার্কটি কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে জড়িত তা আলোচনা কর। ক. সিতারা বেগম মসজিদ ঢাকার সুত্রাপুরে অবস্থিত। খ. প্রত্নসম্পদ বলতে বোঝায় স্থাপত্য ও শিল্পকর্ম, মূর্তি বা ভাস্কর্য,অলংকার, প্রাচীন আমলের মুদ্রা, পুরানো মূল্যবান আসবাবপত্র ইত্যাদিকে বোঝায়। প্রত্ন শব্দের অর্থ হলো পুরনো। যেসব জিনিস বা নিদর্শন দেখে দেশের পুরনো ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়, সেসব নিদর্শনই প্রতœসম্পদ। এসব নিদর্শনের মধ্য দিয়ে সেসময়কার মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা, জীবনযাত্রা, বিশ্বাস-সংস্কার, রুচি বা দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। গ. মাহী ও ঐশী পুরনো ঢাকার ‘বাহাদুর শাহ’ পার্ক দেখে মুগ্ধ হয়েছিল। উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, মাহী ও ঐশী ঊনিশ শতকের যে স্থাপত্যকর্ম দেখেছে সেটি মূলত সময়ের বির্বতনে বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়েছে যা আজকের বাহাদুর শাহ পার্ক নামে পরিচিত। আর পার্ক সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তাদের বাবা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ঘটনার কথা বলেছিলেন। আঠারো শতকের শেষের দিকে বর্তমান পার্কটির স্থানে আর্মেনীয়দের একটি বিলিয়ার্ড ক্লাব ছিল এবং এটিকে কেন্দ্র করে ‘আন্টাঘর’ নামে একটি ডিম্বাকৃতির ময়দান ছিল। ১৮৫৮ সালে রানি ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষে তার শাসনভার গ্রহণের পর ঢাকা বিভাগের কমিশনার এ ময়দানেই নামকরণ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা পাঠ করে শোনান। সেই থেকে ১৯৫৭ সালের আগ পর্যন্ত পার্কটি ভিক্টোরিয়া পার্ক’ নামে পরিচিত ছিল। ঊনিশ শতকের প্রথমার্থে ইংরেজরা এটিকে পার্কে রুপ দেয় এবং চারদিকে লোহা দিয়ে এর চারকোণার চারটি দর্শনীয় কামান স্থাপন করে। পরবর্তীতে ইংরেজরা ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের সময় এ ময়দানে ঢাকায় বন্দি সিপাহিদের গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়। একশ বছর পর, ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতার জন্যজীবন-দানকারী সৈইনিকদের স্মৃতিতে ‘ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’ ( ডি আই টি) এর উদ্যোগে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয় এবং ভারতবর্ষের শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নামে স্থানটির নাম রাখা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক। যেটি দেখে মাহী ও ঐশী মুগ্ধ হয়েছিল। ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত ‘বাহাদুর শাহ’ পার্ক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম এবং জীবন উৎসর্গ করার অনুপ্রেরণা যোগায়, যা আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সফল করে তুলেছিল। ’বাহাদুর শাহ’ পার্কটি এদেশে ইংরেজ শাসকদের বর্বরতা, অত্যাচার ও নির্মমতার বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক, আত্মত্যাগী সিপাহীদের স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত। এর ১০০ বছর পর উপমহাদেশের স্বাধীনচেতা সিপাহিরা স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। কিন্তু সশস্ত্র এই আন্দোলনে এ দেশীয় সৈন্যরা সফল হতে পারেনি। সে সময় ঢাকায় ইংরেজদের হাতে বন্দি হওয়া সিপাহিদের বাহাদুর শাহ পার্কের গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তবে ভারতীয়দের এ আত্মত্যাগের স্মৃতিচিহ্ন ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রেরণার আলো ছড়িয়েছিল। একইভাবে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস সশস্ত্র সংগ্রাম, অধিকার আদায়ে আত্মোৎসর্গহ নানা ঘটনায় পরিপূর্ণ। ১৯৪৭ সালে দেশবিভক্তির পর পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অধীনে প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়। নানা ঘটনার পরিক্রমায় ১৯৭০ সালে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বাঙালি নির্বাচনে অংশগ্রহন করে এবং আওয়ামী লীগকে জয়ী করে। কিন্তু জয়ী হয়েও বাঙালি ন্যায্য অধিকার ফিরে পায়নি। এরপর তারা উপমহাদেশবাসীর প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে বুঝতে পারে, সশস্ত্র সংগ্রাম আর আত্মত্যাগ ছাড়া মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়। তাই ১৯৭১ সালে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এভাবে ‘বাহাদুর শাহ’ পার্কে ভারতীয়দের আত্মত্যাগের স্মৃতি পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অণুপ্রেরণার আলো ছড়িয়েছিল। তাই এ পার্কটিকে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে জড়িত বলা যায়।
×