ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে বিএনপির থাকা খুবই জরুরী ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

নির্বাচনে বিএনপির থাকা খুবই জরুরী ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের জোট ঐক্যফ্রন্টে কিছু আসে-যায় না। এ নিয়ে আমাদের কোন দুশ্চিন্তা নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলের জš§দিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করতে অনেকে যোগাযোগ করছে। অলরেডি আমাদের সঙ্গে দেখা করেছে জাকের পার্টি, সাত দলীয় একটা বাম জোট- অফিসে এসে একটা আবেদন রেখে গেছে। ইসলামী ফ্রন্টের বাহাদুর শাহ, তিনিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্যে শামিল হতে চান। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিদিনই দু’একটা দল আবেদন বা দেখা করে তারা তাদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করছে। তবে আমরা এখনও এ বিষয়ে মুখ খুলছি না। সবার কথা শুনছি। আমাদের নেত্রী দেশে ফিরলে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, কাকে আমরা জোটে নেব। কাকে নেব না। আমাদের অলরেডি এদিকে ১৪ দল, ঐদিকে জাতীয় পার্টি (এ) আছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিও (এ) আমাদের সঙ্গে মহাজোট করেছে। সবাইকে নিয়ে একটা কিছু করলে নির্বাচনী মহাজোট হতে পারে। সেটা নির্ভর করবে বাস্তব পরিস্থিতির ওপর, মেরুকরণের ওপর। আমরা জোটের পরিসর বাড়াব কি বাড়াব না। অথবা জোটবদ্ধ নির্বাচন করব কিনা এটা আরও কয়েকদিন পরে সিদ্ধান্ত নেব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, অলি আহমেদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করতে চান কিনা এমন কোন কথা হয়নি। আর বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাহেবের যে যুক্তফ্রন্ট সেখানে তারা নিজেরাই বোধহয় একটা জোট করার চিন্তাভাবনা করছে বলে আমি যতটুকু জানি। তিনি বলেন, ভালই তো। আরও জোট হলে অসুবিধা তো নেই। ১৪টা হয়েছে, ২০টা, ২৫টা হলে অসুবিধা তো নেই। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জোটের ভাঙ্গা-গড়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিদিনই গড়ছে-ভাঙছে। মেকিং-ব্রেকিং দুটো বিষয় সমানে চলছে। শেষ পর্যন্ত পোলারাইজেশন, এর পর কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তার ওপর নির্ভর করে নির্বাচনে এ্যালায়েন্সের সমীকরণ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা জানি জনগণ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নৌকায় ভোট দেবে, শেখ হাসিনাকে ভোট দেবে। সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার গঠনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মামাবাড়ির আবদার। আবারও ১/১১ এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, আমাদের কোন আশঙ্কা নেই, দুশ্চিন্তা নেই। এ কারণে যে, এটা ২০১৪ সাল নয়। ২০০১ সালও নয়। বিএনপি যদি মনে করে ২০০১ সালের মতো পরিস্থিতি তারা সৃষ্টি করবে আগামী ১৫-২০ দিনে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। সেটা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় আত্মবিশ্বাস, বাংলাদেশে জনগণ এবার দৃঢ়ভাবে আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণ শেখ হাসিনার সৎ, পরিশ্রমী উন্নয়নের নেতৃত্বে আস্থাশীল। এর আগে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের পক্ষ থেকে ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দোয়া-মাহফিল্ওে অংশ নেন নেতাকর্মীরা। ১৯৬৪ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ধানম-ির বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ রাসেল জš§গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে নিহত হয় শিশু রাসেল। নির্বাচনে ভারত নাক গলাতে চায় না পরে রাজধানীর বনানী সেতু ভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোন কথা হয়নি। ভারত একটি বড় গণতান্ত্রিক দেশ। স্বাভাবিকভাবেই তারা চাইবে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক। শুরু থেকেই তারা বলে আসছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন তারা প্রত্যাশা করে। আমাদের নির্বাচনে ভারত পক্ষপাতমূলক নাক গলানোর মতো কোন ভূমিকা পালন করতে চায় না। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে, এটাই গণতন্ত্রিক একটি দেশ হিসেবে তারা প্রত্যাশা করে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নির্বাচনে নাক গলানোর মতো কোন ভূমিকা পালন করতে চায় না। তিনি বলেন, শ্রিংলার সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোন কথা হয়নি। তারা আগে থেকেই বাংলাদেশে সুষ্ঠ,ু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন তারা প্রত্যাশা করে। বাংলাদেশের নির্বাচনে জনগণের মত প্রতিফলিত হবে, এটাই গণতন্ত্রিক একটি দেশ হিসেবে ভারত প্রত্যাশা করে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্য আওয়ামী লীগের দলীয় বক্তব্য নয় মন্তব্য করে দলটির সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, মাহবুব তালুকদারের বিষয়টি নিয়ে কেন এত হৈ চৈ? আমি এটা জানি না। একজন একটি বিষয় ভিন্নমত পোষণ করতেই পারেন। এতে কি নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে? আমি তো মনে করি ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার যে কোন নির্বাচন কমিশনারের রয়েছে। তিনি বলেন, তার (মাহবুব) সঙ্গে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের ভিন্নমত হয়েছে। তাতে করে নির্বাচন কমিশনে কোন সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমরা কেন নির্বাচন কমিশনে কারও (মাহবুব তালুকদার) পদত্যাগ দাবি করব! আমি এবং আমাদের দল এ ধরনের কোন চিন্তাভাবনাও করিনি। এটা সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের বিষয়। আমরা যখন দলীয় সভায় অংশশ্রহণ করি তখন কি সবাই এক ইস্যুতে একমতে মিলিত হতে পারি? এখানে তো নির্বাচন কমিশন সেখানে ভিন্নমত হতেই পারে। ওবায়দুল কাদের বলেন, একজন ভিন্নমত পোষণ করলেই তার পদত্যাগ দাবি করতে হবে, এর কোন যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। এটা তার ব্যক্তিগত মতামত হতে পারে। আমাদের দলীয় এমন কোন সিদ্ধান্ত নেই। এটা তার পার্সোনাল ওপিনিয়ন কিংবা ১৪ দল, তারা কি চিন্তা করেছে আমি তা জানি না। তবে মাহবুব তালুকদার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে সেটা তার (মাহবুব) নিজের ব্যাপার। আমরা আওয়ামী লীগ থেকে কোন পদত্যাগ দাবি করছি না। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেক কথাই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকাকে বলেছেন-একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে এবং বাংলাদেশে ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন হবে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এমনও বলেছেন, জনগণ যদি আমাদের ভোট নাও দেয় তাহলে আমরা কুইট করব (সরে যাব)। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে, এ রকম একটি কনডিউসিভ এ্যাটমোসফেয়ার (সহায়ক পরিবেশ) আমরা গড়ে তুলছি ইলেকশনের জন্য। আমি সে কথারই পুনর্ব্যক্ত করেছি, ভাল একটি ইলেকশন হবে, ইনশাল্লাহ! আশা করি, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য পরিবেশও কনডিউসিভ (সহায়ক) থাকবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত (বার্নিকাট) বারবার বাংলাদেশে একটি কনডিউসিভ এ্যাটমোসফেয়ার ইলেকশনের কথা বলেছেন। এ পরিবেশ নষ্ট হয় কেন? এটার জন্য কি শেখ হাসিনা দায়ী? ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির মতো ওয়ার্কিং ও স্ট্যান্ডিং একটি বড় দল থাকলে ভাল। এটি গণতন্ত্রের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ও জরুরী। খালেদা জিয়ার কারাগারে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে বিশ্বের মতামতের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্ব কি সাজাপ্রাপ্ত কাউকে (নির্বাচনের) ভেতরে আনতে বলেছে, এটা আমারও প্রশ্ন? এর আগে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট সাংবাদিকদের বলেন, আমি নবেম্বরে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিচ্ছি। যাওয়ার আগে এটা আমার বিদায়ী সাক্ষাত। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই।
×