ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী উত্থান

প্রকাশিত: ০৩:২২, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

জঙ্গী উত্থান

অজ্ঞানতা ও কূপমণ্ডুকতায় আবিষ্টজনদের মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করে নাশকতার পথে নামানোর কাজটি থেমে নেই। এদের আত্মঘাতী হয়ে ওঠার নেপথ্যে অন্ধতাজাত বিশ্বাসের ভিত যারা তৈরি করে, তারা মূলত অধর্মকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছে। তাই মানুষ হত্যার মধ্যে স্বর্গীয় সুষমা খুঁজে পাওয়ার পথে ধাবিত করার কাজে অবলীলায় প্ররোচিত করা সম্ভব হচ্ছে। জঙ্গীবাদে দীক্ষিত যারা তাদের কাছে জঙ্গীপনাই হচ্ছে আদর্শ এবং ধর্ম। ধর্মীয় উগ্রবাদের আড়ালে এরা দেশজুড়ে নাশকতা চালাতেই উদগ্র। বিশ্বজুড়ে যখন জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটে, তখন বাংলাদেশও এর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না। শিক্ষিত তরুণরাও জঙ্গীবাদের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে আত্মঘাতী হতে কসুর করেনি। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের পর জঙ্গী কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে এসেছিল। কিন্তু জঙ্গীবাদ পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। আইএস, আল কায়েদা, তালেবানদের উগ্র ও হিংস্র কার্যক্রম মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমশ হ্রাস পেলেও একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আইএস হটে গেলেও এরা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আত্মগোপনে থেকেও জঙ্গীবাদী কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও বিস্তারে এরা নানা রকম তৎপরতা চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশেও এরা হত্যাকা- ও হামলার কার্যক্রম চালিয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াটসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত নজরদারির পরও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, গোপনে গোপনে জঙ্গীরা আবার সংগঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন উপলক্ষে বা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র হামলা পরিচালনার জন্য এরা আবার সংগঠিত হচ্ছে। বিশেষ করে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে অরাজকতা ও নাশকতা চালানোর জন্য নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তরুণ-যুবা ও মহিলাদের দীক্ষিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বোমা, অস্ত্রশস্ত্রের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণদাতারা আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে দেশে জঙ্গী তৈরিতে সচেষ্ট। বাংলাদেশে উগ্র ধর্মীয় মতবাদের কোন স্থান না থাকলেও এবং জনমত বিরূপ হলেও জঙ্গীরা গোপন আস্তানা গড়ে তুলেছে গ্রামগঞ্জে, শহরে, নগরে-শিল্পাঞ্চলে। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের হাত ধরে এবং বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় এ দেশে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এদের ‘দুঃসাহসী’ করে তুলেছিল। এদের কাছে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি। অস্ত্র এরা জোগাড় করে আর বিস্ফোরক ও বোমা নিজেরাই তৈরি করতে সক্ষম। এ কাজেও রয়েছে প্রশিক্ষকও। এরা বিভিন্নভাবে পরিচয় গোপন করে বাসা ভাড়া বা অস্ত্র ভাড়া নিয়ে থাকত অতীতে। কিন্তু বর্তমানে ধরন পাল্টিয়ে তাদের আস্তানায় জঙ্গী আদর্শে উদ্বুদ্ধ নারীদেরও রাখা হয়। কখনও আত্মীয়, কখনও ভাইবোন বা কখনও স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এরা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ সহজে উপলব্ধি করতে পারে না যে, এরা জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত। কিন্তু এরা এতই ধুরন্ধর যে, বেশি দিন কোন নির্দিষ্ট স্থানে থাকে না। অর্থাৎ অবস্থান পাল্টে ফেলে। শুধু অবস্থান নয়, এরা তাদের যোগাযোগের মাধ্যম মোবাইল ফোনের সিমও ঘন ঘন পরিবর্তন করে থাকে। ফলে মোবাইল ট্র্যাকিংয়েও অবস্থান নিশ্চিত করা বড় কঠিন। সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, এরা ততই নানা কৌশল নিচ্ছে। টার্গেট কিলিংসহ রাসায়নিক বোমার ব্যবহারের সম্ভাবনার কথা গোয়েন্দারা জেনেছে ইতোমধ্যে। তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারও জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলছে। এ রকম আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়ার কাজও চলছে। সর্বশেষ নরসিংদীর ভগিরতপুরে জঙ্গীদের আস্তানায় ‘অপারেশন গার্ডিয়ান নট’ নামক অভিযান চালিয়ে নারীসহ দুই জঙ্গীর লাশ উদ্ধার করেছে। নব্য জেএমবির সদস্যদের ঘর থেকে আগ্নেয়াস্ত্রও পাওয়া গেছে। একই জেলায় মাধবদীর গদাইচরের আরেকটি বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে দুই নারী জঙ্গীকে। এর আগে গত ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে এক বাড়িতে র‌্যাবের অভিযানে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের পর দু’জনের ছিন্নভিন্ন লাশ পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় জঙ্গীদের চিহ্নিত করা ও নির্মূলে জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও তৎপর হতে হবে। জঙ্গীবাদকে ‘না’ বলুন বাণীকে মানুষের অন্তরে গেঁথে দিতে হবে।
×