ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

আমেরিকাকে নিয়ে জাপান উদ্বিগ্ন

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

আমেরিকাকে নিয়ে জাপান উদ্বিগ্ন

হিরোশিমার কাছে ইওয়াকুনি বিমান ঘাঁটিটি আমেরিকা ও জাপানের যৌথ ঘাঁটি। গত এক দশকে এই ঘাঁটিটির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এটি এখন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকার বৃহত্তম বিমান ঘাঁটিগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৫ হাজার মার্কিন ও দেড় হাজার জাপানী সৈন্য নিয়োজিত। জাপানে এই দুটি দেশের যৌথভাবে ব্যবহৃত কোন ঘাঁটির এ হলো এক বিরল দৃষ্টান্ত। ইওয়াকুনি ঘাঁটির অগ্রগতি ও সেখানকার পরিস্থিতি দেখে বুঝা যায় যে জাপানী ও আমেরিকার মধ্যে নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। কয়েক বছর আগের তুলনায় এখন আমেরিকান মেরিনরা ইওয়াকুনিতে জাপানী সৈন্যদের সঙ্গে অধিকতর মাত্রায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। জাপানের অন্যান্য সামরিক স্থাপনায়ও ঘনিষ্ঠতর সহযোগিতার বিষয়টি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে তা সেটা জঙ্গী বিমানের ঘন ঘন মহড়ায় হোক কিংবা সাইবার যুদ্ধের জন্য ডেস্ক কর্মীদের প্রশিক্ষণের আকারে হোক। প্যাসিফিক অঞ্চলের মার্কিন বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান ডেনিস ব্লেয়ার বলেছেন, দুদেশের সামরিক সহযোগিতা আগের চেয়ে অনেক ঘনিষ্ঠ। জাপানের জন্য বিষয়টি নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। কারণ আমেরিকার সুরক্ষা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা জাপানের আগে আর কখনও এত বেশি অনুভব করেনি। ১৯৩০ ও ১৯৪০ এর দশকে জাপানী আগ্রাসনের দুঃসহ স্মৃতি চীনের মন থেকে এখনও মুছে যায়নি। এবং এ নিয়ে জাপানের ওপর চীনাদের রাগ ও বিদ্বেষ এখনও জমে আছে। তাছাড়া পূর্ব চীন সাগরের দ্বীপগুলো নিয়ে জাপানের সঙ্গে চীনের দ্রুত বিরোধ এখনও বর্তমান। চীনের সামরিক শক্তি দ্রুত বেড়ে চলেছে এবং এ অঞ্চলে আধিপত্যের ক্ষেত্রে দেশটি আমেরিকাকে হটিয়ে সেই স্থানটি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হয়। ওদিকে উত্তর কোরিয়াও এমন পরমাণু শক্তি করায়ত্ত ও মোতায়েন করেছে যা দিয়ে দেশটি জাপানের যে কোন জায়গায় আঘাত হানতে সক্ষম। ওদিকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষদিকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জাপানের যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল তা এখনও পর্যন্ত হয়নি। তাই সম্প্রতি সাইরেরিয়ায় চীন ও রাশিয়ার সেনাবাহিনীর যে বিশাল সামরিক মহড়া হয়ে গেল তা নিয়ে জাপানী কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন রোধ করারই কথা। আবার একই সঙ্গে জাপান-মার্কিন জোট নজিরবিহীন চাপের মধ্যেও রয়েছে এবং সেটা ট্রাম্পের কারণে। টোকিও এই ভেবে উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের সঙ্গে এমন একটা চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেন যার অধীনে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষিত হবে তবে জাপান কোরীয় হামলার হুমকির মুখে থাকবে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক তৎপরতা চলার সময় জাপানের এমন মনে হবার কারণ ঘটেছে যে দেশটিকে পাশে ঠেলে দেয়া হয়েছে। জাপানী প্রধানমন্ত্রী এ্যাবের এক উপদেষ্টা গত জুন মাসে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠককে জাপানের জেগে ওঠার সংকেত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বলাবাহুল্য ঐ বৈঠকের পর ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে তার সামরিক মহড়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন এবং কোরিয়া উপদ্বীপ থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ধারণাটিও ব্যক্ত করেন। সেই উপদেষ্টার ভাষায় ‘জাপান চূড়ান্তভাবে এক নতুন নিরাপত্তা পরিবেশে প্রবেশ করেছে।’ বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক অবশ্য ঐ বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন না। তবে ট্রাম্প মাঝে মধ্যে মিত্রদের প্রতি তার অঙ্গীকার সম্পর্কে সংশয় এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তার বিশ্বাস যেভাবে ব্যক্ত করেন তাতে জাপান ও মার্কিন কর্মকর্তারা অস্বস্তিবোধ না করে পারেন না। কিন্তু তার পরও তারা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ্যে ব্যক্ত না করাই শ্রেয় বলে মনে করেন। ট্রাম্প ও এ্যাবের মধ্যে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা যতই থাক না কেন যখনই ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায় যে মিত্ররাসহ অন্যান্য দেশ আমেরিকার কাছ থেকে ফায়দা লুটছে, যখনই তাকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শোনা যায় বিদেশে মার্কিন সৈন্য মোতায়েনের পিছনে এত বিপুল অর্থব্যয় হচ্ছে তখনই জাপানী কর্মকর্তারা সংকুচিত ও উদ্বিগ্ন রোধ না করে পারেন না। উল্লেখ করা যেতে পারে যে শুধু জাপানকে রক্ষা করার জন্যই নয়, এ অঞ্চলের আমেরিকার আধিপত্য বজায় রাখার জন্যও জাপানে ৫৪ হাজার মার্কিন সৈন্য মোতায়েন আছে। আরও আশু শঙ্কার কারণ হলো। বাণিজ্য নিয়ে একটা ঝড়ের কালোমেঘ উঁকি দিচ্ছে। ট্রাম্প আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন। এই ঘাটতি যেসব দেশের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি জাপান তার অন্যতম। গত বছর জাপানের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার কোটি ডলার। ট্রাম্প জাপানের সঙ্গে এমন এক চুক্তি করতে চান যাতে জাপান কৃষিপণ্য আমদানির ওপর শুল্ক হ্রাস করতে বাধ্য হয়। জাপান এটা প্রতিহত করে আসছে। দুই দেশের মধ্যে এই টানাপোড়েনের পরিণতি কি দাঁড়ায় তা দেখার জন্য আমাদের এখন অপেক্ষায় থাকতে হবে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×