ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা দাবি

নির্বাচন ভণ্ডুলের চক্রান্ত জনগণ প্রতিহত করবে ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

নির্বাচন ভণ্ডুলের চক্রান্ত জনগণ প্রতিহত করবে ॥ নাসিম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, কথিত মুখচেনা কিছু ব্যক্তি আছেন যারা অতীতে গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন, তাদের ওপর ভর করে বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচন ভ-ুলের নতুন চক্রান্তে মাঠে নেমেছে। তবে তাদের চক্রান্ত সফল হবে না। দেশবাসী তাদের প্রতিহত করবে। বুধবার দুপুরে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক শেষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সমালোচনা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, তিনি একজন নামধারী বুদ্ধিজীবী! আমরা শুনেছি, যার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের একজনের সঙ্গে তার আত্মীয়তা আছে। তিনি কয়েকদিন আগে সেনাপ্রধান সম্পর্কে অসত্য জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন। এ বিষয়ে ১৪ দলের পক্ষে নিন্দা জানিয়ে জোটের মুখপাত্র বলেন, এই ব্যক্তিটি সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। এখন যে চক্রান্তগুলো হচ্ছে, এর মধ্যে একটি নতুন উপসর্গ তৈরি করেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তাই ১৪ দল অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায়। কামাল হোসেন ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সরকার যতদিন ইচ্ছা চালিয়ে যেতে পারবে বলেছিলেন ॥ নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, যারা দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে বারবার চক্রান্ত করেছে, সেই মুখচেনা মহল ও ব্যক্তিত্বকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট একটি অভিলাষ নিয়ে নতুন করে মাঠে নেমেছে। নতুন কিছু সঙ্গী-সাথী জোগাড় করে কথিত ঐক্যের নামে সেই পুরনো নিয়মে নির্বাচনের বিরুদ্ধে অশুভ চক্রান্ত শুরু করেছে। তাদের দাবি অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক। তিনি বলেন, ১/১১ এর সময় দেশবাসী ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা দেখেছে। তিনি তখনকার অনির্বাচিত সরকার সম্পর্কে বলেছিলেন, এই সরকার যতদিন ইচ্ছা চালিয়ে যেতে পারবে। আর ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনী মোশতাককে নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি করেছিলেন। এই মইনুল হোসেন ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি অসাংবিধানিক সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে ওই সময় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধ গ্যাটকো এবং নাইকো মামলা দিয়েছিলেন। এই এক ব্যক্তির পরামর্শেই সব মামলা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক! বিচিত্র সেলুকাস! এই ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এখন বিএনপি-জামায়াতের বিশ্বস্ত বন্ধু হয়েছেন। আজ তারা মাঠে নেমেছে গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য! মূলত এরা পরীক্ষিত গণতন্ত্র বিরোধী শক্তি।’ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার দলছুট আদর্শবিহীন কিছু ব্যক্তির সমাবেশ ঘটেছে দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন যদি কেউ করতে চায়, নির্বাচনের মাঠে আসতে চায়, জোট করে আসুক, মহাজোট করে আসুক, কোন সমস্যা নাই। আমরা তাকে স্বাগত জানাই। কারণ আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। কিন্তু নির্বাচনের নামে অসাংবিধানিক দাবি উত্থাপন করে পানি ঘোলা করতে চাইলে দেশের জনগণ তাদের প্রতিহত করবে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের পদত্যাগ করা উচিত ॥ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের পদত্যাগ দাবি করেছে ১৪ দল। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মাহবুব তালুকদার নির্বাচন গোপনীয়তা রক্ষার শপথ ভঙ্গ করেছেন। সাংবিধানিক পদে থেকে নির্বাচন কমিশনের গোপনীয় বিষয় নিয়ে প্রকাশ্য কথা বলা সংবিধান পরিপন্থী। তিনি বলেন, মাহবুব তালুকদারসহ যারা সাংবিধানিক পদে রয়েছেন, তাদের যে কোন বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। অথচ এক্ষেত্রে তিনি এটা খুবই অন্যায় করছেন। এই ধরনের পদ থেকে এই ধরনের আচরণ তার করা উচিত নয়। অন্যথায় তার পদটি ছেড়ে দেয়া উচিত।’ নির্বাচন সামনে রেখে মহাজোট ছোট বা আরও বড় করা হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি যদি হয়, সেটি তিনি দেখবেন জোটের পরিসর বাড়ানো যায় কিনা।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দাবি নিয়ে ভাবার কোন সুযোগ নেই। কারণ এ দাবিগুলো অসাংবিধানিক ও অযৌক্তিক। নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়টি মীমাংসিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন ঠেকানোর ক্ষমতা কারও নেই। এদিকে ১৪ দলের বৈঠকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশেরও সিদ্ধান্ত হয়। ২৬ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গায় এবং ২৯ অক্টোবর ঢাকার মতিঝিলে সমাবেশ হবে বলে জানান নাসিম। আর মতিঝিলের সমাবেশ থেকেই পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা দেয়া হবে। আর ২৫ অক্টোবর যশোরে ১৪ দলের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীর একই দিনে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচী থাকার কারণে বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে যশোরের জনসমাবেশ কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, জাসদের একাংশের সভাপতি শরিফ নূরুল আম্বিয়া, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির ডাঃ শহিদুল্লাহ শিকদার, গণআজাদী লীগের এস কে শিকদার, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম সালাহউদ্দিন আহমেদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক এনামুল ইসলাম রুবেল, ওয়ার্কার্স পার্টি পলিটব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান, আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
×