ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসছে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

শীঘ্রই শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসছে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ শীঘ্রই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে। এ লক্ষ্যে নির্ধারিত কোন দিন তারিখ ঠিক না হলেও চলতি বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা প্রথম তালিকার সব রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করবে দেশটির সরকার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম তালিকায় ১৬৭৩টি পরিবারের ৮ হাজার ২ জন রোহিঙ্গার নাম পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। জানুয়ারিতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় গত ৮ মাস ধরে যাচাই বাছাই শেষে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো তালিকার ওই ৮ হাজার রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের মধ্যে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্টিতব্য বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো তালিকায় ৮ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিয়ে যাবার চূড়ান্ত আলোচনা হতে পারে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম তরান্বিত করতে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে এর নেতৃত্বে তিনদিনের সফরে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছেন। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের ওই সভায় এ নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে। বৈঠকের পর শীঘ্রই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে অনুষ্টিতব্য সভায় মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের কাছে প্রত্যাবাসনের জন্য আরও একটি রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করবে ঢাকা। সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের (ওয়ার্কিং গ্রুপের) নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হক। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল বৈঠক শেষে রোহিঙ্গা শিবিরে সরেজমিনে পরিদর্শনে যাবেন। প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে সূত্রে জানা গেছে। এদিকে প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের সেখানে নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্র (ট্রানজিট ক্যাম্প) থেকে তাদের নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এজন্য ভারত সরকার রাখাইনে ২৫০টি বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে। চীনও প্রায় ৪ হাজার বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার জন্য মিয়ানমারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে ওপারের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দু’টি আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নিয়ে জোরে শোরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে সীমান্তের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। সূত্রে প্রকাশ, বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে ঘর নির্মাণ করতে সাহায্য করছে ভারত। ইতোপূর্বে মংডুতে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মাণ করা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ছাড়াও আরও ২টি আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসের শুরুতে (৪ অক্টোবর) ভারত থেকে সাজাভোগ শেষে যে ৭ রোহিঙ্গাকে প্রদেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল, মিয়ানমার সরকারের নির্দেশে তাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে ওপারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তারা নিজ গ্রামে অন্তত ছয় মাস বসবাসের পর নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবে। আবেদন গ্রহণের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনায় আনবে মর্মে ওই ৭ রোহিঙ্গাকে জানানো হয়েছে বলে সূত্র আবাস দিয়েছে। উল্লেখ্য সম্প্রতি মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির সরেজমিনে পরিদর্শনে যান। সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছিলেন, তারা (রোহিঙ্গা) রাখাইনে প্রত্যাবাসনের ছয়মাস পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে। সরকার তা বিবেচনা করে দেখবে। সূত্র আরও জানায়, ভারত থেকে হস্তান্তর করা ৭ রোহিঙ্গাকে এনভিসি কার্ড দিয়ে রাখাইনের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা নিজেদের গাড়িতে করেই তাদের স্ব স্ব গ্রামে পৌঁছে দিয়েছে। কিয়ক্ত শহরের বাজার পাড়ায় নিজ গ্রামে পৌঁছে তারা স্বজনদের দেখা পেয়েছে। কিয়ক্তের বাসিন্দা ভারত থেকে নিজ দেশে ফেরা রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইউনুছ মঙ্গলবার সেখানকার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন, তারা (ইমিগ্রেশন) আমাদের খুব সুন্দরভাবে নিজ গ্রামে নিয়ে এসেছে। তবে গাড়িতে করে নিজ গ্রামে নিয়ে আসার সময় হাতকড়া পরানো ছিল। এখানে এসে হাতকড়া খুলে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে আমাদের ছেড়ে দিয়েছে। আমরা বর্তমানে আমাদের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছি। গতবছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে চলতি সনের জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে অনুপ্রবেশকৃত চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা উখিয়া টেকনাফ ও জেলার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে অবৈধভাবে বাস করছিল। বর্তমানে ৩০টি আশ্রয় শিবিরে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এদের মধ্যে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৬৭৫ জন নিবন্ধন করেছে। আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের ক্যাডার, ডাকু প্রকৃতির অপর রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে ফাঁকি দিয়ে কৌশলে এ দেশ থেকে যেতে নিবন্ধনের আওতায় আসেনি বলে জানা গেছে।
×