ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পতনের অপেক্ষায় সিরিয়ার ইদলিব

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

পতনের অপেক্ষায় সিরিয়ার ইদলিব

২০১৬ সালে সিরীয় সেনাবাহিনীর হাতে পূর্ব আলেপ্লোয় বিদ্র্ােহী ঘাঁটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে সেখান থেকে হাজার হাজার সিভিলিয়ান ও যোদ্ধাকে ইদলিব প্রদেশে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। সিরীয় বাহিনী ঘোটার পূর্বাঞ্চলে বোমাবর্ষ করলে সেখান থেকে আরও হাজার হাজার লোককে বাসে করে ইদলিবে নেয়া হয়। এখন সিরীয় বাহিনী খোদ ইদলিবকে দখল করার জন্য সৈন্য সমাবেশ করছে। কিন্তু এবার সিভিলিয়ানদের পালিয়ে আশ্রয় নেয়ার মতো জায়গা সিরিয়ার কোথাও হয়ত নেই। সিরিয়া যুদ্ধে বিভীষিকার কাহিনীর শেষ নেই। বাশার সরকারের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করার কথা না হয় নাই বলা হলো। তবে ইদলিবে যে হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে সেটি হবে ৭ বছর স্থায়ী সিরীয় যুদ্ধের ভয়াবহতম লড়াই। বিদ্রোহীদের সর্বশেষ এই বড় ঘাঁটি ইদলিবে প্রায় ৩০ লাখ লোকের বাস। এদের মোটামুটি অর্ধেকই সিরিয়ার অন্যান্য স্থান থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে আসা। তাছাড়া আছে সরকারবিরোধী নানান মত ও পথের বিদ্রোহী যাদের মধ্যে সমঝোতা ও আপোস রক্ষার কোন সম্ভাবনাই নেই। এদের মধ্যে আছে এমন জিহাদীরা যারা আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত এবং আমৃত্যু লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। কাজেই এমন আশঙ্কা করার সবরকম সঙ্গ যুক্তি আছে যে সিরীয় বাহিনী অন্যত্র যা করেছে তার চেয়ে ইদলিবে আরও বেশি বর্বরতার পরিচয় দেবে। এদিকে গত ৭-৯ সেপ্টেম্বর তেহরানে অনুষ্ঠিত এক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরান সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে সংঘর্ষে জড়িত সকল পক্ষকে সমঝোতার লক্ষ্যে অস্ত্রত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে। তিনদিনের শীর্ষ বৈঠক শেষে এক যুক্ত বিবৃতিতে এই তিন দেশের শীর্ষ নেতারা বলেন, সিরিয়া সংঘাতের কোন সামরিক সমাধান হতে পারে না। যুক্ত বিবৃতিতে যাই বলা হোক না লক্ষনগুলো ভাল নয়। সিরিয়া বলেছে যে কূটনৈতিক সমাধানের চাইতে সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনাই বেশি। আর তা থেকেই পরিষ্কার হয়ে পড়ছে যে সিরিয়ার ব্যাপারে বিশ্ব সমাজ সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সম্ভবত সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো এই যে বাইরের কোন শক্তি সিরিয়ার এই হানাহানি, রক্তপাত বন্ধ করতে হয় ইচ্ছুক নয়ত সক্ষম নয়। ২০১১ সাল থেকে শুরু হরে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ লোক প্রাণ হারিয়েছে। প্রায় সোয়া কোটি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। এই ট্র্যাজেডির অনেক কারণ আছে তার মধ্যে একটা হলো প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নিষ্ঠুরতা। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বর্বরতার সঙ্গে দমন করাকে কেন্দ্র করে সেদেশে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। এতে রাশিয়া ও ইরান বাশারকে সামরিক সাহায্য দেয়। পাশ্চাত্য মুখে বিদ্রোহীদের পক্ষ নিলেও বাশারের পতন ঘটাতে কার্যত কিছুই করেনি। বরং বলা যায় সে ব্যাপারে অনিচ্ছুক থেকেছে। বাশারের বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহারের জবাবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্তত সীমিত সামরিক ব্যববস্থা নিয়েছেন। শোনা যায় গত বছর তিনি বাশারকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে সরিয়ে দেয়ার কথা ভাবলিছেন তবে তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মাতিন পরিকল্পনাটি পাশে সরিয়ে রাখেন। কারণ ততদিনে পাশ্চাত্যের বড় ধরনের হস্তক্ষেপ বড়ই দেরি হয়ে যেত এবং সেটা যথেষ্ট ঝুঁটিপূর্ণও হতো। এখন ট্রাম্প সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই করার বাইরে সিরিয়ায় জড়িত হওয়ার যুক্তি ওবামার চেয়েও কম দেখেন। তবে সিরিয়ায় পাশ্চাত্যের নিরাপত্তা স্বার্থ এখনও রয়েছে। ইদলিব থকে উদ্বাস্তুরা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে। সেই উদ্বাস্তুরা যদি ২০১৫ সালের মতো ইউরোপের দিকে ধাবিত হয় তাহলে সুইডেন থেকে ইতালি পর্যন্ত অভিবাসী বিরোধী শক্তিগুলো জোরদার হবে। উদ্বাস্তুদের ঢলে কট্টোর জিহাদীরাও যোগ দিতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে তাছাড়া তুরস্কের এই লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও আছে। ইদলিবে যুদ্ধবিস্তার রোধ অঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে তুরস্ক সিরিয়া সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে বেশ কয়েকডজন সামরিক চৌকি বসিয়েছে। তবে রাশিয়া ও সিরিয়া বলেছে যে তুরস্ক উগ্রপন্থীদের হামলা ঠৈকাতে ব্যর্থ হয়েছে। চলমান ডেস্ক
×