ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীতে নেতারা ঘুরছেন মণ্ডপে মণ্ডপে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

রাজশাহীতে নেতারা ঘুরছেন মণ্ডপে মণ্ডপে

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে রাজশাহীতে এখন ভোটের রাজনীতি বেশ সক্রিয়। ভোটের আগে বিভিন্ন উৎসব এলেই সক্রিয় হন রাজনৈতিক নেতারা। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চলমান শারদীয় দুর্গোৎসবই সবচেয়ে বড় উৎসব আয়োজন। তাই এ উৎসবে শামিল হয়ে নিজেদের পক্ষে আওয়াজ তোলার মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না কেউ। সবাই এখন তাই দুর্গোৎসবমুখী। প্রতিদিন দলবল নিয়ে যাচ্ছেন এ ম-প থেকে সে ম-পে। খোঁজখবর নিচ্ছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। অনেক নেতা শোডাউনের মাধ্যমেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। ব্যানার ফেস্টুনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারা। রাজশাহী জেলার সংসদীয় ছয়টি আসনের বর্তমান এমপিরা ছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন যুদ্ধে সক্রিয়। রাজশাহীর এসব আসনে এখনও বিএনপি ও অন্য দলের নেতাদের তেমন আনাগোনা শুরু না হলেও মাঠে সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রতিটি আসনেই বর্তমান এমপি ছাড়াও একই দলের একাধিক নেতা মনোনয়নের আশায় মাঠে নেমেছেন। এখন পূজামুখী যেন সবাই। নিজ নিজ এলাকার পূজাম-পে ধর্না দিচ্ছেন নেতারা। কর্মী-সমর্থক নিয়ে নেতাদের ভারে কখনও কখনও ভরপুর হয়ে উঠছে রাজশাহীর পূজাম-প। এক নেতা আসছেন তো আরেক নেতা যাচ্ছেনÑ এভাবেই চলছে ম-পকেন্দ্রিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণা, ভোটের রাজনীতি। রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন রাজশাহী-১। এ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। গত মেয়াদে সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। একাদশ নির্বাচনেও তিনি দলের প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন চাইবেন। শুরু থেকেই মাঠে সক্রিয় রয়েছেন তিনি। এবারো তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত- এমনটা ভেবে মাঠে রয়েছেন সক্রিয়। বর্তমান এমপি হওয়ার সুবাদে এলাকার মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগটা তার বেশি। এলাকায় উন্নয়ন কর্মকা-ের অংশ হিসেবে প্রতিদিন থাকছেন নিজ এলাকায়। শারদীয় উৎসব শুরুর পর প্রতিদিনই ছুটছেন বিভিন্ন পূজাম-পে। এ আসনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে এবার মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক। গত কোরবানির ঈদেও তিনি মাঠে সক্রিয় ছিলেন। তবে ইদানীং মাঠে দেখা মিলছে না তার। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের অপর নেতা তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এখানে একই দলের আরও কয়েক নেতা থাকলেও মাঠে রয়েছেন মাত্র দুজন। এরা হলেন বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ও পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী। এখন দুজনই নেতাকর্মীদের নিয়ে পৃথকভাবে পূজাম-পে যাচ্ছেন প্রতিদিন। রাজশাহী নগর নিয়ে সদর আসন। এখানে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে এবারো এ আসনটি তার জন্য নির্ধারিত। নিশ্চিত মনোনয়ন যেনে তিনিও মাঠে রয়েছেন সক্রিয়। শারদীয় উৎসবে তিনিও শামিল হয়েছেন। বাদশা বলেন, আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ^াসী। সব উৎসবেই তার অংশগ্রহণ থাকে। এবারো তিনি বিভিন্ন মণ্ডপে যাচ্ছেন। মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। রাজশাহী সদর আসনে আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার মনোনয়নের আশায় মাঠে রয়েছেন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু ও রাসিকের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নাম শোনা গেলেও ভোটের মাঠে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন তারা। নিজেদের দলীয় ঘরোয়া অনুষ্ঠান ছাড়া মাঠে কোন তৎপরতা নেই তাদের। পবা ও মোহনপুর উপজেলার তিনটি পৌরসভা এবং ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এক ডজন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলে দুজন ও বিএনপিতে একজন এগিয়ে রয়েছেন। এখানে বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন সক্রিয় রয়েছেন। তবে এ আসনে এবার মনোনয়ন চান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি মাঠে রয়েছেন। ভোটের মাঠে ছুটছেন প্রতিদিন। পূজাম-পেও ঢুঁ দিচ্ছেন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের নাম শোনা গেলেও মাঠে পিছিয়ে রয়েছেন তিনি। রাজশাহীর সবক’টি আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে সক্রিয় থাকলেও দেখা মিলছে না বিএনপি ও অন্য কোনও দলের নেতাদের। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৪ আসনেও আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী এবার মনোনয়ন যুদ্ধে। এ আসনে এবারো মনোনয়ন নিশ্চিত বর্তমান এমপি এনামুল হকের। তবে এ আসনে এবার মনোনয়ন চান আরও দুজন নেতা। এরা হলেন উপজেলা চেয়ারম্যান জকিরুল ইসলাম সান্টু ও উপজেলার তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ। তারা পৃথকভাবে নানা কর্মসূচী ও দলীয় আয়োজন পালন করছেন। এবার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রাজা কংস নারায়ণের মন্দিরে স্থায়ী বোঞ্জ প্রতিমা সংযুক্ত করে আলোচনায় এসেছে এমপি এনামুল হক। অনেকে বলছেন, এলাকার উন্নয়নের জন্য এবারো এনামুল যোগ্য প্রার্থী। তিনি এখন ভোটের মাঠে সক্রিয়। ভোটের মাঠে, পূজার ম-পে ঘুরছেন ফুরফুরে মেজাজে। রাজশাহীর পুঠিয়া দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৫ আসন। এখানে এক সময় প্রভাবশালী এমপি ছিলেন বিএনপির নাদিম মোস্তফা। ২০০৮ সালের পর থেকে তিনি এলাকা থেকে প্রায় বিতাড়িত। এবারেও তিনি দলের মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে মাঠে দেখা নেই তার। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা সক্রিয় রয়েছেন মাঠে। তৃণমূলে মিশতে নানা উন্নয়ন কর্মকা- করে যাচ্ছেন। তবে এ আসনে একই দলের (আওয়ামী লীগ) আরও কয়েক নেতাও সক্রিয় রয়েছেন। মনোনয়নের আশায় মাঠে সক্রিয় থেকে এখন চোষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ, ভোটারের বাড়ি আর বর্তমানে পূজাম-প। এদের কাতারে রয়েছেন জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান, তরুণ ব্যবসায়ী আসিফ ইবনে তিতাস ও আওয়ামী লীগ নেতা আহসানুল হক মাসুদ। গত ১০ বছরে উন্নয়নে এগিয়ে থাকা রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৬ আসনে এবারো বর্তমান এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমে নির্ভার দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় এ দুই উপজেলায় তার পক্ষে কাজ করছেন নেতাকর্মীরা। এখন তারাই পূজাম-পেও বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর। এ আসনে এবারেও শাহরিয়ার আলম মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা অনেকটায় নিশ্চিত জেনে তার পক্ষে মাঠের কাজ করছেন নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ গত সপ্তাহে শাহরিয়ার আলম এলাকায় এসে কয়েকদিন সম্পৃক্ত হন মানুষের সঙ্গে। ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, দেশের সব উৎসবেই আওয়ামী লীগ সক্রিয় থাকে। ঈদে যেমন, পূজায় তেমন। মানুষের কাছে থেকে নিজেও উৎসবে শামিল হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
×