ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একাত্তরে চার বছর বয়সী মজনু এখন মুক্তিযোদ্ধা!

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

একাত্তরে চার বছর বয়সী মজনু এখন মুক্তিযোদ্ধা!

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ একাত্তরে মাত্র ৪ বছর বয়স হলেও এখন মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম তুলেছেন বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা ইউনিয়নের শ্রীপতি গ্রামের মজনু প্রামানিক। তার নিকটাত্মীয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল করিমের সহায়তায় ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ মজনু প্রামানিক এখন সরকারী সুযোগ-সুবিধাও গ্রহণ করছেন। নিজেকে বড় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জাহির করে অন্যের জমি দখল করে রাস্তা তৈরির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীর পক্ষে আবদুর রাজ্জাক প্রামানিক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পাননি। এ বিষয়ে তদন্ত করে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি স্থানীয় প্রশাসন। তবে ইউএনও জানান, বিষয়টি তদন্তাধীন। ভুক্তভোগী একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, তার বাড়ির পাশে নিজস্ব সাড়ে ৫ শতক জমি রয়েছে। সেটি দখল করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মজনু প্রামানিক তার বাড়ি যাওয়ার রাস্তা তৈরি করেছেন। এসময় তিনি সরকারী খাস জমিও ভরাট করে দখলে নিয়েছেন। বাধা দিতে গিয়ে হামলার শিকারও হয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক। অভিযোগ করায় তার জমির গাছপালাও কেটে নষ্ট করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত হুমকিধমকি দিচ্ছে বাদী ও তার পরিবারকে। এ অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বাদী আব্দুর রাজ্জাক প্রামানিক। জানা যায়, উপজেলার শ্রীপতি গ্রামের মৃত ঝরু প্রামানিকের ছেলে মজনু প্রামানিক। জাতীয় পরিচয়পত্রে (৮১১৫৫৯১৯৬৪৪০) তার জন্ম তারিখ ১৯৬৭ সালের ২৩ এপ্রিল। একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স মাত্র ৪ বছর হলেও এখন তিনি মুক্তিযোদ্ধা। অভিযোগে জানা যায়, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা একই গ্রামের আব্দুল করিম প্রামানিক অর্থের বিনিময়ে মজনুকে মুক্তিযোদ্ধার কার্ড তৈরি করে দিয়েছেন। মুুক্তিবার্তায় (লালবার্তা) তার নামও রয়েছে। এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, মাত্র চার বছর বয়সে মজনু প্রামানিক একাত্তর সালে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলেও মজনু প্রামানিক ও আবদুল করিমকে পাওয়া যায়নি। তবে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকিউল ইসলাম বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শামিম হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। তিনি বলেন, অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। ওই মুক্তিযোদ্ধার বয়স বিভ্রান্তিও প্রমাণিত হয়েছে। তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু রাখার সুযোগ নেই। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এ বিষয়টি জেলা মিটিংয়ে উপস্থাপন করার পর তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
×