ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আইয়ুব বাচ্চুর জন্য সংস্কৃতিকর্মীদের শোক

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২০ অক্টোবর ২০১৮

আইয়ুব বাচ্চুর জন্য সংস্কৃতিকর্মীদের শোক

বাংলা ব্যান্ডসঙ্গীতের অগ্রপথিক আইয়ুব বাচ্চু বৃহস্পতিবার চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। ওইদিন সকালে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসময়েই চলে যান বাংলা গানের এ অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। গতকাল শুক্রবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাকে শ্রদ্ধা জানায় হাজার হাজার ভক্ত ও সাধারণ মানুষ। আজ শনিবার চট্টগ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত হবে আইয়ুব বাচ্চু। প্রিয় তারকাকে হারিয়ে অনেকটাই মুহ্যমান সংস্কৃতিকর্মীরা। পাশাপাশি সারাদেশের সাধারণ মানুষও প্রিয় শিল্পীকে হারিয়ে শোকে ডুবেছে। শোক জানিয়েছেন দীর্ঘদিনের প্রিয় সতীর্থ তারকারাও। সংস্কৃতি অঙ্গনের শোকতপ্ত তারকারা ফেসবুকে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানান। এসব প্রতিক্রিয়া নিয়ে এ প্রতিবেদন। হানিফ সংকেত : চোখ মেললেই জীবন, চোখ বন্ধ করলেই আর জীবন নেই, জীবনের রংটাই এমন, কথাটি আমার নয়, আইয়ুব বাচ্চুর। জীবন সম্পর্কে নিজের উপলব্ধি বর্ণনা করতে গিয়ে একটি সাক্ষাতকারে এই উক্তিই করেছিল বন্ধুবর আইয়ুব বাচ্চু। অনেক কষ্ট হলেও যার নামের আগে এখন লিখতে হবে প্রয়াত। সেই আশির দশকের শুরু থেকেই বাচ্চুর সঙ্গে সম্পর্ক। তখন বাচ্চু সঙ্গীতশিল্পী ছিল না। জনপ্রিয় ব্যান্ডদল সোলসের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিল। দুর্দান্ত গিটার বাজাত। গিটারে ওর হাতের সঞ্চালন দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। মনে মনে ভাবতাম বিদেশে এ ধরনের যন্ত্রশিল্পী থাকলে তার খ্যাতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ত। শুধু গিটারের ঝঙ্কারই নয়, সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেও বাচ্চু ছিল সফল এবং জনপ্রিয়। দেখা হতো কম, কথা হতো বেশি। ও ব্যস্ত থাকত আমিও ব্যস্ত। আমরা থাকতাম পাশাপাশি বাড়িতে। আগে ছিল মগবাজার। হঠাৎ একদিন ফোন করে বলল, ‘আমি তোর পাশে এসেছি’। অবাক হলাম শুনে। তখন বলল এখন থেকে সে ধানম-িতে আমার প্রতিবেশী। পরদিনই সপরিবারে বাসায় এলো। অনেক গল্প হলো। ওর প্রাণ খোলা হাসিটা কখনই ভুলতে পারব না। আমাদের মধ্যে একটি আত্মিক যোগাযোগ ছিল। ওকে আমি কখনই গম্ভীর থাকতে দেখিনি। মৃত্যুর একদিন আগেও রংপুরে অনুষ্ঠান করে এসেছে। কে জানত পরদিনই বাচ্চু আমাদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চলে যাবে না-ফেরার দেশে। আসলেই আইয়ুব বাচ্চু বেশ অসময়েই চলে গেল। বাচ্চুর এই অকাল প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। বাচ্চুর আত্মার শান্তি কামনা করছি। হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল : আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে জানাচ্ছি- বাংলা গানের বরপুত্র , আমাদের প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু আর আমাদের মাঝে নেই। সবাই মরহুমের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করবেন । মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : দুইজন বড় মানুষের মৃত্যুর খবর আমি পেয়েছি বিদেশে বসে। দুইজনই আমাদের শৈশব কৈশোর জুড়ে ছিলেন এবং দুইজনের মৃত্যুর দিনই রেস্টুরেন্টের বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল। হুমায়ূন আহমেদের সময় আমি, রিপন, আর ইমাম লী ছিলাম সিওলের রেস্টুরেন্টে বসা। আর আজকে বাচ্চু ভাইয়ের দিন আমি ব্যাঙ্কক। বৃষ্টির জানা আছে বেদনার ভাষা। প্রীতম আহমেদ : শত শত স্মৃতি আপনাকে নিয়ে। কোনটা রেখে কোনটা বলব। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি নেই। বাচ্চু ভাই, বাংলা গান যতদিন থাকবে আপনি ততদিন সবার হৃদয়ে থাকবেন। মনির খান শিমুল : সকাল থেকেই বারবার কানে বাজছে দেখা হলেই দুষ্টু হেসে বলতেন ‘যতই লম্বা হস সারাজীবন মাথা নিচু করেই কথা বলতে হবে লম্বু তুই খাটো হ মাথা নিচু কর তা না হলে কিন্তু তোর সঙ্গে ছবি তুলব না’। দরজার ওপাশে ভাল থাকবেন বাচ্চু ভাই, মিস করব আপনাকে যতদিন বেঁচে আছি। চিরকুট ব্যান্ড : আমাদের গানের পাখি, বাংলা ব্যান্ডের কিংবদন্তি আমাদের আইয়ুব বাচ্চু ভাই, এলআরবির আইয়ুব বাচ্চু ভাই, বাংলাদেশের আইয়ুব বাচ্চু ভাই আমাদের সবার মাথার ছায়া এবি আর নেই! আজ বাংলাদেশের কষ্টের দিন, কাঁদার দিন। আজ পৃথিবীর কষ্টের দিন। সৃষ্টিকর্তা আমাদের ভালবাসার, আদরের, শ্রদ্ধেয় প্রিয় এই শিল্পীর আত্মার শান্তি দিন। আমিন! ওমর সানী : ছবিটির দিকে একবার তাকান- তাহলে যে কেউ একটা কথায় মনে মনে আমার সঙ্গে বলে উঠবেন-এমন করে আর কে বাজাবে ‘রুপালি গিটার’!! গিটার জাদুকরের এমন চলে যাওয়ার খবর মেনে নেয়া যায় না। আমিও মেনে নিতে পারছি না। উনার মৃত্যুর সংবাদ জানার পর থেকে অতীতের অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে। অনেক দ্রুত এমন লিজেন্ড একজন শিল্পীকে হারালাম আমরা। আল্লাহ তাকে বেহেশত দান করুন- আমিন। আব্দুন নুর তুষার : আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। ছাত্রলীগ মেডিক্যাল কলেজ শাখার নবীনবরণ। মঞ্চে আমাকে দেখে বাচ্চু ভাই বললেন, কি ডাক্তার। আমি তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমাকে প্রথম ডাক্তার বলে ডেকেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। এরপর আর সেই ডাক কখনও বদলে যায় নাই। বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে একাধিকবার আমি মঞ্চে ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’ গানটি গেয়েছি। এটা গাওয়ার সময় তিনি, আমি দর্শকে আছি জানলেই মঞ্চে ডাকতেন। বিরাট শব্দে স্পীকারে ডাক্তার শব্দটা শুনবই। এখন বুঝতে পারছি কেন আপনি বারবার বলার পরেও আপনার অসুস্থতার কোন কাগজ আমাকে দেখতে দেন নাই। হার্টের ক্যাপাসিটি ৩০% এ চলে এসেছে দেখলে আমি আর আপনাকে এভাবে মঞ্চে গাইতে দিতাম না। আপনি গানের মধ্যে থাকতে চেয়েছিলেন। একদিন কোন এক বেদনার মুহূর্তে বলেছিলেন, ডাক্তার, গিটার ছাড়া তো আর কিছু পারি না। বাচ্চু ভাই, আপনার প্রায় সব গান আমার মুখস্থ। এত কোটি মানুষকে জীবনে আনন্দ আর বেদনার সময় গান গেয়ে ভাল রেখেছেন তাদের দোয়া আপনাকে বহুদূরের সেই দেশে ভাল রাখবেই। বেঁচে থাকলে প্রিয়বিয়োগের বেদনা হবেই। আপনার না থাকার বেদনা বাকি সময় বহন করতেই হবে আমাকে। এখনও আপনার গান শুনছি বহুদূর যেতে হবে। ভালবাসা।
×