ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাব ছিল অযৌক্তিক ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

‘মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাব ছিল অযৌক্তিক ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিজের প্রস্তাব আলোচনার জন্য গৃহীত না হওয়ায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বৈঠক বর্জন করলেও অন্য কমিশনাররা তার এই প্রস্তাবগুলোকে অযৌক্তিক এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেছেন। বুধবার নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন, তার প্রস্তাবগুলো ছিল অযৌক্তিক ও একটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসি অধীনে নিয়ে আসার প্রস্তাব সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। এছাড়া তার প্রস্তাবিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার বিষয়টি ইসির এজেন্ডায় আসার মতো প্রস্তাব নয় বিধায় তা অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন তিনি। গত সোমবার নির্র্বাচন কমিশনের ৩৬তম সভায় নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বর্জন করেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। পরে সাংবাদিকদের বলেন, কমিশনের সভায় তাকে কথা বলতে না দেয়ায় তিনি অপমানিত বোধ করছেন। এছাড়া ইসি তার বাক স্বাধীনতা হরণ করছে বলেও তিনি এ সময় অভিযোগ করেন। পরের দিন অবশ্য কমিশনারদের বিরোধের বিষয় নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কথা বললেও মাহবুব তালুকদারের বৈঠক বর্জন নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি। তবে তিনি উল্লেখ করেন কমিশনারদের মতবিরোধ নির্বাচন পরিচালনার কাজে কোন প্রভাব ফেলবে না। মাহবুব তালুকদারের অভিযোগ অস্বীকার করে আরেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, কমিশনার মাহবুব তালুকদার বৈঠকের শুরুতেই তার ব্যক্তিগত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে চান। তাকে নির্ধারিত বিষয়ে আলোচনা করতে বলা হলে তিনি তা না মেনে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। তিনি বলেন তার সহকর্মী মাহবুব তালুকদার রাজনৈতিক বিষয় নিয়েই ব্যক্তিগত মত তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। সেই প্রক্রিয়া নিয়ম অনুযায়ী হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ছিল ভোটার তালিকা এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণসহ সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে। সেগুলোতে দলগুলোর বক্তব্য পর্যালোচনা করে কমিশন ইতোমধ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করেন। এদিকে কমিশনার মাহবুব তালুকদারের এই ধরনের আচরণে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বুধবার দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সাংবিধানিক পদ ছেড়ে দেয়া উচিত। তিনি সাংবিধানিক পদে রয়েছেন। এই পদে থেকে কেউ এই ধরনের কথা বলতে পারেন না। শপথ নিয়ে সাংবিধানকি পদে থেকে প্রকাশ্যে তিনি এই ধরনের কথা বলতে পারেন না। এদিকে আগারগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে বুধবার কমিশনার কবিতা খানম মাহবুব তালুকদারের অভিযোগ সম্পর্কে সাংবাদিকদের কাছে ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তিনি নোট অব ডিসেন্ট সম্পর্কে বলেন, নোট অব ডিসেন্ট হয় কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেদিন সভায় কোন সিদ্ধান্ত ছিল না। সুতরাং মাহবুব তালুকদার যা দিয়েছেন সেটিকে নোট অব ডিসেন্ট বলা যাবে না। কমিশনে পাঁচজন কমিশনার আছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে। কারও ভিন্ন মত থাকতে পারে। সেটাকে কমিশনারদের বিরোধ বলা যাবে না। তিনি বলেন, মাহবুব তালুকদার কমিশনের সভা ত্যাগ ও তার নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেছেন। বাইরে প্রচার হয়েছে, কমিশনে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমরা তা মনে করি না। নির্বাচনে আচরণবিধি সংশোধন সম্পর্কে তিনি বলেন, আচরণবিধিতে তেমন বড় কোন ধরনের সংশোধন নেই। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেমন সাংসদ, মন্ত্রী, স্পীকার এর নির্বাচনের সময় কোন ধরনের সরকারী সুবিধা নিতে পারবেন না। আচরণবিধি সংশোধন নাও হয় তবুও নির্বাচনে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ দেয়ার জন্য আচরণবিধি সুনিশ্চিতভাবে প্রতিপালন করব। আচরণবিধি কেউ না মানলে অবশ্যই জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হবে। যদি আচরণবিধি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় তাহলে সমস্যা হবে না। আর কেউ যদি তা ভঙ্গ করে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থার সুযোগ থাকবে কমিশনের। যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন মাহবুব তালুকদার ॥ কমিশনের বৈঠক বর্জন করে সমালোচনার মধ্যেই এবার ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাচ্ছেন ইসি মাহবুব তালুকদার। আগামী ২০ অক্টোবর তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। সেখানে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হবেন বলে তিনি বুধবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তবে তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি কমিশনে ফিরবেন বলে উল্লেখ করেন। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশনের চলছে চূড়ান্ত প্রস্তুতির কাজ। এ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বৈঠক চলছে। গত সোমবার নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে আলোচনা করতে কমিশনের ৩৬ তম সভার আহ্বান করা হয়। সেখানে নিজের প্রস্তাবিত সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করতে না দেয়ায় তিনি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে কমিশনের সভা ত্যাগ করেন। পরের দিন অবশ্য আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩০ অক্টোবরের আগেই কমিশনের বৈঠকে তফসিলের বিষয়ে চূড়ান্ত হবে। এরপর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতে যাবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা। মাহবুব তালুকদার জানিয়েছেন, তফসিল চূড়ান্তকরণ বৈঠকে এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত অনুষ্ঠানে তিনি থাকতে পারবেন না। তবে তফসিলের আগেই তিনি দেশে ফিরবেন। এদিকে বুধবার ১৪ দলের এক বৈঠক শেষে মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সাংবিধানিক পদ ছেড়ে দেয়া উচিত। তিনি সাংবিধানিক পদে রয়েছেন। এই পদে থেকে কেউ এই ধরনের কথা বলতে পারেন না। শপথ নিয়ে সাংবিধানিক পদে থেকে প্রকাশ্যে তিনি এই ধরনের কথা বলতে পারেন না। কমিশনের বৈঠকে কথা বলতে না দেয়ার অভিযোগ মাহবুব তালুকদার করলেও তার সহকর্মী আরেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কমিশনার মাহবুব তালুকদার বৈঠকের শুরুতেই তার ব্যক্তিগত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে চান। তাকে নির্ধারিত বিষয়ে আলোচনা করতে বলা হলে তিনি তা না মেনে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। এদিকে কমিশনার মাহবুব তালুকদার বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তার যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে বলেন, তফসিলের আগেই চলে আসব। সে জন্যই এই সময়ে যাচ্ছি। ছেলে কানাডা থেকে আমেরিকায় আসবে। আমি ঢাকা থেকে মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি, ভাইও সেখানে আসবে। পরিবারের সবাই সেখানে একত্রিত হব। একমাস আগেই আমি টিকেট কেটে রেখেছি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে বলেন, আমি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতটা মিস করব। তবে দেশে এসে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করব। এদিকে আগামী সপ্তাহে তফসিলের বিষয়টি চূড়ান্তকরণে কমিশনের বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন এটা কোন বিষয় নয়। আমি তফসিলের আগেই চলে আসব। ইসির কর্মকর্তারা জানান, ব্যক্তিগত সফরের বিষয়ে ইতোমধ্যে নিয়ম অনুযায়ী যথাযথ দফতরকে চিঠি দিয়ে তার পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সফর শেষে আগামী ৩১ অক্টোবর তিনি দেশে ফিরবেন।
×