ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া এতিমখানা মামলার রায় আগেই লেখা হয়েছে ॥ নজরুল

দু’একজন চলে গেলেও জোটে কোন প্রভাব পড়বে না ॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

দু’একজন চলে গেলেও জোটে কোন প্রভাব পড়বে না ॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লাভবান হতে কেউ কেউ বেইমানি করছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ব্যক্তিস্বার্থে ২০ দলীয় জোট থেকে দু’একজন চলে গেলে তার কোনো প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, জোট ভাঙ্গছে না, ২০ দলীয় জোট অটুট আছে। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় আগেই লেখা হয়ে গেছে। বর্তমান সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও দুঃশাসন ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এ কারণে তারা সবসময় আতঙ্কে ভোগে। কোন গণমাধ্যমে যেন তাদের দুর্নীতির মহাকেলেঙ্কারির খবর ফাঁস হয়ে না পড়ে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও গণমাধ্যমের সামনে বলেছেন, ‘কিছু মিডিয়া ডকুমেন্টস তৈরি করে বসে আছে আমাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার জন্য।’ সরকার যদি এতই স্বচ্ছ হয়ে থাকে, তাহলে সেই সব ডকুমেন্টের জন্য এত শঙ্কিত কেন? তিনি বলেন, দুর্নীতির খবর চেপে রেখে নিজেদের নিরাপদ করার জন্যই কি মিডিয়ার মুখ বন্ধ করতে একের পর এক ভয়ঙ্কর কালো আইন করে যাচ্ছে সরকার? তিনি আরও বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের সম্প্রচার নীতিমালার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, সরকারের হুকুমে আরেকটি ফরমায়েসি রায়ের দিন ধার্য করেছে নি¤œ আদালত। কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা সাজানো মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না করেই রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। রিজভী বলেন, অসুস্থ ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ চলার বিধান পৃথিবীর কোন দেশে নেই। এছাড়া দেশের প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছাড়তে ও পদত্যাগ করতে বাধ্য করা এবং বিচারক মোতাহার হোসেনকে হুমকি দেয়ার মতো ঘটনার নজিরও সারা দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। রিজভী বলেন, গণমাধ্যমকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে এবং মানুষকে বোবা বানিয়ে দিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের পর এবার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা নামে আরেকটি ভয়ঙ্কর আইন করতে যাচ্ছে সরকার। মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রিজভী বলেন, খসড়া আইনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপ্রধানের ব্যাপারে বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রকাশ করলে তিন বছরের জেল ও পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা। টকশোতে মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রচার করলেও একই সাজা। নীতিমালায় আরও বলা আছে, কমিশন গঠন করে রেডিও টেলিভিশন অনলাইনসহ সব মিডিয়ার লাইসেন্স দেয়া হবে এবং যে কোন কারণে তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে সরকার। রিজভী বলেন, পুলিশের ভয়, আওয়ামী লীগের মাস্তানদের ভয়, মৃত্যুভয় মুছে আজ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ আজ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। বুকের পাটা শক্ত করে দেশ ও গণতন্ত্রের শত্রুদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। শিগগিরই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় আগেই লেখা হয়ে গেছে- নজরুল ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় আগেই লেখা হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ২৯ তারিখ কেন, সরকার চাইলে কালও রায় দিতে পারেন। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে অধ্যাপক ডাঃ এম এ হাদীর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নজরুল ইসলাম বলেন, আরেকবার জোর করে ক্ষমতায় আসতেই সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না সরকার। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর একটাই দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। কারণ, এই সরকারের অধীনে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন পর্যন্ত সুষ্ঠু হয় না। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নজরুল খান বলেন, আমাদের অধিকার এমনি কেউ দিয়ে দেবে না। জোর করে আমাদের অধিকার আদায় করতে। নির্বাচনের বাইরে রাখতেই বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করতে হবে। তবে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণ রায়। আর সে জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। দেশে বিনিয়োগ না হলেও হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে অভিযোগ করে নজরুল বলেন, দেশে আজকাল রাস্তাঘাট নির্মাণে যে ব্যয় তা ইউরোপীয় দেশগুলো থেকেও বেশি। তিনি বলেন, এক গবেষণায় দেখা যায় ২০১৭ সালে ৬ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে, এ বিষয়ে তদন্ত করা হলেও তা প্রকাশ করা হয় না।
×