ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার বাংলাদেশের সামনে জিম্বাবুইয়ে

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

এবার বাংলাদেশের সামনে জিম্বাবুইয়ে

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রায় আট মাস পর আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হতে চলেছে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোন ম্যাচ হয়েছিল। ২১ অক্টোবর আবার ম্যাচ দিয়ে মিরপুর স্টেডিয়ামে দর্শকের ভিড় দেখা যাবে। ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা ছিল প্রতিপক্ষ। এবার বাংলাদেশের সামনে থাকছে জিম্বাবুইয়ে। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ আবার খেলবে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। দুই দলের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলা হবে। প্রায় নয় মাস পর আবার দুই দল মুখোমুখি হবে। জানুয়ারিতে তিন জাতি সিরিজে দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে খেলেছিল। আসছে ২১ অক্টোবর থেকে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে দুই দলের সিরিজ শুরু হবে। সিরিজ শুরুর আগে ১৯ অক্টোবর বিকেএসপিতে একদিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচে অংশ নেবে সফরকারীরা। এরপর ২১ অক্টোবর মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে স্বাগতিক ও সফরকারীরা। সিরিজের শেষ দুটি ওয়ানডে গড়াবে ২৪ ও ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চেšধুরী স্টেডিয়ামে। ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যে ম্যাচটি হবে, সেটিও প্রায় নয় মাস পর এই ভেন্যুতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোন ম্যাচ হবে। প্রতিটি ওয়ানডে ম্যাচই দিবা-রাত্রিতে অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ানডে সিরিজ শেষ হলে ৩ নবেম্বর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট শুরু হবে। আর এই ম্যাচ দিয়েই নয়নাভিরাম স্টেডিয়ামটির টেস্ট অভিষেক হবে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম, খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও টেস্ট খেলা হবে। দেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যুটি হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ১১-১৫ নবেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ফেব্রুয়ারির পর থেকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল দেশের মাটিতে কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি। আর তাই দেশের কোন স্টেডিয়ামেই খেলা হয়নি। ফেব্রুয়ারির পর মার্চে নিদাহাস ট্রফিতে খেলে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফি হয়। ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। এরপর ভারতের দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। আফগানদের কাছে ধরাশায়ী হওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের গিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হারলেও তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ। জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে হয় এশিয়া কাপ। গত মাসে হওয়া এশিয়া কাপের ফাইনালেও খেলে বাংলাদেশ। মাঝখানে ২২ দিন বিরতি পড়ল। ২১ অক্টোবর থেকে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। এবার দেশের মাটিতে খেলা হবে। প্রতিপক্ষ দলটি জিম্বাবুইয়ে। যে দলটি ২০০৫ সালের আগে বাংলাদেশকে পাত্তা না দিলেও, এরপর আর পাত্তা পাচ্ছেনা। ২০০৫ সালের পর থেকে দুই দলই সমান তালে চলতে থাকে যেন। কিন্তু ২০১৩ সালের পর থেকে তো একেবারেই পাত্তা পায়নি জিম্বাবুইয়ে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২০০৫ সালের আগে জেতাই হতো না। ভাল খেলাই যেন প্রাপ্তির খাতায় যুক্ত হতো। এরপর চিত্র এমনই পাল্টে যেতে থাকে, এখন জিম্বাবুইয়ের জয় পাওয়া মানে বিশাল কিছু! বাংলাদেশ যেন বলে কয়েই হারায় জিম্বাবুইয়েকে। এবার শুরুতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। যে ফরমেটের খেলাটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পছন্দের ফরমেট। যে ফরমেটে বাংলাদেশ যে কতটা শক্তিশালী দল, তা প্রতিপক্ষ ভালই টের পাচ্ছে। সর্বশেষ এশিয়া কাপেও সিনিয়র দুই ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানকে ছাড়াও ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। স্কোর বোর্ডে চাহিদামতো রান জমা না করেও ভারতকে হারের মুখে ফেলে দিয়েছিল। সেই দলটি এবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খেলবে। এ সিরিজেও তামিম ও সাকিব ইনজুরির জন্য খেলতে পারবেন না। এর পরও দলের বিশ্বাস আছে জিম্বাবুইয়েকে সিরিজে হারানোর। টেস্ট সিরিজ ঘোষণা করা হয়নি। স্বাগতিক দল হিসেবে পরে ঘোষণা করবে। তবে ওয়ানডে দলটি শক্তিশালীই হয়েছে। দলে মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, ইমরুল কায়েস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহীম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, আরিফুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, আবু হায়দার রনি, সাইফউদ্দিন ও ফজলে রাব্বি রয়েছেন। পেসার সাইফউদ্দিন এ বছর জানুয়ারির পর আবার দলে ফিরেছেন। নতুন মুখ হিসেবে দলে জায়গা করে নিয়েছেন ফজলে মাহমুদ রাব্বি। তিনি ওপেনিং, মিডলঅর্ডার এবং নিচের দিকেও ব্যাটিং করতে সক্ষম। আর তার স্পিনটাও কাজে দিতে পারে। জিম্বাবুইয়েও শক্তিশালী দল গড়েছে। ওয়ানডে ও টেস্টে শুরুতে সিকান্দার রাজাকে রাখা হয়নি। পরে দলে এ ক্রিকেটারকে যোগ করা হয়েছে। ওয়ানডে ও টেস্ট দলের নেতৃত্ব দেবেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ওয়ানডে দলে হ্যামিলটন মাসাকাদজা (অধিনায়ক), সলোমন মিরে, ক্রেইগ আরভিন, ব্রেন্ডন টেইলর, শন উইলিয়ামস, পিটার মুর, এলটন চিগুম্বুরা, ডোনাল্ড তিরিপানো, কাইল জারভিস, ব্র্যান্ডন মাভুতা, রিচার্ড এনারাভা, জন নায়ুম্বু, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, তারিসাই মুসাকান্দা, টেন্ডাই সাতারা, কেফাস ঝুওয়াও ও সিকান্দার রাজা রয়েছেন। আর টেস্ট দলে হ্যামিলটন মাসাকাদজা (অধিনায়ক), ব্রায়ান চারি, ক্রেইগ আরভিন, ব্রেন্ডন টেইলর, শন উইলিয়ামস, পিটার মুর, রেজিস চাকাভা, ডোনাল্ড তিরিপানো, কাইল জারভিস, ব্রান্ডন মাভুতা, রিচার্ড এনগারাভা, জন নায়ুম্বু, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, রায়ান বার্ল, টেন্ডাই সাতারা ও সিকান্দার রাজা আছেন। জিম্বাবুইয়ে শক্তিশালী দলই গড়েছে। সম্ভাব্য সেরা দলই গড়া হয়েছে। বাংলাদেশও চেষ্টা করেছে সেরা দল গড়তে। কিন্তু তামিম ও সাকিব ছাড়া কী আর দল শক্তিশালী হয়। যদিও এশিয়া কাপের ফাইনালে এই দুই সিনিয়র ক্রিকেটারকে ছাড়াই উঠেছে দল। ফাইনালেও দুর্দান্ত খেলেছে। কিন্তু এই দুজন যদি ফাইনালে খেলত, তাহলে দলের শক্তি আরও বাড়ত। বাংলাদেশ জিততেও পারত। তামিম ও সাকিবের অভাব পূরণ করা এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। তা সবারই জানা। তবে ভবিষ্যত পরিকল্পনার হিসেব করলে এ দুজন একটু বাইরে থাকাতে ভালই হয়েছে। কারণ, দলের কী অবস্থা, ভবিষ্যতে কী করলে ভাল হবে; তা বোঝা যাবে। দেখা যাক এখন তামিম ও সাকিবকে ছাড়া সামনে পড়া জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে কেমন করে বাংলাদেশ।
×