ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অন্নপূর্ণা দেবীর জীবনাবসান

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

অন্নপূর্ণা দেবীর জীবনাবসান

১৯২৭ সালের ২৩ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের মাইহারে জন্ম নেওয়া অন্নপূর্ণার আসল নাম রওশন আরা বেগম। ‘বাবা’ নামে খ্যাত ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দিকপাল ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ তার বাবা, মা মদিনা বেগম। চার ভাইবোনের মধ্যে অন্নপূর্ণা ছিলেন সবার ছোট। সরোদশিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ তাঁর ভাই। সেনিয়া-মাইহার ঘরানায় তাঁর বাবার অবদান অনেক। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবার কাছে শুরু হয় তাঁর সঙ্গীতশিক্ষা। রবিশঙ্কর ও অন্নপূর্ণা দেবী সুরবাহারে যন্ত্রসঙ্গীত বাজাতেন। বিয়ে করেছিলেন কিংবদন্তি সেতারশিল্পী পণ্ডিত রবিশঙ্করকে। বিয়ের সময় অন্নপূর্ণার বয়স ছিল ১৪ এবং রবিশঙ্করের বয়স ছিল ২১। বিয়ের পর অন্নপূর্ণা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁদের সন্তানের নাম শুভেন্দ্র শঙ্কর। একসময় তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ১৯৯২ সালে মারা যায় শুভেন্দ্র। পরে ব্যবস্থাপনা পরামর্শক রুশিকুমার পাণ্ডেকে বিয়ে করেন অন্নপূর্ণা দেবী। তিনিও মারা যান ২০১৩ সালে। বাবা আলাউদ্দীন খাঁর কাছে সঙ্গীতের হাতেখড়ি পাওয়া অন্নপূর্ণা কৈশোরেই তারযন্ত্র সুরবাহার বাদনে অসামান্য পারদর্শিতা অর্জন করেন। তবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে তিনি কখনো পেশা হিসেবে নেননি। মেয়ের বাদনের প্রশংসায় ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ বলেছিলেন, ‘আমার বাজনা যদি সত্যিকার কেউ বাজিয়ে থাকে, তো সে আমার মেয়ে।’ অন্নপূর্ণা নিজেও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দীক্ষা দিয়েছেন বহু শিল্পীকে। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, পণ্ডিত অমিত ভট্টাচার্য, নিত্যানন্দ হলদিপুর, সেতারবাদক রুশিকুমার পাণ্ডে, পণ্ডিত প্রদীপ বরাটের মতো সুর সাধকরা রয়েছেন তার শিষ্য তালিকায়। গুণী এই শিল্পী গত শনিবার ভোরে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে পরলোক গমন করেন। পদ্মভূষণে সম্মানিত এই শিল্পী বার্ধক্যজনিত বেশ কিছু রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তার মৃত্যুতে ভারতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। টানাপড়েনের মধ্যে তার বিচ্ছেদ হয় রবি শঙ্করের সঙ্গে। এরপর নিজেকে অনেকটাই আড়ালে নিয়ে যান অন্নপূর্ণা। নিভৃতেই চলতে থাকে তার সঙ্গীত সাধনা আর শিক্ষাদান। কোন বাণিজ্যিক রেকর্ড কখনও প্রকাশিত না হলেও ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে অন্নপূর্ণার অবস্থান ছিল অত্যন্ত উঁচুতে। ভারত সরকারের পদ্মভূষণ, সঙ্গীত নাটক আকাদেমি এ্যাওয়ার্ড, দেশিকোত্তমসহ নানা সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন।
×