ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পার্লামেন্ট নির্বাচনে কাল ভোট

পরীক্ষার সম্মুখীন আফগান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

পরীক্ষার সম্মুখীন আফগান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা

আফগান পদ্ধতির গণতন্ত্র শনিবার আইন পরিষদ নির্বাচনে পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছে। দেশটিতে শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে পার্লামেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধন করা হয়েছে প্রায় ৯০ লাখ আফগানের নাম। নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে বিলম্ব হলো তিন বছরের বেশি এবং ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর এটি হচ্ছে তৃতীয় নির্বাচন। কিন্তু বিশৃঙ্খল প্রস্তুতি, ব্যাপক পর্যায়ের কারচুপির সম্ভাবনা ও ভোট সম্পৃক্ত সহিংসতার সমূহ সম্ভাবনায় নির্বাচন ব্যাহত হওয়ার হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে এবং বেশিরভাগ অর্থায়ন করছে। খবর এএফপির। এক পাশ্চাত্য কূটনীতিক এএফপিকে বলেছেন, আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতি কিছুটা কম মন্দ করার চেষ্টা করছি। তার এ মন্তব্যে একটি বিশ্বাসযোগ্য ফল প্রত্যাশায় এমনকি আফগান মানেও এক নৈরাশ্যের চিত্র ফুটে উঠছে। সমালোচিত ও দুর্ভোগপূর্ণ ইনডিপেনডেন্ট ইলেকশন কমিশন (আইইসি) ক্রমবর্ধমানভাবে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইইসিয়ের প্রস্তুতি প্রক্রিয়ায় দুর্বল। শনিবার ভোর ৭টার আগে পাঁচ হাজারের বেশি ভোট কেন্দ্রে ভোট সংক্রান্ত উপাদান পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কমিশন। কমিশন নির্বাচনে ভোটার ভেরিফিকেশনে বায়োমেট্রিক ডিভাইস ব্যবহার করবে দৃশ্যত বলে মনে হচ্ছে। আফগান রাজনীতিক নেতা ও কর্মকর্তারা মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে এই যন্ত্র ব্যবহারে সম্মত হয়েছেন এবং বিষয়টি বাধ্যতামূলক করেছেন যদিও তদের কাছে এটি পরীক্ষিত নয় এবং আইনের দিক থেকেও প্রয়োজনীয় নয়। আইইসির মুখপাত্র সৈয়দ হাফিজউল্লাহ হাশিমী এএফপিকে বলেন, এ বিতর্কিত যন্ত্রটি ছাড়া ভোট গণনা হবে না যদিও ভোট কেন্দ্রগুলোতে কর্মীদের যন্ত্রটি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ খুব কম বা কোন প্রশিক্ষণই নেই। পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, যন্ত্রগুলো ভেঙ্গে গেলে বা ধ্বংস হয়ে গেলে ফলপ্রকাশ বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়বে। ১০ নবেম্বর প্রাথমিক ফল প্রকাশের আগে উপাত্তে প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে। ট্রান্সপারেন্ট ইলেকশন ফাউন্ডেশন অব আফগানিস্তানের পরিচালক নাঈম আইউবজাদা বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বচ্ছ নির্বাচনে ভূমিকা রাখে। কিন্তু তা যথাযথভাবে ব্যবহৃত না হলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। নিম্ন কক্ষে ২শ’ ৪৯ আসনে প্রতিযোগিতা করছেন ২ হাজার ৫শ’র বেশি প্রার্থী। এদের মধ্যে ডাক্তার, মোল্লাহ, সাবেক সমর নেতাদের পুত্রগণ ও অন্তত একজন কারাবন্দী রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচার অভিযানে রক্তক্ষয়ী সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত অন্তত ১০ জন প্রার্থী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আবদুল জবর কাহরামান নামে একজন রয়েছেন যাকে বোমা পেতে বুধবার হত্যা করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলী প্রদেশ হেলমান্দে তার বাড়িতে সোফার নিচে পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরিত হলে তিনি নিহত হন। তালেবান ভোট থেকে বিরত থাকার জন্য প্রার্থীদের সতর্ক করে দিয়েছে। এ জঙ্গী সংগঠন হামলা চালানোর অঙ্গীকার করেছে এবং স্কুলগুলো যাতে ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার না করা যায় সেজন্য শিক্ষা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে। নির্বাচনটিকে দেখা হচ্ছে এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের মহড়া হিসেবে এবং নবেম্বরে জেনেভায় জাতিসংঘ বৈঠককে সামনে রেখে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে। ওই বৈঠকে আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি দেখানোর জন্য চাপের মুখে রয়েছে দেশটি। ভোট আবারও স্থগিত করা হতে পারে বলে গুঞ্জন থাকলেও হাশিমী বলেছেন, নির্বাচন যথাসময়ে হবে। এর মধ্যে কিছু কিছু প্রদেশে শুরু হয়েছে তুষারপাত এবং আবহাওয়া ক্রমেই আরও শীতল হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, নির্বাচন এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে তা আর অনুষ্ঠিত করা যাবে না। এর মধ্যে ২ হাজারের বেশি ভোট কেন্দ্র নিরাপত্তার প্রশ্নে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জঙ্গীদের আরও হামলার হুমকির কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে না। আফগানিস্তান এনালিস্টস নেটওয়ার্কের (এএএন)সহ পরিচালক টমাস রাটিং এএফপিকে বলেছেন, আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, বেশিরভাগই বলেছে তারা ভোট দিতে যাবে না এমনকি কেউ কেউ নাম নিবন্ধন করতে বিড়ম্বনাবোধ করেছে। অনেকে বলেছে, আমরা ভোট দিতে পছন্দ করি যদি আমরা বুঝতে পারি যে এ ব্যবস্থা ফলপ্রসূ হবে। বিষয়টা এ জন্য নয় যে আফগানরা গণতন্ত্রে শ্রান্ত হয়ে পড়েছে। তারা শ্রান্ত হয়ে পড়েছে এ ধরনের ছদ্মগণতন্ত্রে থেকে।
×