ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চোখের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানালেন ভক্তরা

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২০ অক্টোবর ২০১৮

 চোখের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায়  জানালেন  ভক্তরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে অগণিত ভক্তকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন সনাতন ধর্মবলম্বীদের অন্যতম দেবী দুর্গা। শুক্রবার বিজয়া দশমীর দিনে তাকে চোখের জলে বিদায় জানান ভক্তরা। এই বিদায়ের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজার ৫ দিনব্যাপী উৎসব। বিদায়ের দিনে দশমীর পূজায় ভক্তদের অনেকেই বিষণ্ণ মনে মন্ডপে মন্দিরে উপস্থিত হয়েছিল। বিদায়ের আগে দশমীতে সকাল থেকে দশমী বিহিত পূজা আর দর্পণ বিসর্জনের পর মঙ্গল কামনা করে চলতে থাকে সিঁদুর খেলা। বিজয়া দশমীর পূজা শেষে শোভাযাত্রা সহকারে বুড়িগঙ্গা ওয়াইজঘাটের বিনাস্মৃতি স্নান ঘাটে এবং আগানগরের ব্রিজ ঘাট এলাকায় বিসর্জন দেয়া হয়। এর আগে শুক্রবার সকালে দশমীর পূজারম্ভের মাধ্যমে শুরু হয় দেবীর আরাধনা। এরপর দর্পণ বিসর্জন ও শান্তির জল গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দশটার পর থেকে চলে মাকে সিঁদুর পরানোর কাজ। সব রীতিনীতি শেষে বিসর্জনের আগে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। সব বয়সী ভক্তরা এই শোভাযাত্রা অংশ নেয়। শোভাযাত্রা গিয়ে শেষ হয় বুড়িগঙ্গায়। বুড়িগঙ্গার ওয়াইজ ঘাট এলাকার বিনাস্মৃতি স্নান ঘাট, আগানগরের ব্রিজঘাট এলাকায় প্রতীমা বিসর্জন দেয়া হয়। ঢাকা শহরের যেসব প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছিল যেগুলো বেশিরভাগই শোভাযাত্রা সহকারে বুড়িগঙ্গায় নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জনের জন্য। ঢাকা মহানগর ছাড়াও কেরানীগঞ্জ এলাকার প্রায় দেড়শ’ প্রতিমা এই ঘাটে বিসর্জন দেয়া হয়। এদিকে গুলশান বনানীর প্রতিমা ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার ঘাটে নিয়ে বিসর্জন দেয়া হয়। শুক্রবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিট পর থেকে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নেয়া হয় ঘাট এলাকায়। ওয়াইজঘাটের বিনাস্মৃতি স্নœানঘাটে রথখোলা রোডের মরণচাঁদ ম-পের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবীকে বিদায় জানানোর পর্ব শুরু হয়। রাত ১০টার আগের প্রতিমা বিসর্জনের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ ছিল। সেই অনুযায়ী ভক্তরা প্রতিমা বিসর্জনের কাজ সম্পন্ন করেন। প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে সদরঘাট এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। প্রতিমা বিসর্জনের সময় পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। আগ থেকে সব প্রতিমা নির্বিঘেœ বিসর্জনের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়। মহানগরীর অর্ধেকের বেশি প্রতিমা বিনাস্মৃতি স্নানঘাটে বির্সজন দেয়া হয়। তবে আশুলিয়ার তুরাগ পাড়েও অনেক প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। ডেমরা, পোস্তগোলা ঘাটেও হয় বিসর্জন। তবে কেরানীগঞ্জে শুভাঢ্যা খাল শুকিয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলকায় অনেকেই নিজস্ব পুকুর ডোবা, খালেও প্রতিমা বিসর্জন দেন। এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুক্রবার বিজয়া দশমীর দিনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় তিনি দেশের শান্তি ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি রোধে ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বারবার দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন ব্যাহত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সকল ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সকল অপতৎপরতা সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এটিই হবে আজকের এই দুর্গাপূজার অঙ্গীকার। মানবতাকে ধর্মের শাশ্বত বার্তা হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ ধর্মীয় বিধি বিধান মেনে চলতে এবং একই সঙ্গে মানবতার কল্যাণে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বলেন, দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় উৎসবই নয়, এটি একটি সামাজিক উৎসবও। যা সকল জনগণের মধ্যে ঐক্যের সেতুবন্ধন গড়ে তোলে। এ জন্যই এই উৎসব সার্বজনীন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং তাঁর সহধর্মিনী রাশিদা খানম বঙ্গভবনে এই সংবর্ধনায় অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান। সংসদ সদস্য, বিদেশী কূটনীতিক, রাজনৈতিক নেতা, সম্পাদক, সাংবাদিক, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এবং বিশিষ্ট নাগরিকরাও সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন। পূজার শেষদিন বিসর্জনের আগে অনুষ্ঠিত হয় দেবীর দশমী বিহিত পূজা ও পূজান্তে দর্পণ বিসর্জন। বের করা হয় বিজয়া শোভাযাত্রা। গত ১৫ অক্টোবর সোমবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। গত মঙ্গলবার সকালে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় মহাসপ্তমী পূজা, যা দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। গত বুধবার কুমারী পূজার পর হয় মহাঅষ্টমীর সন্ধিপূজা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় বিহিত পূজার মাধ্যমে মহানবমীর আনুষ্ঠনিকতা শুরু হয়। ভক্তরা সকাল থেকে নগরীর পূজা মন্ডপগুলোয় ঘুরে-ঘুরে দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ ও পূজা-অর্চণা করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাস মতে, অন্যবারের ন্যায় এবারও ষষ্ঠীর দিনে ঢাকঢোল আর কাঁসরের ধ্বনির মাঝে কন্যারূপে বাবার বাড়ি বেড়াতে আসেন দেবী দুর্গা। ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পাঁচ দিনব্যাপী মাকে ঘিরে প্রার্থনা, উৎসব আর আনন্দে মত্ত ছিল ভক্ত-অনুরাগী। অবশেষে শুক্রবার বাবার বাড়ি ছেড়ে শুক্রবার বিজয়া দশমীতে মর্ত্য ছেড়ে আবারও কৈলাসে ফিরে যান দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। অগনিত ভক্তদের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে, এ বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ২৭২টি মন্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। যা গতবারের তুলনায় ১ হাজার ১৯৫টি বেশি। এর মধ্যে রাজধানীতে ছিল ২৩৪টি ম-প। এবারের দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করে। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে শারদীয় এই দুর্গোৎসবে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
×