স্টাফ রিপোর্টার ॥ ড. কামালের নেতৃত্বে বৃহত্তর জোট গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিদেশী কূটনীতিকদের জানাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ সময় ফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সেই সঙ্গে তিনি তার লিখিত বক্তব্যে কূটনীতিকদের কাছে ৭ দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্য তুলে ধরেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোতে বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে কূটনীতিকদের কাছে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নালিশ করেছেন বলে জানা গেছে। বএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে কি কি করা উচিত তা কূটনীতিকদের সামনে তুলে ধরেন। এরপর ড. কামাল হোসেন লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তার বক্তব্যে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে কি কি করা উচিত তা তুলে ধরেন। এরপর কূটনীতিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলে এর জবাব দেন ড. কামাল হোসেন।
বৈঠককালে বিদেশী কূটনীতিকরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হলে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। এ প্রশ্নের উত্তরে ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।
ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানান, ঐক্যফ্রন্টের কাছে কূটনীতিকদের প্রধান প্রশ্ন ছিল তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। তবে বর্তমান সরকারের আমলে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাই আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ চাই। কূটনীতিকরা আরও জানতে চান নবগঠিত এই জোটের মূল নেতা কে? এ প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, এখানে কোন একক নেতৃত্ব নেই। যৌথভাবেই এই জোট পরিচালিত হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তিনি কারাগারে থাকলে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে কি না সেটাও জানতে চান কূটনীতিকরা। এ প্রশ্নর জবাবে ড. কামাল কূটনীতিকদের জানিয়েছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তারা অবশ্যই নির্বাচনে যাবেন। এ সময় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে থাকা জামায়াত এবং ঐক্যফ্রন্টে স্থান না পাওয়া সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা নিয়েও ঐক্যফ্রন্টের স্পষ্ট অবস্থান জানতে চান কূটনীতিকরা। এ প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, এরই মধ্যে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে ঐক্যফ্রন্টের বক্তব্য উঠে এসেছে। এর বাইরে তারা আর কোন মন্তব্য করতে চান না।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে বৈঠকের আলোচ্যসূচী নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। এখনই বলার সময় হয়নি। পরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, আমরা বিদেশীদের সঙ্গে ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। এসব দাবি আমরা তাদের কাছে তুলে ধরেছি। কূটনীতিকরা কী বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা কী ভাবছে, সেটা তারাই বলতে পারেন। আপনারা তাদের কাছ থেকেই জেনে নিতে পারেন।
ঢাকায় কর্মরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, জার্মানী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, ভিয়েতনাম, সৌদি আরব, কোরিয়া, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্ব¦র চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমদ, ইনাম আহমদ চৌধুরী, দলের পররাষ্ট্রবিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, জাসদ (জেএসডি) সভাপতি আসম আব্দুর রব, সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণ ফোরামের নেতা সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ প্রমুখ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: