ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন ঘিরে জঙ্গীদের নাশকতার ছক হিটলিস্ট

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

নির্বাচন ঘিরে জঙ্গীদের নাশকতার ছক হিটলিস্ট

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ও অনিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনগুলোর নাশকতা সৃষ্টি ও হিটলিস্ট নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার আগাম বার্তায় প্রশাসনের পক্ষে দেশজুড়ে সতর্ক বার্তা প্রদান করা হয়েছে। ১১ দফা সুপারিশ সম্বলিত এই সতর্ক বার্তা প্রদান করা হয়েছে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। এমন বার্তার প্রেক্ষাপটে প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতো বড় ধরনের অভিযান পরিচালনার চিন্তা ভাবনা চলছে বলে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্রে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের জারিকৃত পত্রে হিটলিস্টে রয়েছেন বিশিষ্ট রাজনীতিক, বিদেশী নাগরিক, সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায় এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বিশেষ ব্যক্তিবর্গ। এ জাতীয় ব্যক্তিত্বদের চলাফেরায় সতর্কতা অবলম্বন এবং তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সার্বক্ষণিক নজরদারি করার নির্দেশনাও প্রদান করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পক্ষে প্রদত্ত ওই পত্রে জেএমবি, নব্য জেএমবি, হরকত-উল-জিহাদ (হুজি), হিযবুত তাহ্রির, আনসার আল ইসলাম এক হয়ে নির্বাচনের পূর্বে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার নক্সা করেছে। জঙ্গীবিরোধী অভিযান চলমান থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনও বহু আস্তানা যে রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ইতোপূর্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলেছে। অভিযানও হয়েছে। হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে এরা আন্ডারগ্রাউন্ডে অবস্থান নেয়। কিন্তু আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে এরা সক্রিয় হচ্ছে এমন বার্তা মিলেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। গত বছর এবং চলতি বছর মীরসরাই, সীতাকু- এবং সর্বশেষ নরসিংদীতে জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের ঘটনা প্রমাণ করছে এসব সংগঠনে নেতাকর্মী যেমন রয়েছে, তেমনি এদের কাছে রয়েছে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের জারি করা ওই পত্রে আরও বলা হয়েছে, জঙ্গীদের পুরনো আস্তানাগুলো যেন নজরদারিতে রাখা হয়। এছাড়া যেসব জঙ্গী নেতাকর্মী ইতোপূর্বে গ্রেফতার হয়েছে এবং যারা জামিনে গিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে এদের যাবতীয় খোঁজখবর নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি তুলে আনা। পাশাপাশি যেসব জঙ্গী নেতাকর্মী বর্তমানে জেলবন্দী হয়ে আছে এদের জেলে বসে বাইরে তথ্য আদান প্রদান প্রক্রিয়ায় নজরদারি সার্বক্ষণিক করা। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে জঙ্গী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হঠাৎ করে প্রকাশ্যে আসতে চাইছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। এরফলে যেখানে খোঁজ মিলছে, সেখানেই র‌্যাব, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, পুলিশ এবং প্রয়োজনে সেনা ও বিজিবির সহযোগিতা নিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব অভিযানে বেশকিছু জঙ্গী প্রাণ হারিয়েছে। এদের কেউ এনকাউন্টারে অথবা আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছে। কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছে। আবার কেউ কেউ পালিয়ে যেতেও সক্ষম হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জারিকৃত ওই পত্রে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাসমূহেও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বন্দরনগরী ও জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পাহাড়ী। মূলত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে জঙ্গীদের উত্থান ঘটে। প্রথমে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলে হাটহাজারীর মীরের খিলে। এ আস্তানায় জঙ্গীদের সঙ্গে এক বিএনপি নেতার ভাইয়ের সক্রিয় যোগাযোগের তথ্য প্রমাণিত হয়। এরপরে রাঙ্গুনীয়া, আরও পরে বাঁশখালীতে শহীদ হামজা ব্রিগেডের উত্থান ঘটে, যা আইনশৃখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। গেল ও চলতি বছর মীরসরাইতে দুটি এবং সীতাকু-ে আরও দুটি আস্তানায় অভিযান পরিচালিত হয়। এ দুটি স্থানেও জঙ্গী নেতাদের প্রাণহানি এবং পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা রয়েছে। পালিয়ে যাওয়া এসব জঙ্গী নেতাকর্মীরা পুনরায় অন্যস্থানে আস্তানা গেড়েছে বলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ধারণা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গল ও বুধবার নরসিংদীর দুটি স্থানে পুলিশের সোয়াত টিমের সফল অভিযানে জঙ্গীদের দুটি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সূত্রে ধারণা দেয়া হয়েছে, জঙ্গীসংগঠনগুলোর আন্ডারগ্রাউন্ড তৎপরতা রয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। এখন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই এদের নাশকতা সৃষ্টির তৎপরতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সঙ্গত কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল সংস্থাকে সতর্ক বার্তা প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষ কোন অভিযান চালানো হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। অনুমতি পাওয়া গেলে এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ করা যেতে জঙ্গী তৎপরতার উত্থান ও বিস্তার মূলত চট্টগ্রাম থেকেই দেশের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়েছে। এ তৎপরতায় উত্তরবঙ্গের জঙ্গী উন্মাদনার অনেককে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদের নেপথ্যে সহযোগিতায় রয়েছে মৌলবাদী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো। যার সর্বাগ্রে রয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত শিবির চক্র। এদের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে বিএনপির সঙ্গে জড়িত একশ্রেণীর নেতাকর্মী। ইতোমধ্যে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপি যে জড়িত তা আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। এ ধরনের আরও বহু নেতা রয়েছে যারা জঙ্গী তৎপরতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে রাখতে চায়। এদের মূল টার্গেট বর্তমান সরকারী দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো। ফলে সরকারও এদের সন্ত্রাসী তৎপরদার মূলে আঘাত হানতে তৎপর। জেএমবি, নব্য জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহ্রির এবং আনসারুল ইসলাম নামের জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে ছোট ছোট আরও বেশকিছু সংগঠনের নাম রয়েছে। যারা বহুল আলোচিত জঙ্গী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিত যোগাযোগ রেখে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎপর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রদত্ত এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে দেশব্যাপী সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে প্রেরিত পত্রে এমন বার্তাই মিলছে।
×