ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খাশোগি হত্যাকান্ডে দায়ী সৌদি নেতাদের প্রতি ট্রাম্প

পরিণতি হবে মারাত্মক

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২০ অক্টোবর ২০১৮

পরিণতি হবে মারাত্মক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, তিনি অনুমান করছেন যে জামাল খাশোগি মারা গেছেন। এই ঘটনায় যদি সৌদি আরবের নেতারা নির্দেশ দিয়ে থাকেন তবে তার পরিণতি মারাত্মক হবে। সৌদির পরিণতি খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনও বয়কট করছে। জামাল খাশোগি খুনের ঘটনার পেছনে সৌদি আরব জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ করে ব্রিটিশ, ফরাসী ও ডাচ অর্থমন্ত্রীরা সম্মেলন বয়কট করেন। তুর্কী পুলিশ তাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে। এজন্য তারা সৌদি কনস্যুলেটের নিকটবর্তী বন ও খামারগুলোতে অনুসন্ধান চালিয়েছে। কর্মকর্তাদের ধারণা হয়ত সেখানে খাশোগির মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এদিকে ইস্তানবুল কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ আল-ওতাইবিকে বরখাস্ত করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। খবর বিবিসি, গার্ডিয়ান ও ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড অনলাইনের। সরকারের এক বিবৃতিতে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোহাম্মদ আল-ওতাইবি তুরস্ক ছেড়ে চলে গেছেন। তাকে এখন তদন্তের মুখোমুখি হতে হবে। খাশোগিকে নির্যাতনের সময় রেকর্ড হওয়া এক অডিওতে তাকে বলতে শোনা গেছে, বাইরে এটি করুন। আপনারা দেখছি আমাকে বিপদে ফেলবেন। সাত মিনিটের ওই অডিও ক্লিপিংয়ে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া গেছে। ওই অডিও ক্লিপিংয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগিকে চিৎকার করতে শোনা গেছে। খাশোগি ইস্যুতে ট্রাম্প ইতোমধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে সৌদি আরব ও তুরস্কে পাঠিয়েছেন। রিয়াদ ও আঙ্কারা সফর শেষে পম্পেও বিষয়টি নিয়ে এক প্রতিবেদন দিয়েছেন ট্রাম্পের কাছে। এরপরই তিনি খাশোগির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তিনি এর পাশাপাশি এও বলেন যে, প্রকৃত ঘটনা কী ঘটেছে তা তিনি এখনও জানতে চান। খাশোগি মারা গেছেন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, এটা আমার কাছে তেমনটাই মনে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সাক্ষাতকারে ট্রাম্প গোয়েন্দা প্রতিবেদনে খাশোগি হত্যায় সৌদি আরবের শীর্ষ পর্যায়ের হাত রয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেন। এর পেছনে কে রয়েছে সে বিষয়ে এখনই সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে যাওয়া বেশ তাড়াহুড়া হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তদন্তের জন্য তিনি সৌদিকে আরও সময় দিয়েছেন। গত ২ অক্টোবর ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক খাশোগি তার তুর্কী বাগদত্তাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করেন। তিনি সেখানে তার প্রথম বিয়ের তালাকের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। ওই দিন বিকেলে তার বাগদত্তা হেতিজ চেঙ্গিস জানান, খাশোগি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর আর সেখান থেকে বের হননি। তুরস্কের দাবি, খাশোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হত্যার পর তার লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে। যদিও সৌদি আরব তুরস্কের এই দাবিকে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তুরস্ক অবশ্য ইতোমধ্যে সৌদি কনস্যুলটে তল্লাশি চালিয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা বুধবার জানিয়েছেন, সম্ভবত ইস্তানবুলের কাছাকাছি কোন বনের ভেতরে খাশোগির লাশ পুঁতে ফেলা হয়েছে। গত সপ্তাহে কনস্যুলেট থেকে সংগ্রহ করা নমুনা খাশোগির ডিএনএর সঙ্গে মিলে কি না তা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। অপর এক খবরে তুরস্কের উর্ধতন কর্মকর্তা এবিসি নিউজকে জানিয়েছেন যে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সাংবাদিক খাশোগি হত্যার অডিও রেকর্ডিং শোনানো হয়েছে। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি কোন অডিও রেকর্ডিং শোনেননি। এমনকি তিনি কোন অনুলিপিও দেখেননি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে খাশোগি হত্যা তদন্তের জন্য আরও কিছুদিন সময় সৌদি আরবকে দিতে বলেছেন পম্পেও। এরপরই সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন তার সৌদি সম্মেলনে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন বলে জানান। জামাল খাশোগি খুনের ঘটনার পেছনে সৌদি আরব জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগের মধ্যে একের পর এক দেশের মন্ত্রীরা সম্মেলন বয়কট করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। মার্কিন অর্থমন্ত্রীও এবার একই কাতারে শামিল হলেন। এর আগে মার্কিন অর্থমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেওর সঙ্গে আলাপের পরই সৌদি সম্মেলনে যাওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে জানিয়েছিলেন। এ কারণেই তার সিদ্ধান্তটি এলো পরে। মনুচিন সরে যাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে সৌদি আরবের বিনিয়োগ সম্মেলন। ‘দ্য ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক এ সম্মেলন সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তার সংস্কার কর্মসূচী ‘ভিশন ২০৩০’ এগিয়ে নিতে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। বিনিয়োগ সম্মেলনকে ‘ডাভোস ইন দ্য ডেজার্ট’ বা মরুভূমির ডাভোস উন্নয়ন সম্মেলন বলে অভিহিত করা হয়েছে। যুবরাজ বিন সালমানের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচীর একটি শোকেস ইভেন্ট বলে ধরা হয় একে। কিন্তু বিশ্বের বাণিজ্য, গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি জগতের বহু দিকপালই এখন এই সম্মেলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সম্মেলন বয়কটের পথে বেশিরভাগ লোক তাদের সিদ্ধান্ত জানালেও গোল্ডম্যান সাক্স, পেপসি ও ইডিএফ-এর মতো বেশ কিছু বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও এতে যোগ দিতে ইচ্ছুক। সম্মেলন বয়কট করার জন্য তাদের ওপর চাপ বাড়ছে বলে জানা গেছে।
×