ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তাজিক-রাজ্যে কি ম্যাজিক দেখাতে পারবে বাংলার বাঘিনীরা?

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২০ অক্টোবর ২০১৮

তাজিক-রাজ্যে কি ম্যাজিক দেখাতে পারবে বাংলার বাঘিনীরা?

রুমেল খান ॥ বয়সভিত্তিক ফুটবলে গত বছর চারেক ধরেই সাফ বা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বেশ দাপট দেখিয়ে একের পর এক ঈর্ষণীয় সাফল্য কুড়িয়ে নিচ্ছে বাংলার বাঘিনীরা। তাদের এই সফলতা যেন রীতিমতো গবেষণার বিষয়। তবে যারা মেয়েদের ফুটবলের খোঁজ-খবর রাখেন, তারাই জানেন এই সাফল্যের রহস্য- দীর্ঘদিন ধরে একই সঙ্গে থেকে কঠোর অনুশীলন, দারুণভাবে উজ্জীবিত করা এবং পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান। তবে সাফল্য প্রাপ্তিটা একটা নির্দিষ্ট গ-িতে সীমাবদ্ধ থাকলে সেটা প্রকৃত সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয় না। এ জন্য সাফল্যের ব্যাপ্তিটা আরও ছড়িয়ে দেয়ার কোন বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে নিতে হবে নতুন ও কঠিন চ্যালেঞ্জ। বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের সাফ অঞ্চলে (সিনিয়র পর্যায়ে অবশ্য এখনও সেই চেষ্টা সফলতার মুখ দেখেনি, ২০১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েরা রানার্সআপ হয়েছিল) শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করলেও এএফসি (এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন) অঞ্চলে এখনও পুরোপুরি আধিপত্য দেখাতে পারেনি। যদিও তারা ২০১৫ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে (সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল), ২০১৬ সালে তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে (সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল), ২০১৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে (সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল) এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে অনুর্ধ-১৮ বা অনুর্ধ-১৯ পর্যায়ে এখনও তারা সফল হতে পারেনি। আর তাই সেই লক্ষ্যে বাংলার বাঘিনীদের সামনে এবার নতুন মিশন। এবারের মিশন মধ্য এশিয়ায়। মিশনের নাম ‘এএফসি অনুর্ধ-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব’ (‘ডি’ গ্রুপ)। আগামী ২৪ অক্টোবর খেলা শুরু হবে তাজিকিস্তানের দুশানবেতে। গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া (২৪ অক্টোবর), চাইনিজ তাইপে (২৬ অক্টোবর) এবং স্বাগতিক (২৮ অক্টোবর) তাজিকিস্তান। শেষের দুটি দল বাংলাদেশের জন্য তুলামূলক সহজ হলেও কোরিয়া অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ, এমনটা মনে করেন বাঘিনীদের দ্রোণাচার্য গোলাম রব্বানী ছোটন। তাদের বিরুদ্ধে ভাল খেলাই তার লক্ষ্য। গত ৭ অক্টোবর ভুটানে অনুষ্ঠেয় সাফ অনুর্ধ-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে বাংলাদেশের মেয়েরা। ফাইনালে তারা নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই আসরের প্রথম চ্যাম্পিয়ন (অপরাজিত) হয়ে নিজেদের নামটি স্মরণীয় করে রাখে। সেই দলের মাত্র একজন বাদে বাকি সবাই এবার গেছে তাজিকিস্তান মিশনে। শুক্রবার ভোরে রওনা হয়ে বিকেলে গিয়ে তারা পৌঁছায় দুশানবেতে। ভুটানে সাফ শেষ করেই ১০ অক্টোবর থেকে এই আসরের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে মেয়েরা। ভুটানে আঁখির চোখে এবং শিউলির মাসলে ইনজুরি হয়েছিল। আশার কথা হলো তারা এখন দু’জনই সুস্থ। প্রতিপক্ষ অনেক কঠিন এ কথা সত্য। তবে মৌসুমীরা যদি মনে করে ‘পারবো’ তবে অনেক কিছুই সম্ভব। অনুর্ধ-১৯ বাছাইয়ে মেয়েদের অনুপ্রেরণা সদ্য অনুর্ধ-১৮ সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সাফের মতোই অনুর্ধ-১৯ বাছাইয়েও অধিনায়কের দায়িত্ব মিশরাত জাহান মৌসুমীর ওপর। সাফ অনুর্ধ-১৮ দলটির সঙ্গে এই দলটির তেমন কোন পার্থক্য নেই। এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষার জন্য দলের সঙ্গে থাকতে পারেনি সাজেদা খাতুন। তার স্থানে ইনজুরি থেকে ফিরে দলের সঙ্গে যোগ হয়েছে নার্গিস খাতুন। দুশানবেতে ম্যাচ হবে টার্ফে। আর তাপমাত্রা প্রায় ভুটানের কাছাকাছি (১৬-২০ ডিগ্রী)। বাংলাদেশের ম্যাচগুলো দিনের আলোতেই হবে। তাই এগুলো বাড়তি সুবিধা হবে লাল-সবুজদের জন্য। এ নিয়ে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ মহিলা দল এই আসরে দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিচ্ছে। প্রথমবার খেলেছিল ২০১২ সালে। সেবার তারা গ্রুপপর্বে উজবেকিস্তানের কাছে ২-০ এবং ভারতের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল। দুশানবেতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দলগুলোর সঙ্গে আগেও বিভিন্ন সময়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ২০১৬ সালে এএফসি অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে চাইনিজ তাইপেকে ৪-২ এবং ২০১৪ সালে এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে (সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল) তাজিকিস্তানকে ৯-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ০-৬ গোলে হারার তিক্ত অভিজ্ঞতাও আছে। খেলাটি হয়েছিল ২০১৭ সালে, কোরিয়া কন্ডিশনিং ক্যাম্প সফরে। এখন দেখার বিষয় তাজিক-রাজ্যে গিয়ে ম্যাজিক দেখিয়ে বাংলার বাঘিনীরা বাজিমাত করে দ্বিতীয় রাউন্ডে নাম লেখাতে পারে কি না।
×