ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেনামে সিএনজি স্টেশন করে গ্যাস চুরি ॥ তিতাসের ৫ কর্মকর্তা সাসপেন্ড

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

বেনামে সিএনজি স্টেশন করে গ্যাস চুরি ॥ তিতাসের ৫ কর্মকর্তা সাসপেন্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং বেনামে সিএসজি স্টেশন স্থাপন করে মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস চুরির অভিযোগের সত্যতা মেলায় তিতাসের পাঁচ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর বাইরে আরও দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পেট্রোবাংলার কাছে সুপারিশ করেছে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পাঁচ কর্মকর্তা হচ্ছেন উপমহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মোঃ আব্দুর রশিদ, ব্যবস্থাপক (হিসাব) মোঃ হুমায়ুন কবির খান, উপব্যবস্থাপক (বেতন ও তহবিল বিভাগ) নাজমুল হক, মিটারিং ও ভিজিল্যান্স টিমের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ মহিদুর রহমান এবং পাইপলাইন নির্মাণ বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ গোলাম মোস্তফা খান। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোস্তফা কামাল সাময়িকভাবে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা সরাসরি যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পেট্রোবাংলার অনুমোদন প্রয়োজন তাদের বিষয়টি পেট্রোবাংলাকে অবহিত করা হয়েছে। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি সূত্র জানায়, প্রতিমাসে গ্রাহক যে বিল প্রদান করে তার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস উন্নয়ন তহবিল এবং জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলে জমা রাখতে হয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এবং জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে সরকারী কোন ব্যাংকে এই অর্থ রাখতে হবে। কিন্তু তিতাসের হিসাব বিভাগের পাঁচ কর্মকর্তা সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা একটি বেসরকারী ব্যাংকের কাওরানবাজার শাখায় রেখেছিল। পেট্রোবাংলার অনুসন্ধান বলছে বিপুল পরিমাণ টাকা রেখে বেসরকারী ব্যাংক থেকে কমিশন নিয়েছে এই ৫ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে তিন জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিতাসের একজন কর্মকর্তা জানান, এর বাইরেও দুজন কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পেট্রোবাংলায় নথি প্রেরণ করা হয়েছে। এই দুজনের একজন বাপেক্সের মহাব্যবস্থাপক এবং তিতাসের মিরপুর অঞ্চলে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এদের একজন এই আর্থিক অনিয়মের সময় তিতাসের হিসাব বিভাগের পরিচালক ছিলেন অন্যজন তিতাসের ব্যবস্থাপকের (ব্যাংকিং) দায়িত্বে ছিলেন। পেট্রোবাংলার মতামত জানতে বুধবার সন্ধ্যায় ফোন করে চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফয়জুল্লাহ এনডিসির কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অন্য একটি সূত্র জানায় পেট্রোবাংলার বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। বার্ডের অনুমোদন পেলে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। অন্যদিকে তিতাসের দুজন প্রকৌশলী বেনামে সিএনজি স্টেশন নির্মাণ করে সেখানে মিটার টেম্পারিং করে গ্যাস বিক্রি করত এরা হলেন মিটারিং ও ভিজিল্যান্স টিমের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ মহিদুর রহমান এবং পাইপলাইন নির্মাণ বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ গোলাম মোস্তফা খান। গাজীপুরের কুনিয়া এলাকার যমুনা সিএনজি স্টেশনটি এই দুই প্রকৌশলী বেনামে প্রতিষ্ঠা করে। তারা শুধু সিএনজি স্টেশন প্রতিষ্ঠা করেই থেমে থাকেনি এখানে মিটার টেম্পারিং করে গ্যাসও চুরির প্রমাণ মিলেছে তাদের বিরুদ্ধে। বিদ্যুত এবং জ্বালানি বিভাগে চাকরি বিধি অনুযায়ী যে কোম্পানি যে পণ্য বা সেবা বিতরণ করে সেই কোম্পানির কর্মী সেই পণ্য বা সেবা সংক্রান্ত ব্যবসা করতে পারবে না। সরকারী চাকরিবিধিতে কোন ব্যবসা করার বিধান না থাকলেও সরকারী বিভিন্ন কোম্পানির ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। তবে একই ধরনের ব্যবসা না করার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তিতাসের নানা অনিয়মের তদন্ত হলেও বরাবরই ব্যবস্থা গ্রহণের বাইরে থেকে যায় কর্মকর্তা কর্মচারিরা। বরাবরই তিতাসের একটি সিন্ডিকেট এসব বিষয় ধামা চাপা দেয়। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মশিউর রহমান অবসরে যাওয়ার পর সম্প্রতি পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মোস্তফা কামালকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নিয়েই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) মোঃ আয়ুব খান চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত এক তদন্ত কমিটি এসব অনিয়মের তথ্য পায়।
×