ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বি চৌধুরীসহ তিন নেতাকে অব্যাহতির ঘোষণা দিলেন বহিষ্কৃত নেতা

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২০ অক্টোবর ২০১৮

 বি চৌধুরীসহ তিন নেতাকে অব্যাহতির ঘোষণা দিলেন বহিষ্কৃত নেতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের আশির্বাদপুষ্ট ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যোগসাজশের দায়ে বিকল্পধারা থেকে বহিষ্কৃত এক নেতাসহ দুইজন এবার দাবি তুলেছেন, আমরাই বিকল্পধারার মূল ধারার নেতা। এক সপ্তাহ আগে বহিষ্কার হওয়া নেতার সঙ্গে থাকা দ্বিতীয়জনও দল থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন তিন বছর আগে। অথচ এই দুই নেতাই শুক্রবার বিকল্পধারার সভাপতির পদ থেকে ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব) আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীকে অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে দলের কোন পদ না থাকা ব্যক্তিদের কর্মকা- নিয়ে মাথাঘামাতে রাজি না হলেও ঘটনাকে ‘হাস্যকর’ অভিহিত করে মাহি বি চৌধুরী বলেছেন, এটা বিএনপির দেউলিয়াপনার বহির্প্রকাশ। নিজেকে নেতা ঘোষণার পেছনে বিএনপির হাত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেছেন, দলের বহিষ্কৃত নেতাকে নিয়ে এসব কাজ করা নোংরামি ছাড়া আর কিছু নয়। এখন তাদের এ ধরনের ঘটনা হাস্যরসের খোরাকও জোগায়। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এসে নতুন কমিটি গঠনের কথা সাংবাদিকদের জানান গত ১৩ অক্টোবর বিকল্পধারা থেকে বহিষ্কৃত এ্যাডভোকেট শাহ আহম্মেদ বাদল। নিজেদের বিকল্প ধারার ‘মূল ধারা’ হিসেবে দাবি করে তিনি শিগগিরই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ারও ঘোষণা দেন। বিএনপিকে নিয়ে গঠিত কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেয়ায় পর তার বিরোধিতা করেছিলেন বিকল্প ধারার এ নেতা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের দিনই দলের সহসভাপতি বাদলসহ কয়েকজনকে বহিষ্কার করেন বিকল্প ধারা সভাপতি বি চৌধুরী। বাদল বলেন, আজকে শুক্রবার আমাদের জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ছিল। এসে দেখি তা বাতিল করা হয়েছে। কার ইশারায় আমাদের নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হলো, তা আমরা জানি না। আমরা গঠনতন্ত্রের ৫/২ ধারা অনুযায়ী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (সভাপতি), আবদুল মান্নান (মহাসচিব) ও মাহি বি চৌধুরীকে (যুগ্ম মহাসচিব) দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরাই বিকল্প ধারার মূল ধারা। তিনি জানান, তারা বিকল্প ধারার সভাপতিম-লীর সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারীর নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠন করেছেন। অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারীকে পাশে রেখে বাদল বলেন, অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী সভাপতি আর আমি মহাসচিব। অন্যান্য পদে কয়েকদিনের মধ্যে আমরা মনোনয়ন দেব। শৃঙ্খলাভঙ্গ করে থাকলে বি চৌধুরীকে বহিষ্কার কেন করলেন না- প্রশ্ন করা হলে বাদল বলেন, উনি শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, সেজন্য তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা শিগগিরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হব। শাহ আহম্মেদ বাদল বলেন, বিকল্পধারার তিনজন বাদে সবাই আমাদের সঙ্গে আছেন। আমরা নতুন কমিটির প্রেসিডেন্ট ও মহাসচিবের নাম আজ শুক্রবার ঘোষণা করলাম। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম ঘোষণা করা হবে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের শিক্ষক নেতা অধ্যাপক নুরুল আমিন বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহি চৌধুরীকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো। জামায়াত প্রশ্নে বি চৌধুরী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যাননি, আপনারা কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দলের কেউ জামায়াতকে সমর্থন করে না। এটা মাহি চৌধুরীর কূটচাল। মেজর মান্নানের দুর্নীতির খবর বের হয়েছে। কোন দুর্নীতিবাজ বিকল্প ধারায় থাকতে পারে না। এদিকে বিকল্পধারার সভাপতি ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বক্তব্য না পাওয়া গেলেও তার প্রেসসচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই দুইজনকে আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের এই ঘোষণাই অবৈধ। মহাসচিব অবদুল মান্নান বলেন, শাহ আহম্মেদ বাদলকে আমরা দল থেকে বহিষ্কার করেছি। আর নুরুল আলম ব্যাপারী গত ৪ বছর দলে নিষ্ক্রিয়। সুতরাং তাদের এই কমিটিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। তার কোন প্রতিবাদও করব না। তবে দুই জনের নিজেকে নেতা ঘোষণার পেছনে বিএনপির হাত দেখছেন মাহি বি চৌধুরী। বলেছেন, দলের বহিষ্কৃত নেতাকে নিয়ে এসব কাজ করা নোংরামি ছাড়া আর কিছু নয়। দলের সভাপতিকে কারা অব্যাহতি দিতে পারে? মাহি আরও বলেন, এটা হাস্যকর। আর এ নিয়ে মন্তব্য করাটাও হাস্যকর হবে। এ ঘটনার পেছনে বিএনপির ইন্দন আছে বলেও শুনতে পাওয়ার কথা জানান মাহি। বলেন, বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো কতটা দেউলিয়াপনার পরিচয় দিচ্ছে, এ ঘটনা তারই দৃষ্টান্ত। মাহি জানান, যারা তাদের অব্যাহতি দেয়ার কথা জানিয়েছেন তারা বিকল্পধারারই কেউ নন। যারা নতুন করে একটা দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন, তারা সবাই বহিষ্কৃত। বহিষ্কৃতরা মিলে এভাবে একটা দল গঠন করেছে। মাহি বলেন, এর পেছনে কারা আছে, সেটা আমরা জানি। এটা আসলে একটা নোংরা রাজনীতির নিদর্শন। রাজনৈতিকভাবে যারা দেউলিয়া, তারা এই ধরনের কাজ করেই থাকেন। একজন তিন বছর আগেই বিকল্পধারা থেকে নিজেই পদত্যাগ করেছিলেন। বাকি দুইজন বহিষ্কৃত। এখন তাদের এ ধরনের ঘটনা হাস্যরসের খোরাক জোগায়।
×