ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় সেরেনা উইলিয়ামস

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় সেরেনা উইলিয়ামস

সেরেনা উইলিয়াম মহিলাদের টেনিস তারকা হিসেবে কিংবদন্তিতুল্য। ইতোমধ্যে ২৩টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ী হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর আর্থার এ্যাশ স্টেডিয়ামে যুক্তরাষ্ট্রের এই নারী টেনিস তারকা ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন চীনের নবাগত তারকা নেয়োমি ওসাকার সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্র অপেন টেনিসের ফাইনালে সেদিন জেতা হয়নি সেরেনা উইলিয়ামসের। ওসাকার কাছে হেরে যান ৬-২, ৬-৪-এ। খেলায় হারজিত থাকবে কিন্তু সেদিনের খেলায় সেরেনা মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি। জড়িয়ে পড়েন চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে ঝামেলায়। ম্যাচ চলাকালে ক্রুব্ধ সেরেনা ‘চোর’ বলে বসেন কার্লোস র‌্যাসোসকে। সে কারণে শাস্তি পেতে হয় সর্বকালের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড়কে। জরিমানা হিসেবে ওসাকাকে একটি গেম দিয়ে দেন আম্পায়ার। আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্তটি ফাইনালে হেরে যাওয়ার বড় কারণ হিসেবে মনে করেন টেনিসের এই রানী। খেলায় হেরে গিয়ে সেরেনা আলিঙ্গন করেছেন ওসাকার সঙ্গে। অবশ্য খেলা শেষে সেরেনা বলেন, ‘পুরুষ খেলোয়াড়েরা অনেকে অনেক কিছু বলেন আম্পায়ারকে। কিন্তু এখন এ রকম শাস্তি পেতে হয় না। আমি মেয়ে বলে আমাকে এই শাস্তি পেতে হলো। আমার থেকে একটা গেম নিয়ে নেওয়া হলো। আমি এখানে শুধু নিজের জন্য নয়, মেয়েদের অধিকার নিয়ে লড়াই করেছি।’ টেনিস ফাইনালে এই ধরনের বিতর্কিত ঘটনার পরে সমালোচনার ঝড় ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু সেরেনা এতে দমে যায়নি। ভুলে যেতে চেয়েছেন সব কিছু। তাই ফাইনার খেলার পর দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরেনাকে দেখা গেল অন্য ভূমিকায়। নারীদের স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় শুরু করেন নতুন ধরনের প্রচারণা। এর মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করলেন মেয়েদের অধিকারেই তিনি শুধু সচেতন নন তিনি মহিলাদের ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু একটা করতে চান। তাই স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তিনি একটি মিউজিক ভিডিওয় টপলেস অবস্থায় গান গেয়েছেন। বিষয়টি নারীদের সচেতন করবে পাশাপাশি সেরেনাকে বিশে^র মানুষ চিনতে পেরেছে এক অনন্য পরিচয়ে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর বিশে^ ১৫ লক্ষাধিক নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং প্রতি লাখে ১৫ জন নারী মারা যান। আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠানিকভাবে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা রেকর্ড করা না হলেও, পাশর্^বর্তী দেশের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, ৩০ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। উন্নত বিশে^ অধিকাংশ নারী যেখানে ৫০ বছরের কাছাকাছি বয়সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, আমাদের দেশে সেখানে ৪০ শতাংশের বেশি নারী ৫০ বছর বয়সে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। সারা বিশে^ও বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারের যখন এই অবস্থা তখন সেরেনা উইলিয়ামের সচেতনতামূলক মিউজিক ভিডিওটি বেশ আলোড়ন তুলেছে সর্বস্তরে। নারীদের জন্য নিয়ে এসেছেন নতুন বার্তা। স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেনতামূলক যে মিউজিক ভিডিও তা নয়ের দশকের জনপ্রিয় গান ‘আই টাচ মাইসেল্ফ’ গেয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস। অক্টোবর মাসকে চিহ্নিত করা হয়েছে স্তন ক্যান্সারের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য। এই প্রজেক্টের নাম ‘আই টাচ মাইসেল্ফ’। মহিলারা যেন নিয়মিত স্তনের পরীক্ষা করান সে কারণেই সেরেনা গেয়েছেন এই গান। এই গানটি এক সময় গেয়েছিলেন ‘ডিভিনাইলস’-এর গায়িকা ক্রিসি এ্যাম্পলেট। যিনি ২০১৩ সালে ৫৩ বছর বয়সে স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন। ইনস্টাগ্রামে এই ভিডিও সম্পর্কে সেরেনা লিখেছেন, ‘মহিলারা যাতে নিজেদের সম্পর্কে সতর্ক থাকেন, সেটা মনে করিয়ে দেওয়াই ভিডিওর উদ্দেশ্য।’ টপলেস অবস্থায় গান গাওয়া প্রসঙ্গে সেরেনা বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা আমার কমফোর্ট জোনের বাইরের ব্যাপার। তবে এটা আমি করতে চেয়েছিলাম। কারণ এটা এমন ইস্যু, যা জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিশ^জুড়ে সমস্ত মহিলাদের কাছে সমস্যা। দ্রুত এটা ধরা পড়া জরুরী। তা হলে অনেক প্রাণ বাঁচবে। আশা করছি, এই ভিডিও মহিলাদের তা মনে করাবে। ক্ষণিকেই নারীদের কাছে তরঙ্গের মতো পৌঁছে গেছে সেরেনার সেই বার্তা। দুই সপ্তাহের আগে টেনিস কোর্টে তিনি যেভাবে ব্যাট ছুড়ে মেরে চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তার স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় তা ক্ষণিকেই তার মহানুভবতার দিকটিই ফুটে উঠেছে। টেনিস কোর্টের বইরেও স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় সেরেনাকে পাওয়া গেছে বিজয়ী নারীর ভূমিকায়। সেরেনাকে নারীরা প্রতিনিয়ত দেখতে চায় এই একই ভূমিকায়।
×