ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দু’দলের ছন্দহীন নৈপুণ্যে হতাশ ভক্ত-সমর্থকরা, ব্রাজিল ১-০ আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সুপার ক্লাসিকো ট্রফি ব্রাজিলের

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সুপার ক্লাসিকো ট্রফি ব্রাজিলের

জাহিদুল আলম জয় ॥ আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের ফুটবল মহারণ হলে দুনিয়া স্তব্ধ হয়ে যায়। সবাই বুঁদ হয়ে যান দুনিয়াসেরা খেলাটি দেখতে। সৌদি আরবের জেদ্দায় মঙ্গলবার রাতে মুখোমুখি হয়েছিল বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশ দু’টি। কিন্তু এবার হতাশ হতে হয়েছে সারাবিশ্বের কোটি কোটি দর্শকদের। এমনিতেই লিওনেল মেসি না থাকায় আকর্ষণ কিছুটা কমেছিল। কিন্তু ছিলেন আরেক সুপারস্টার নেইমার। তাতে অবশ্য কোন কাজ হয়নি। পুরো ম্যাচে দু’দলই খেলেছে এলেমেলো ফুটবল। পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত ফাউল সব সৌন্দর্যকে ম্লান করেছে। এমন ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে সুপার ক্লাসিকো ট্রফি জিতে নিয়েছে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। নির্ধারিত ৯০ মিনিট গোলশূন্য থাকার পর খেলা চলছিল যোগ হওয়া অর্থাৎ অতিরিক্ত সময়ে। সেই সময়ের তৃতীয় মিনিটে (৯৩ মিনিট) নেইমারের কর্নার থেকে ইন্টার মিলানের সেন্টার ব্যাক জোয়াও মিরান্ডা চোখ ধাঁধানো হেডে আর্জেন্টিনার জাল কাঁপান। মন ভরানো খেলা উপহার দিতে ব্যর্থ হলেও শিষ্যদের প্রশংসা করেছেন ব্রাজিল কোচ টিটে। তেমনি হতাশ নন আর্জেন্টিনার ভারপ্রাপ্ত কোচ লিওনেল স্কালোনি। তরুণদের নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। ম্যাচের পরিসংখ্যানে সবদিক দিয়ে ব্রাজিল এগিয়ে থাকলেও তাদের খেলায় খুঁজে পাওয়া যায়নি চিরায়ত সেই সাম্বা ছন্দ। ব্রাজিলের ১২টি শটের বিপরীতে ১১টি শট নিয়েছে আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার গোলমুখে শট ছিল মাত্র একটি, আর ব্রাজিলের তিনটি। বল পজিশন ব্রাজিলের একতরফা রাজত্ব ছিল। তাদের ৬৩ শতাংশের বিপরীতে আর্জেন্টিনার পায়ে বল ছিল মাত্র ৩৭ শতাংশ। তবে আর্জেন্টিনা সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে তাদের গোছানো রক্ষণ। এই রক্ষণ আর্জেন্টিনার চিরাচরিত দুর্বলতার এক জায়গা। ফাউলের ছড়াছড়ি ম্যাচে দু’দল মিলে ফাউল করেছে ৩৫ বার। এর মধ্যে আর্জেন্টিনা ২১ আর ব্রাজিল ১৪ বার। দু’দলের সাতজন দেখেছেন হলুদ কার্ড। এ নিয়ে দু’দল মুখোমুখি হলো ১০৫ বার। তাতে জয়ের পাল্লাটা আরও ভারি করে নিয়েছে ব্রাজিল। পেলের দেশের ৪১ জয়ের বিপরীতে ম্যারাডোনার দেশ জিতেছে ৩৮ ম্যাচ। বাকি ২৬ ম্যাচ ড্র হয়। এই ম্যাচের আগে দুই দল সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুনে অস্ট্রেলিয়ায় সুপার ক্লাসিকোতে মুখোমুখি হয়েছিল। সেখানে আার্জেন্টিনা জিতেছিল ১-০ গোলে। এবার তাই মধুর প্রতিশোধ নিয়ে সুপার ক্লাসিকো পুনরুদ্ধার করেছে সাম্বা ছন্দের দেশ। এছাড়া গত নবেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাই ফুটবলে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ব্রাজিল। ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেননি ম্যানচেস্টার সিটির ইনফর্ম ফরোয়ার্ড সার্জিও এ্যাগুয়েরো, পিএসজি উইঙ্গার এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া ও এসি মিলান স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুয়াইন। আর গত চারটি প্রীতি ম্যাচেই দলের বাইরে আছেন নিয়মিত অধিনায়ক মেসি। রাশিয়া বিশ্বকাপে শেষ ষোলো থেকে বিদায়ের পরপরই মেসি নিজেই কিছুদিন জাতীয় দল থেকে বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী বছরের কোপা আমেরিকার আগে দলের বাইরে থেকে নিজেকে আবারও গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন পাঁচবারের ফিফাসেরা তারকা। তারকা অনুপস্থিতির কারণে অপেক্ষাকৃত তরুণ দল নিয়ে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। তাইতো পুরো ম্যাচে তাদের রক্ষণাত্মক কৌশলে দেখা যায়। এ কারণে বলের দখলে এগিয়ে থাকলেও আর্জেন্টিনার রক্ষণে এসে বারবার খেই হারিয়ে ফেলেন নেইমার, জেসুস, ফিরমিনো, কুটিনহোরা। ম্যাচ শেষে জয়সূচক গোলদাতা ৩৪ বছর বয়সী মিরান্ডা বলেন, এই বয়সেও প্রমাণ করেছি শারীরিকভাবে এখনও আমি অনেক ফিট আছি। অবশ্যই আমি জাতীয় দলের হয়ে আরও কিছুদিন খেলা চালিয়ে যেতে চাই। কারণ এই জার্সি গায়ে আরও কিছু প্রমাণের বাকি আছে। ব্রাজিলের ফুলব্যাক ফিলিপে লুইস বলেন, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলা সবসময়ই কঠিন। কিন্তু এ ম্যাচে আমাদের ভাল খেলা উচিত ছিল। ওদের চেয়ে আমরা অনেক ভাল দল। কারণ আমরা প্রায় একই দল নিয়ে অনেকদিন ধরে খেলছি। অন্যদিকে ওরা একেবারে নতুন করে সবকিছু শুরু করছে। প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজেদের ভাল দল দাবি করে ব্রাজিল কোচ টিটে বলেন, আর্জেন্টিনা গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। জেতারও চেষ্টা করেছিল কিন্তু ব্রাজিল তুলনামূলকভাবে ভাল দল। দলীয় পারফর্মেন্সের পুরস্কার এই গোল। গোলটা অন্য সময়ে হতে পারত কিন্তু এটা হয়েছে শেষ মুহূর্তে। দল খেলায় মনোযোগ রেখেছিল। ম্যাচে আমরা যে গুরুত্ব দিয়েছিলাম তার ফল ছিল ওই কর্নার। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে হারলেও হতাশ নন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। দলের ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী এই কোচ বলেন, এই ম্যাচে আমরা যেটা করেছি সেটা দিয়ে সারা পৃথিবী জয় করতে সক্ষম। এখানে ম্যাচের ফল মুখ্য নয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এ ধরনের হার কষ্ট দেয় না।
×